1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চা শ্রমিকদের দুর্দশার জীবন

মাসুম বিল্লাহ
১ মে ২০১৯

৭ ফুট বাই ১৪ ফুট ঘরে পুরো পরিবারের বাস, শিক্ষা-স্বাস্থ্য নিয়েতো ভাবার সুযোগই নেই৷ উপরন্তু দ্রব্যমূল্য পাল্লা দিয়ে বাড়লেও তাঁদের বেতন সেভাবে বাড়ে না৷ এভাবে নানা বঞ্চনা নিয়ে দুর্দশার জীবন কাটাচ্ছেন বাংলাদেশের চা শ্রমিকরা৷

https://p.dw.com/p/3HlDq
Teeindustrie Bangladesch
ছবি: Khukon Thaunaujam

একরকম দাসের মতো জীবন কাটালেও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে উৎপাদন ধরে রেখেছেন চা শিল্পীরা৷ তাই জীবন সম্পর্কে শুধু আক্ষেপই ঝরে তাঁদের কণ্ঠে৷

‘‘চা বাগানের মানুষের  জীবন কষ্টে-দুর্দশায় যায়৷ মানুষ মনে করে যে, আমাদের এই রকমই দিন যাবে,'' ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন মৌলভীবাজারের করিমপুর চা বাগানের নারী শ্রমিক কাজল রায়৷ ‘‘সারাজীবন কষ্ট করে করে আমাদের দিন পার করব, যাওয়ার তো আর কোনো জায়গাও নাই৷ আর কোনো কিছু করারও নেই আমাদের৷ ভাবতে ভাবতে এরকমই তাঁরা জীবনযাপন পার করে৷''

বেতন বৈষম্য, বাসস্থান আর শিক্ষা-চিকিৎসার দুরবস্থা নিয়ে বলতে গিয়ে স্বর নেমে আসে কাজল রায়ের

বেতন বৈষম্য, বাসস্থান আর শিক্ষা-চিকিৎসার দুরবস্থা নিয়ে বলতে গিয়ে এভাবে স্বর নেমে আসে কাজল রায়ের৷ করিমপুরের চা বাগানে প্রায় ১৮ বছর ধরে কাজ করছেন তিনি৷

বাংলাদেশে চা বোর্ডের নিবন্ধিত ১৬৬টি চা বাগানে কাজ করেন প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক৷ একটি বড় রপ্তানি খাতের চাকা চালু রাখলেও তাঁদের বেশিরভাগেরই গল্প কাজল রায়ের মতোই৷

১৮ বছর আগে কাজল রায় যখন কাজ শুরু করেছিলেন, তখন শ্রমিকদের বেতন ছিল দৈনিক ২২ টাকা৷ সময়ের ধারাবাহিকতায় তা ১০২ টাকা হলেও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে পেরে উঠছেন না বলে জানান তিনি৷

প্রতি সপ্তাহে চা বাগান থেকে সাড়ে তিন কেজি চাল কিংবা আটা এবং সন্তানের জন্য এক কেজি চাল কিংবা আটা রেশন হিসাবে পান কাজল৷ এর সঙ্গে স্থানীয় রাবার বাগানের শ্রমিক স্বামীর আয় মিলিয়ে কোনোমতে সংসার চলে যাচ্ছে তাঁদের৷ এর মধ্যেও চার মেয়ের তিন মেয়েকে পড়াশোনা করাতে পারায় নিজেকে অন্য অনেক চা শ্রমিকের চেয়ে সৌভাগ্যবানই মানছন তিনি৷

‘‘সপ্তাহে ৭১৪ টাকা পাই৷ কয় টাকায় চাল কিনবে, তারপরে তেল, সাবান, বাচ্চাকাচ্চাদের লেখাপড়া৷ অনেক কষ্টের মধ্যে চা বাগানের মানুষ চলে, তারপরেও লেখাপড়া করাতে হয় বাচ্চাদের,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন কাজল৷

৭ বাই ১৪ ফুটের ঘরে থাকার কষ্টের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কোম্পানির যে ঘর, তাতে দুইজন মানুষের থাকতেই কষ্ট হয়৷ এর মধ্যে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে থাকতে আরো কষ্ট৷ কারো বাচ্চা তিনটা, কারো ৪টা৷''

গত বছর চা শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে মালিকদের চুক্তির ফলে দৈনিক বেতন ১০২ টাকা দাঁড়ায় শ্রমিকদের৷ ওই ১০২ টাকা পেতে প্রতিদিন ২০ কেজি করে চা পাতা তুলে দিতে হয়৷ তবে কোনো কোনো চা বাগান ২০ কেজির চেয়েও বেশি তুলতে বাধ্য করে বলে জানালেন শ্রমিকরা৷

সংগঠনের তরফ থেকে ৩০০ টাকা দাবি করলেও ১০২ টাকায় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে: দীপংকর রায়

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর রায় জানান, ২০১৮ সালের চুক্তি অনুযায়ী ৮ ঘন্টা শ্রম দিলে ১০২ টাকা করে দেয়া হয়৷ কিন্তু কোনো কোনো জায়গায় ওই ১০২ টাকার জন্য ২৪ থেকে ২৬ কেজি পাতা তুলতেও বাধ্য করে৷

‘‘চুক্তিতে কিছু ফাঁক রেখে দিয়েছে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা৷ যেখানে চা বাগানের পঞ্চায়েতরা দুর্বল, সেখানে প্রেসার দিয়ে ২০ কেজি থেকে ২৪ কেজি নিচ্ছে৷ গত বছরের চুক্তিতে ফাঁক রেখে দিয়েছে, মালিকপক্ষ চাইলে নিরিখ বাড়াতে পারে'', ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷

তিন পুরুষ ধরে চা বাগানে কাজ করছে দীপংকরের পরিবার৷ শ্রমিক হিসাবে দাদা ও বাবা অবসরে যাওয়ার পর তিনিও এ পেশায় এসেছেন৷ ব্রিটিশ আমলে মাদ্রাজ থেকে এসে এখানকার চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হন তাঁর পূর্বপুরুষরা৷

মালিক কাটে ৭টাকা, শ্রমিককে দেন দেড় টাকা

বাগানে নির্দিষ্ট ওজনের কম-বেশি চা তুললে টাকা কেটে নেওয়া এবং মজুরি দেওয়ার কার্যক্রম চালু আছে৷ এক্ষেত্রে মালিক আর শ্রমিকের জন্য ভিন্ন নিয়ম চালু আছে৷

চা শ্রমিক কাজল রায় জানান, তাঁর কর্মস্থল ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন করিমপুর চা বাগানে ২০ কেজির মানদণ্ডেই চা তুলতে হয়৷ কিন্তু বেশি তুললে প্রতি কেজিতে শ্রমিকদের দেওয়া হয় দেড় টাকা করে৷ আর কমের জন্য প্রতি কেজিতে কেটে নেওয়া হয় সাত টাকা করে৷

‘‘ (বেশি পাতা তুললে প্রতি কেজির জন্য) দেড় টাকা দেয়৷ আর কম হলে প্রতি কেজিতে ৭ টাকা কেটে নেয়৷ আমাদের সবক্ষেত্রে ঝামেলা৷ চা বাগানের মানুষের সবক্ষেত্রেই কষ্ট'', নিজেদের অবস্থার বোঝাতে গিয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন কাজল রায়৷

শিক্ষা-স্বাস্থ্যের দুরবস্থা

চা শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা দীপংকর রায় বলেন, ‘‘বর্তমানে চা বাগানে শিশু শ্রম অনেকাংশে কমলেও শিক্ষা-দীক্ষার সুযোগ তেমন নেই৷ ১৬ থেকে ১৭টি চা বাগানে সরকারি প্রাইমারি স্কুল আছে৷ ২০০৮ সালে ছিল ৬টি৷ আন্দোলনের কারণে ১৪টা হয়েছে৷ সবখানে মালিকদের নিজস্ব মেকানিজম দাঁড় করায়৷ ক্লাস বা পড়াশোনার কোনো গুরুত্ব থাকে না৷ আর তিনশ' জন স্টুডেন্টকে তো এক বা দুইজন শিক্ষক দিয়ে পড়ানো সম্ভব না৷''

নিজস্ব চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা তেমন না থাকায় ডাক্তার দেখাতে হলে তাঁদেরকে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা থেকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও যেতে হয় বলে জানান কাজল রায়৷ ‘‘অসুস্থ হলে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে নিয়ে যেতে হয়৷ যেতেই ৭-৮শ' টাকা খরচ হয়ে যায়৷ চিকিৎসাতো পরের বিষয়৷''

শ্রমিকদের বেতনভাতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে শ্রমিক নেতা দীপংকর বলেন, ‘‘আমাদের দেশে চা শ্রমিকদের অবস্থা খুবই করুণ৷ তারা প্রতিদিন যে শ্রম দেয়, শ্রমের বিনিময়ে যে ১০২ টাকা পায়, বর্তমান বাজারের যে অবস্থা, তাতে খুবই কষ্টের মধ্যে এদের জীবন যায়৷ ১০২ টাকা তো এমনিতে প্রতিদিন খরচ হয়ে যায়৷ আমরা আমাদের সংগঠনের তরফ থেকে ৩০০ টাকা দাবি করেছিলাম৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০২ টাকায় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান