1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছিঃ! লজ্জা করছে

১২ এপ্রিল ২০২২

হাঁসখালি ধর্ষণ-কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য কেবল নিন্দনীয় নয়, চিন্তার। লজ্জার। এই কি তবে প্রশাসনের মুখ?

https://p.dw.com/p/49oKA
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: Mani Tewari Prabhakar

আজ অনেকদিন পর তাপসী মালিকের কথা মনে পড়ছে। সিঙ্গুরের তাপসী মালিককেও খুন করা হয়েছিল। এখনো মনে পড়ে, সে সময় শাসকদলের একাংশ এবং বিদ্বজ্জনদের কেউ কেউ ঘটনাটি নিয়ে নোংরা রাজনীতি করার চেষ্টা করেছিলেন। রীতিমতো চিত্রনাট্য লিখেছিলেন দুই বিশিষ্ট ব্যক্তি। পারিবারিক গন্ডগোলের জেরেই তাপসীর মৃত্যু হয়েছে, এমন ছবি তৈরির প্রয়াস নিয়েছিলেন এক পরিচালক।

মনে পড়ছে সে সময় তৎকালীন বিরোধীনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাগুলি। মনে পড়ছে, আজ যে বিশিষ্টরা মুখ্যমন্ত্রীর নবরত্নসভা আলো করে বসে আছেন, সিঙ্গুর-পর্বে তাদের ভূমিকা। তাপসী-কাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে কার্যত কেঁদে ফেলেছিলেন মমতা। মানবিকতার প্রশ্ন তুলেছিলেন। আর সেই মমতা আজ কী বলছেন?

ক্ষমতার ভাষায় কথা বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাঁসখালি ধর্ষণ-কাণ্ড নিয়ে তিনি বলেছেন, 'আপনি রেপ বলবেন, না কি প্রেগনেন্ট বলবেন, না কি লাভ অ্যাফেয়ার বলবেন... না কি শরীরটা খারাপ ছিল, না কি কেউ ধরে মেরেছে? ... মেয়েটার না কি লাভ অ্যাফেয়ার ছিল, শুনেছি।' একটি ১৪ বছরের কিশোরীর মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রী যদি এই ভাষায় কথা বলেন, তাহলে বোঝা যায়, সার্বিকভাবে রাজ্যের অবস্থা কী? মুখ্যমন্ত্রী যে ঘটনাটিকে গুরুত্বই দিতে চাইছেন না, তা-ও তার বক্তব্য থেকে পরিষ্কার। ঘটনাটি নিয়ে তিনি যা বলেছেন, প্রশাসনও নিশ্চয় সেখান থেকে বার্তা পেয়ে গেছে। আরো একটি 'ছোট ঘটনা'র মতোই নিশ্চয় হাঁসখালি স্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবে!

হাঁসখালির ঘটনা নিয়ে কথা হচ্ছিল রাজ্যের এক সাবেক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে। একসময় রাজ্যপুলিশের ডিজি-ও ছিলেন তিনি। বলছিলেন, এই মামলা কোনোভাবেই দাঁড়াবে না। ঘটনার পাঁচদিন পর পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে, ততক্ষণে সমস্ত প্রমাণ লোপাট হয়ে গেছে। মেয়েটির মৃতদেহ ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ধর্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ময়নাতদন্ত পর্যন্ত করা যায়নি। যে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ফেরার। তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাবেক ওই পুলিশ কর্তার বক্তব্য, ''কতদিন জেলে থাকবে সে? খুব বেশি হলে এক মাস! পুলিশ চার্জশিটে ধর্ষণের কথা তো প্রমাণই করতে পারবে না!''

ঠিক এটাই তো চেয়েছিল অপরাধীরা। ওই নাবালিকার পরিবারকে ভয় দেখিয়ে দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, কোনোভাবেই যেন পুলিশের কাছে খবর না যায়। অথচ সোমবার মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, কেন ঘটনার পরেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়নি! কেন পুড়িয়ে দেওয়া হলো মেয়েটির মৃতদেহ! মুখ্যমন্ত্রী জানেন না, তার 'তাজা' নেতারা দিকে দিকে কেমন সন্ত্রাস তৈরি করে রেখেছে? জানেন না, মেয়েটির পরিবার কথা না শুনলে হাঁসখালিতে আরেকটা বগটুই হয়ে যেতে পারতো? মুখ্যমন্ত্রী আসলে সবই জানেন। কিন্তু ধৃতরাষ্ট্রের মতো তিনি ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে গেছেন। কোনো অন্যায়ই আর তিনি দেখতে পান না। ঠিক যেমন দেখতে পাননি পার্ক স্ট্রিটের ঘটনায়, কামদুনির ঘটনায়। সবই তার কাছে 'ছোট' ঘটনা।

শুধুনেত্রী নন, তার নবরত্নরাও আজকাল আর কিছুই দেখতে পান না। কোনোকিছুতেই আর তাদের কিছু এসে যায় না। মানুষের ক্ষোভ শুধু প্রশাসন নয়, আপনাদের উপরেও গিয়ে পড়ছে। কারণ একসময় মানুষ আপনাদেরই বিশ্বাস করেছিল। বিশ্বাসঘাতকদের ইতিহাস ক্ষমা করে না। আপনারা নিজেরা নিজেদের ক্ষমা করতে পারবেন তো?

উপসংহারে মুখ্যমন্ত্রী এবং তার পারিষদদের একটি তথ্য দিয়ে রাখি। সমাজ এখন ম্যারিটাল রেপ বা বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে কথা বলছে। অর্থাৎ, বৈধ বিয়ের পরেও কোনো নারীকে তার স্বামী জোর করে ভোগ করতে পারে না। তা করলে তাকে ধর্ষণ বলে চিহ্নিত করা হয়। ধরে নেওয়া যাক, সত্যিই ওই নাবালিকার কোনো 'অ্যাফেয়ার' ছিল। কিন্তু সে জন্য তাকে ধর্ষণ করার লাইসেন্স পাওয়া যায় না। দল বেঁধে ধর্ষণ করারও নয়। প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও হাঁসখালির ঘটনা ধর্ষণ, না থাকলেও তা-ই। এটুকু বোঝার জন্য সংবেদনশীল হওয়ার প্রয়োজন হয় না, ক্ষমতার দম্ভ সামান্য কমাতে হয়।

আপনাদের মুখে 'সংবেদনশীল' শব্দটা শুনতেও এখন ঘেন্না লাগে। ছিঃ!