1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাত্র-ছাত্রী আর বিদেশীদের এলাকা টানেনবুশ

হাফসা হোসাইন২২ অক্টোবর ২০০৮

বন শহরের এক প্রান্তের আবাসিক এলাকা টানেনবুশ৷ নিরিবিলি, ছিমছাম পরিবেশ৷ টানেনবুশেই জার্মানির স্টুডেন্ট নেটওয়ার্কের দু´টো ডরমেটরির একটিতে আমার থাকার ব্যবস্থা করেছে ডয়চে ভেলে৷ ১৪ তলা বিল্ডিং-এ থাকে ৩১২ জন৷

https://p.dw.com/p/FYpf
ছাত্র-ছাত্রী আর বিদেশীদের এলাকা টানেনবুশছবি: DW

আমাদের এই পাড়ার নাম টানেনবুশ মিটে৷ জার্মান ভাষায় মিটে মানে মধ্য৷

Wohnhäuser in Tannenbusch
যেহেতু ডরমেটরিটি স্টুডেন্ট নেটওয়ার্কের তাই বাসিন্দাদের প্রায় সবাই ছাত্রছবি: DW

ছোট্ট রুম কিন্তু বেশ পরিপাটি৷ অ্যাটাচ্ড বাথ৷ পুরো ফ্লোরের ২৬ জনের জন্য একটি রান্নাঘর৷ মজার ব্যাপার হলো রান্নাঘরে গেলে একেক দিন একেক দেশের ছেলেমেয়ের সঙ্গে দেখা হয়৷ রান্নার ধরনও একেক জনের আলাদা৷ তবে সব দেখেশুনে মনে হলো রান্নাবান্নায় আমরা বাংলাদেশীরাই বেশি সময় দিই৷ অন্যদের রান্নার প্রক্রিয়া বেশ ঝটপট৷ অধিকাংশই ইনস্ট্যান্ট খাবারে অভ্যস্ত৷ জার্মানির খাবারের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি এখনও৷ কেন জানি ওসব খাবারে রুচি হয় না তেমন একটা৷ শুধু দেশি খাবারের কথা মনে পড়ে৷ এখানে দেশি রান্নার উপকরণ মোটামুটি সবই পাওয়া যায়৷ তাই বেশ উত্সাহ নিয়েই রান্না করে খাই৷ এখারকার প্রায় সব বাংলাদেশীই তা করে৷

যেহেতু ডরমেটরিটি স্টুডেন্ট নেটওয়ার্কের তাই বাসিন্দাদের প্রায় সবাই ছাত্র৷ অধিকাংশই পড়ছে বন ইউনিভার্সিটিতে৷ আমাদের বিল্ডিং-এ আরব আর চীনার সংখ্যাই বেশি৷ ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, প্যালেস্টাইন, লেবানন, মিশর, ব্রাজিল, ক্রোয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ছেলেমেয়ে থাকছে এখানে৷ এমনকি দুয়েকজন জার্মানও আছে৷ বলা যায় বিভিন্ন সংস্কৃতি আর ভাষাভাষীদের বিল্ডিং এটি৷

Trödelmarkt in Tannenbusch 2
মাসের চতুর্থ রোববারটিতে বেশ প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে টানেনবুশ৷ কারণ হলি ডে মার্কেট বসে এখানেছবি: DW

ডরমেটরির আশপাশের অ্যাপার্টমেন্টগুলোতেও ছাত্রছাত্রীরা ভাড়া থাকে৷ আসলে টানেনবুশই ছাত্রছাত্রী আর বিদেশী বিশেষ করে তুর্কীদের এলাকা হিসেবে পরিচিত৷ আফ্রিকান পরিবারও আছে বেশ কিছু৷ আমাদের ডরমেটরির একটু দূরেই টানেনবুশ মিটে শপিং মল৷ পাশেই ব্যাংক বুথও আছে৷ শপিং মলের নীচেই ট্রাম স্টেশন৷ এখানে আসার পর থেকেই শুনছি হিট মার্কেটের কথা৷ গিয়েই বুঝলাম কেন এত নাম৷ দুটো ফ্লোর নিয়ে বিশাল ডিপার্টমেন্টাল স্টোর৷ নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসই এই এক দোকান থেকে কেনা যায়৷ জার্মানিতে রাত ৮টা বাজলেই প্রায় সব দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়৷ হিট মার্কেটটা খোলা থাকে রাত দশটা পর্যন্ত৷ এ কারণেই দোকানটি খুব জনপ্রিয়৷ তার উপর অন্যান্য দোকানের চেয়ে এখানে জিনিসপত্র একটু সস্তায়ও পাওয়া যায়৷ তাই ছাত্রছাত্রীদের কাছে দোকানটি আসলেই হিট৷

অফিস থেকে ফিরে রুমে ঢুকলেই শূন্যতা ভর করে৷ মনে হয় পুরো ডরমেটরিতে বুঝি আমি একাই৷ আশপাশে কোন কোলাহল নেই৷ লোকজনের আনাগোনা নেই৷ ডরমেটরি তো বটেই পুরো টানেনবুশকে মনে হয় নিস্তব্ধ এলাকা৷ বন শহরের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা নাকি টানেনবুশ! তাতেই এত নীরব৷ একটু পর পর বাস আর ট্রাম চলার শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দই নেই৷

Folklore in Tannenbusch
নিজ নিজ ভাষায় নাচ গান পরিবেশন করে বিভিন্ন দেশের মানুষজনছবি: DW

রোববারটা এখানে পুরোপুরিই ছুটির দিন৷ স্কুল, কলেজ, ইউনিভির্সিটি, অফিসের মতো মার্কেটও এদিন বন্ধ থাকে৷ খোলা থাকে কেবল ইন্টারনেট কাফে আর কল শপগুলো৷

মাসের চতুর্থ রোববারটিতে বেশ প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে টানেনবুশ৷ কারণ হলি ডে মার্কেট বসে এখানে৷ আমাদের গ্রামগঞ্জে যেমন হাট বসে তেমন৷ কাপড় চোপড় থেকে শুরু করে খাবার-দাবার, ঘরের খুঁটিনাটি জিনিসপত্র সব কিছু নিয়েই দোকান বসে৷ চলে নাচ গানও৷ নিজ নিজ ভাষায় নাচ গান পরিবেশন করে বিভিন্ন দেশের মানুষজন৷ যেন বিভিন্ন সংস্কৃতির মিলনমেলা৷ প্রাণচাঞ্চল্যে নীরবতা ভাঙ্গে টানেনবুশের৷