1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পণ্যের দাম বাড়লেও সরকার চুপ

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

এবার থেকে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ যত খুশি মজুত করতে পারবে সংস্থাগুলি৷ আর তার দাম খুব বেশি বেড়ে না গেলে সরকার কিছুই করবে না৷ ভারতে আইনে পরিবর্তন করে এই ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে৷ 

https://p.dw.com/p/3isd1
ছবি: DW

ভারতে চাল, ডাল, গম, তেল, আলু, পেঁয়াজের দাম বাড়ার পথ কি প্রশস্থ করে দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার?  প্রশ্নটা উঠছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন বিল সংসদে পাস হওয়ার পরে৷ কারণ, এই সংশোধনের ফলে চাল, গম, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদি  মজুদ করার ক্ষেত্রে আর কোনো সীমা থাকলো না৷ যুদ্ধ, কোনো ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয় অথবা দাম অস্বাভাবিক বেড়ে না গেলে সরকার আর এই সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেঁধে দেবে না৷

বিরোধী দলীয় নেতা এবং বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এর ফলে কৃষকদের সর্বনাশ হবে৷ তাঁরা উৎপাদিত পণ্যের দাম পাবেন না৷ আর সাধারণ মানুষের ক্ষতি হবে, কারণ, বড় বড় সংস্থাগুলো প্রচুর পরিমাণে চাল, গম, সবজি মজুত করে বাজারে সংকট তৈরি করতে পারবে এবং দাম বাড়িয়ে নিতে পারবে৷ সরকার যেহেতু আর দাম বেঁধে দেবে না, তার ফলে কোপটা পড়বে সাধারণ মানুষের উপর৷ 

সরকারের যুক্তি হলো, চাল, ডাল, তেল ও কিছু সবজি মজুতের সীমা বেঁধে দেয়ায় প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও কৃষি পণ্যের ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছিলেন৷ এখন সময় বদলেছে৷ শিল্প ও কৃষক দুজনের স্বার্থে তাই আইনে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে৷ এর ফলে কৃষকদের আয় বাড়বে৷ শিল্প ও ব্যবসায়িক সংস্থার অসুবিধাও দূর হবে৷ খাদ্য ও গণবণ্টন প্রতিমন্ত্রী দানভে দাদারাও মঙ্গলবার সংসদে বলেছেন, ‘‘এর ফলে চাষিদেরও লাভ, ক্রেতাদেরও লাভ৷''

কী পরিবর্তন হলো

কৃষিতে সংস্কারের জন্য সরকার মোট তিনটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল৷ সংসদ চালু হওয়ার পর এ নিয়ে তিনটি বিল আনা হয়৷ প্রথম দুটি বিল আগেই পাস হয়ে গেছে৷ এই বিল পাস করতে গিয়েই রাজ্যসভায় তুলকালাম হয়েছে৷ ভোটাভুটির দাবি না মেনে শুধু ধ্বনিভোটে বিল পাস করা হয়েছে৷ ওয়েলে নেমে, রুলবুক ছিঁড়ে, মাইক ভেঙে ভয়ঙ্কর প্রতিবাদ করেছেন বিরোধীরা৷ আটজন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে৷  তারপরেই রাজ্যসভা বয়কট করেছে বিরোধী দলগুলি৷ বিরোধীশূ্ণ্য রাজ্যসভায় তৃতীয় বিলটিও মঙ্গলবার পাস করিয়ে নেয়া হয়েছে৷

এই বিলে বলা হয়েছে,  চাল-ডালের ক্ষেত্রে  ৫০ শতাংশ ও সবজির ক্ষেত্রে একশ শতাংশ দাম বাড়লে তবেই সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ গত এক বছরের দামের গড় করে তার থেকে একশ শতাংশ বা ৫০ শতাংশ বাড়ার হিসাব করা হবে৷ 

আপত্তি কোথায়

বিরোধী নেতাদের দাবি, তিনটি বিলকে একসঙ্গে দেখতে হবে৷ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এবার তো  বড় বড় কর্পোরেট আগে থেকে কৃষকদের সঙ্গে  চুক্তি করবে৷ তারাই বলে দেবে কৃষক কী ফসল উৎপাদন করবে এবং সেই ফসল সংস্থাগুলি কী দামে কিনবে৷ এর ফলে ফসলের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তারা৷ বাজারে একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারবে৷ মান্নানের দাবি, বড় কর্পোরেটের হাতে শুধু যে প্রচুর মজুত থাকবে তা-ই নয়, তারা উৎপাদনকে প্রভাবিত করে নিজেদের লাভ বাড়াবার সুযোগও পাবে৷ এর ফলে জিনিসের দাম বাড়তে বাধ্য৷ কৃষকের সর্বনাশ হবে৷ সাধারণ মানুষের কোমর ভেঙে যাবে৷

দাম বাড়ার আশঙ্কাটা বিশেষজ্ঞদের মনেও রয়েছে৷ সেন্ট্রাল বোর্ড অফ কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক চেয়ারম্যান সুমিত দত্ত মজুমদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘এই সব কৃষিপণ্য একেবারে সাধারণ মানুষ প্রতিদিন ব্যবহার করেন৷ সবগুলোই অত্যাবশ্যকীয় পণ্য৷ এর মজুত ও দামের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দাম বাড়ার একটা আশঙ্কা তো থেকেই যায়৷ সাধারণ মানুষের কাছে অতি প্রয়োজনীয় জিনিস বলে এতদিন এগুলির দাম ও মজুত বেঁধে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷''

দাম বাড়া নিয়ে একই রকম আশঙ্কা রয়েছে নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিজনেস এডিটর জয়ন্ত রায়চৌধুরির৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''এতে কর্পোরেট ও বড় সংস্থার লাভ হবে৷ মজুত বেশি থাকলে তারা তাঁদের ব্যবসা আরো ভালোভাবে চালাতে পারবে৷ তবে দাম বাড়ার আশঙ্কা থাকছেই৷''

কী হতে পারে

বিলে বলা আছে, চাল-ডালের দাম ৫০ শতাংশ ও সবজির দামএকশ শতাংশ না বাড়লে সরকার হস্তক্ষেপ করবে না৷ বিরোধীদের দাবি, এখানেই তো দাম বাড়ানোর ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছে কর্পোরেটগুলি৷ আব্দুল মান্নান যেমন বলছেন, ''ব্যবসায়ীদের খুশি করতেই এই বিল আনা হয়েছে৷ তারা লাভ বাড়াতে পারলেই খুশি হবে৷ দেখে নেবেন, এই কৃষি ও শ্রমিক বিলই মোদী সরকারের চরম বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে৷''

এই কারণেই সবকটি বিরোধী দল মিলে ঠিক করেছে, সংসদের অধিবেশন শেষ হলেই তাঁরা আন্দোলনে নামবে৷ একযোগে নয়৷ প্রত্যেকেই নিজের মতো করে আন্দোলন করবে৷ কেন্দ্রীয় স্তরে একজোট হয়ে প্রতিবাদ করা হবে৷  কৃষিবিল নিয়ে মোদী সরকার এমনিতেই কিছুটা চাপে আছে৷ অকালি দলের মন্ত্রী ইস্তফা দিয়েছেন৷ বিভিন্ন রাজ্যে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়েছে৷

বিজেপি মনে করে, বিরোধীদের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই৷ নরেন্দ্র মোদীর আছে৷ ফলে তাঁর কথাই লোকে শুনবে৷ বিশ্বাস করবে৷ বিরোধীদের আপত্তি তাঁদের মনে দাগ কাটবে না৷

বিরোধীদের বক্তব্য, জিনিসের দাম বাড়লে তখন সাধারণ মানুষ সবই বুঝতে পারবেন৷ এই লড়াই একদিনের নয়৷ তাঁরাও দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন৷