1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌চিট ফান্ড কাণ্ডে সাংবাদিক গ্রেপ্তার

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২১ ডিসেম্বর ২০১৮

পশ্চিমবঙ্গে চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে এবার গ্রেপ্তার বিশিষ্ট সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়৷ তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ তহবিল নিজের ব্যবসায় খাটানোর অভিযোগ৷

https://p.dw.com/p/3AU2t
ছবি: DW/P. M. Tewari

বাংলা সাংবাদিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সুমন চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারিতে৷ কেউ বলছেন, এ হলো কর্মফল!‌ এমনটি হওয়ারই ছিল৷ আবার কেউ বিমর্ষ যে, এমন একজন বিশিষ্ট সাংবাদিকের নাম এভাবে জড়িয়ে গেল চিট ফান্ডের দুর্নীতিতে! কেউ কেউ আবার বলছেন, ইদানিং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির হয়ে খুব লিখছিলেন বলেই নাকি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কুনজরে পড়লেন সুমন৷ কারো আবার ধারণা, সুমনকে হেফাজতে নিয়ে আসলে মমতা ব্যানার্জি সম্পর্কেই ‘‌খবর'‌ বের করে নিতে চায় সিবিআই৷ প্রধানমন্ত্রী মোদীর নাকি সেরকমই নির্দেশ৷ ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে মমতার বিরুদ্ধে নাকি ঘুঁটি সাজাচ্ছেন মোদী৷ বলা বাহুল্য যে, এরকম রাজনৈতিক ধারণার সপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই৷ তবে একদল রীতিমতো খুশি৷ তাঁরা প্রকাশ্যেই উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছেন যে, এতদিন সৎ সেজে থাকা সুমন চট্টোপাধ্যায় এবার বুঝবেন জেলে থাকতে কেমন লাগে৷ এঁদের একজন সাংবাদিক কুনাল ঘোষ, সারদা সংস্থার মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বে থাকার জেরে, চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অপরাধে দীর্ঘ সময় যাঁকে জেলে থাকতে হয়েছে৷ সোশাল মিডিয়ায় কুনাল সরাসরিই বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে একসময় ধারাবাহিকভাবে লিখে গেছেন সুমন চট্টোপাধ্যায়৷ এবার তিনি দেখুন, কেমন লাগে!‌

‘‘‌যেদিন থেকে সাংবাদিকরা ক্ষমতালোভী হয়ে উঠেছেন, সেদিন থেকে অপমানটা শুরু হয়েছে''‌

একসময় আনন্দ বাজার পত্রিকার সংবাদ দপ্তরের সর্বেসর্বা ছিলেন সুমন৷ পরে আনন্দবাজার গোষ্ঠীরই টিভি চ্যানেল স্টার আনন্দ'র কর্ণধার৷ সেখান থেকে সদলবলে বেরিয়ে কলকাতা টিভির পত্তন করেন৷ তারপর সেই বেসরকারি চ্যানেলও ছেড়ে দিয়ে প্রথমে ‘একদিন' পত্রিকা, পরে একই নামে খবরের কাগজ এবং শেষ তক টাইমস্‌ অফ ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর বাংলা কাগজ ‘এই সময়'-এর সম্পাদক৷ প্রেসিডেন্সি কলেজের কৃতি ছাত্র, ইতিহাসের স্নাতকোত্তর সুমন চট্টোপাধ্যায়ের পেশাদার জীবনের ইতিহাস কম বর্ণময় নয়৷ কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ ওঠে, আইকোর নামে এক চিট ফান্ড সংস্থার অবৈধভাবে বাজার থেকে তোলা প্রায় ৩০০০ কোটি টাকার একটা অংশ নিজের সংস্থা দিশা মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে আনা৷ তাঁর ‘একদিন' পত্রিকা এবং কাগজের মালিকানা ছিল এই দিশা মিডিয়ার৷ অভিযোগ যে, শুধু কাগজ চালাতেই নয়, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টেও আইকোরের ওই আমানতের একটা অংশ সরিয়েছেন সুমন চট্টোপাধ্যায়৷ কিছু টাকা লগ্নি হয়েছে তাঁর স্ত্রী'র ব্যবসায়৷

গত চার বছর ধরে এই অভিযোগগুলির তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল, ভারতে অর্থনৈতিক অপরাধের তদন্ত যে কেন্দ্রীয় সংস্থা করে, সেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি৷ তদন্তসূত্রে এ-ও জানা গিয়েছিল যে, পশ্চিমবঙ্গের আরেক চিট ফান্ড সংস্থা সারদা'র মালিক সুদীপ্ত সেনের থেকে এক বড় অঙ্কের টাকা সিকিউরিটিবিহীন ঋণ হিসেবে নিয়েছিলেন সুমনবাবু৷ পরে অন্য দুই চিট ফান্ডের থেকে আবার ধার নিয়ে তিনি সারদার টাকা শোধ করেন৷ সুদীপ্ত সেন ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হন এবং তিনি এখনো বিচারবিভাগীয় আসামি হিসেবে জেলবন্দি৷ আইকোর সংস্থার মালিক অনুকুল মাইতি এবং তাঁর স্ত্রী-ও গত বছরই গ্রেপ্তার হন৷ এবার আরেকটি হাই প্রোফাইল অ্যারেস্ট এই সুমন চট্টোপাধ্যায়ের৷ বৃহস্পতিবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতার সল্ট লেকে সিবিআইয়ের দপ্তরে ডেকে পাঠানো হয় এবং দীর্ঘ জেরার পর গ্রেপ্তার করা হয়৷ রাতেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ওড়িশার ভুবনেশ্বরে এবং সেখানকার বিশেষ সিবিআই আদালতে শুক্রবার সকালে পেশ করা হয়৷

একজন বরিষ্ঠ সাংবাদিকের এই অপমানজনক পরিণতি কি সাংবাদিকতার পেশাকেই অসম্মানিত করল না?‌ ডয়চে ভেলের এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন আরেক বরিষ্ঠ সাংবাদিক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়৷আনন্দ বাজার পত্রিকা থেকেই সুমন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন তিনি৷ তাঁর বক্তব্য খুবই সোজাসাপ্টা৷ বললেন, ‘‘‌সংবাদপত্রের জন্যে অপমানটা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই৷ যেদিন থেকে সংবাদপত্রের সাংবাদিকরা রাজনীতিকদের সঙ্গে সঙ্গে থেকে রাজনীতিক হওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং ক্ষমতালোভী হয়ে উঠেছেন, সেদিন থেকেই এর শুরু৷''‌ গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় এখনো মানতে রাজি যে, ‌সুমন চট্টোপাধ্যায় অত্যন্ত গুণী সাংবাদিক৷ মানুষ হিসেবে নয়, সাংবাদিক হিসেবে ওঁর গুণের এখনো সমঝদার তিনি৷ কিন্তু বললেন, ‘‘‌যে জিনিসটা প্রথম দিন থেকে আমি ওঁর মধ্যে লক্ষ্য করেছি, ক্ষমতার লোভ, প্রতিপত্তি আর অর্থের লোভ, এই তিনটে জিনিসই মানুষকে এমন জায়গায় নামিয়ে দেয় টেনে, যে সাংবাদিকতার পেশাটাকে চূড়ান্তভাবে অসম্মানিত করে!‌'‌'