1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
১৫ জানুয়ারি ২০১৯

দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক প্রেসিডেন্ট কানহাইয়া কুমার ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ দেশদ্রোহিতার অভিযোগের এ মামলায় ১২০০ পাতার অভিযোগপত্র পেশ করেছে দিল্লি পুলিশ৷

https://p.dw.com/p/3BaqS
Indien Proteste JNU Campus Neu Delhi
ফাইল ফটোছবি: Reuters/A. Mukherjee

সংসদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার মূল চক্রী আফজাল-এর ফাঁসির প্রতিবাদে আয়োজিত ঐ সভায় রাষ্ট্রবিরোধী শ্লোগান দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷

বছর তিনেক আগে দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রবিরোধী শ্লোগান তোলা হয়েছিল, এই অভিযোগে দায়ের করা মামলার চার্জশিট জমা দিলো দিল্লি পুলিশ৷ দিল্লির পাতিয়ালা কোর্টে ১২০০ পাতার এই চার্জশিট একটি বড় টিনের বাক্সে করে আদালতে নিয়ে যান পুলিশ আধিকারিকরা৷ পুলিশ জানায়, প্রমাণ হিসেবে ঐ চার্জশিটে আছে ১০টি ভিডিও রেকর্ডিং এবং ৯০ জন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান৷ সাক্ষীদের মধ্যে আছে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা রক্ষী, অন্য শিক্ষার্থীরা এবং প্রশাসনিক কর্মচারিরা৷ পুলিশের মতে, কানহাইয়া কুমার, ওমর খালিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যসহ আরো ৯ জনের বিরুদ্ধে অকাট্য সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে৷ এছাড়া কমিউনিষ্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার নেতা, সাংসদ ডি. রাজার মেয়ে অপরাজিতাসহ আরো ৩৬ জনের নাম আছে ঐ চার্জশিটে৷ তবে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ প্রমাণাদি হাতে না থাকলেও প্রয়োজন হলে তাঁদের জিঙ্গাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো যাবে৷

‘সরকারের বিরোধীতা এক কথা, আর ভারত বিরোধীতা অন্য কথা’19055833

ভারতের সংসদ ভবনের উপর সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রী আফজল গুরুর ফাঁসির প্রতিবাদে দেশবিরোধী শ্লোগান দেওয়া হয়৷ ঐ সভার আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থি ছাত্র ইউনিয়ন, যার প্রেসিডেন্ট কানহাইয়া কুমার৷ তাই নিয়ে গোটা দেশে বিস্তর জলঘোলা হয়৷ পুলিশ জানায়, ঐ সভায় কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদ এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে রাষ্ট্রবিরোধী শ্লোগান তুলতে দেখা যায়৷ ২০১৬ সালের ঐ ঘটনায় কানহাইয়া কুমারসহ ছাত্র নেতাদের গ্রেপ্তারি নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে৷ পরে অবশ্য ছাত্র নেতারা জামিন পেয়ে যায়৷ এই চার্জশিটকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করে কানহাইয়া কুমার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘চার্জশিট জমা দেবার খবর সত্যি হলে পুলিশ ও প্রধানমন্ত্রী মোদিজী ধন্যবাদার্হ৷ তিন বছর পর সাধারণ নির্বাচনের ঠিক মুখে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই এই চার্জশিট৷ এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছাড়া আর কী ? তবে দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর আমাদের আস্থা আছে৷''

অপর অভিযুক্ত উমর খালিদ তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে বলেন, ‘‘ভোটের মুখে মানুষের নজর অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছে মোদী সরকার৷ সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা ঢাকতেই এই চেষ্টা৷ তবে আদালতে আমরা লড়বো এবং নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করবো. খালিদের কথায়,  ভারতীয় ফৌজদারি আইনে চার্জশিট পেশ করতে হয় তিন মাসের মধ্যেই৷ তাদের ক্ষেত্রে তিন বছর লাগলো কেন ? দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ক বললেন, ‘‘মামলার তদন্তসূত্রে সাক্ষীদের বয়ান রেকর্ড করতে তদন্তকারি অফিসারদের অন্য রাজ্যগুলিতেও যেতে হয়েছিল৷''

ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে তিন বছর পর চার্জশিট দেবার পেছনে সত্যিই অন্য কোনো কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা সংস্থার সচিব ধীরাজ সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, পুলিশ সময় নিয়েছে গোটা কেসটাকে সাজাতে৷ তবে এটা শুধু কানহাইয়াদের কেসেই নয়, এর আগেও অনুরূপ মামলায় চার্জশিট সাজানো হয়৷ তাই এত সময় লাগে৷ সাজাতে কালঘাম ছুটে যায় পুলিশের৷'' উল্লেখ্য, অতীতে এই ধরনের চার্জশিট দেওয়া হয় বুকার পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় লেখক অরুন্ধতী রায়, মানবাধিকার কর্মী বিনায়ক সেন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অদ্যাপক এস. গিলানীর বিরুদ্ধে৷ আশঙ্কা একটাই৷ আদালতের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়৷ বিভিন্ন আদালতের বিচারকদের ভূমিকা অনেক সময় আমরা মেনে নিতে পারি না৷ বিচারকরা পুলিশ প্রশাসনের কথাই সাধারণত মেনে নেন৷ তাদের হাতে আছে নিজস্ব ক্ষমতা৷ এর বিরুদ্ধে চাইলেও আমরা কিছু করতে পারছি না৷ কারণ, ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের জটিলতাই মুখ্যত দায়ী৷ এজন্য দরকার বড় ধরনের সংশোধন৷ সর্বভারতীয় স্তরে এ-জন্য যে ধরনের আন্দোলন দরকার সেটাও পারছি না৷''

কানহাইয়াদের ইস্যুটা সর্বভারতীয় স্তরে নিয়ে গিয়ে প্রতিরোধ করা যায়নি৷ পাশাপাশি ভারতের গণতন্ত্রের যে কাঠামো আছে তার সংশোধনের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে৷ ভারত বিশ্বের বৃত্তম গণতান্ত্রিক দেশ বলে গলা ফাটানো যথেষ্ট নয়৷ ভিডিওতে কানহাইয়াদের ভারতবিরোধী শ্লোগান তুলতে দেখা গেছে৷ তাতেও কি অপরাধ প্রমাণ হয় না ? গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা সংস্থার সচিব ধীরাজ সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘ভারত বিরোধী শ্লোগান দিয়েছে তো কী হয়েছে ? ঐ ধরনের শ্লোগান তো আমরাও দিচ্ছি৷ সবাই দিচ্ছে৷ দেখতে হবে কোনটাকে বলবো ভারত বিরোধী ? আফজাল গুরুর ফাঁসির প্রতিবাদ করাটা সত্যিই ভারতবিরোধী কিনা, সেটার ব্যাখ্যা কে দেবে ? আমি যদি বলি আফজাল গুরুকে ফাঁসি দেওয়াটা অন্যায় হয়েছে, তাহলেই কি আমি দেশদ্রোহী হয়ে যাবো ? ভারতের গণতন্ত্র কি শুধু আফজালকে নিয়েই তৈরি৷ আমার দেশভক্তি কি শুধু আফজালকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে ? এটা একটা বৃহত্তর প্রশ্ন৷ বর্তমানের কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাখ্যাই শেষ কথা হতে পারে না৷ সরকারের বিরোধিতা এক কথা, আর ভারতবিরোধিতা অন্য কথা৷ দুটো এক নয়৷ মোদী এবং সারা দেশ তো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই'' ডয়চে ভেলেকে বললেন গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা সংস্থার সচিব ধীরাজ সেনগুপ্ত৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য