1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌জঙ্গল পাহারায় সারমেয় রক্ষীরা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৪ জুন ২০২০

দু’‌জন এসে গেছে, দুজনের এখনও তালিম চলছে৷ পশ্চিমবঙ্গের বিস্তৃত বনাঞ্চল পাহারায় ক্রমশই অপরিহার্য হয়ে উঠছে প্রশিক্ষিত সারমেয় রক্ষীরা৷

https://p.dw.com/p/3eFkJ
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

একজন জার্মান শেফার্ড, যা অ্যালসেশিয়ান নামেও পরিচিত৷ আর অন্যজনও বেলজিয়ামের আরও একটি কুলীন গোত্রের সারমেয়৷ উত্তর ভারতের দেরাদুনে ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিসের অফিসারদের যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে, সেখান থেকে তালিম নিয়ে এসেছে এরা এবং এদের ট্রেনারও৷ ৩০ জুন আসছে এদের মতো আরও দু’‌জন৷ বহাল হবে মূলত উত্তরবঙ্গে এবং সুন্দরবন অঞ্চলে৷ চোরাশিকার রুখতে৷ বনবিভাগের নিজস্ব রক্ষীর সংখ্যা এমনিতেই যথেষ্ট নয়, তার ওপর করোনা লক ডাউনের অচলাবস্থার সুযোগ নিয়ে আরও বেড়ে গিয়েছিল চোরাগোপ্তা শিকার৷ এই সারমেয় বাহিনী সেখানে আশা জুগিয়েছে, অনেকটাই সামাল দেওয়া যাবে চোরাশিকারীদের উৎপাত৷
বক্সা টাইগার রিজার্ভের ফিল্ড ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, ‘‌‘‌চারটে কুকুরের মধ্যে যে দুটো অলরেডি এসে গেছে, সেটা একটা ২৪ পরগণা সাউথ ডিভিশন, সুন্দরবনের অঞ্চল যেটা দেখে, সেখানে থাকবে, একটা গরুমারাতে থাকবে, আর যে দুটো আগামী দিনে আসছে, ৩০ জুন, তার মধ্যে একটা বক্সায় থাকবে, একটা জলদাপাড়ায় থাকবে৷’‌’‌

সব বন্যপ্রাণীই টার্গেট: শুভঙ্কর সেনগুপ্ত, প্রধান অধিকর্তা, বক্সা টাইগার রিজার্ভ

উত্তরবঙ্গের সংরক্ষিত অরণ্যগুলোতে, যেমন বক্সা, গরুমারা, জলদাপাড়ায় চোরাশিকারের সমস্যা এখন কতটা তীব্র?‌ শুভঙ্করবাবু বলছেন, চোরা শিকারের সমস্যার থেকে তার বিপদের সম্ভাবনা অনেক বেশি৷ বড় প্রাণীর চোরা শিকার যতটা না হয়, তার থেকে, তারা শিকার হয়ে যেতে পারে যে কোনও সময়, এই ঝুঁকিটা সবসময়ই বেশি৷ সেখানেই শেষ নয়, উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চল যেহেতু বন্যপ্রাণীদের নিয়মিত যাতায়াতের রাস্তা, যাকে বন দপ্তরের চলতি লব্‌জে ‘‌ওয়াইল্ড লাইফ মুভমেন্ট করিডোর’‌ বলা হয়, সেখান দিয়ে অন্য এলাকায় চোরাশিকারের মাধ্যমে সংগৃহিত জিনিসও পাচার হয়৷ সেই পাচার বন্ধ করার জন্যই মূলত প্রশিক্ষিত কুকুরের ব্যবহার করেন ওঁরা৷
সাধারণত কোন ধরনের বন্যপ্রাণী চোরাশিকারীদের নিশানা হয়?‌ খড়গের জন্য গন্ডার, আর দাঁতের জন্য হাতি?‌ বক্সা টাইগার রিজার্ভের প্রধান অধিকর্তা বলছেন, ‘‌‘‌যে কোনও কিছুই হতে পারে৷ হাতি হতে পারে, গন্ডার হতে পারে, এমনকী হরিণও হতে পারে৷ বাঘ হতে পারে৷ লেপার্ড হতে পারে৷ All wild animals are target! ‌তার মধ্যে হরিণ, কিংবা বাইসন, কিংবা বুনো শুয়োর— এগুলো লোকে লোকাল কনজাম্পশনের জন্য টার্গেট করে৷ মাংসের জন্য৷’‌’‌

কুকুর নিয়ে যাওয়া হবে শুনলেই বলে দিচ্ছে!: অনিমেষ বসু

জঙ্গলপাহারার ক্ষেত্রে শুভঙ্কর সেনগুপ্ত আরও একটা জরুরি কথা বললেন৷ ‘‌এরিয়া ডমিনেশন’‌৷ ঘুরে ঘুরে নজর রাখার সময় একটা কুকুরের উপস্থিতি এক ধরনের ভয় তৈরি করে লোকের মধ্যে এবং সমীহ আদায় করে নেয়৷ যে ব্যাপারটার আরও বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিলেন উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ অনিমেষ বসু৷ বহু বছর ধরে তিনি এবং তাঁর পরিবেশ সুরক্ষা সংগঠন সরকারি বন বিভাগের সঙ্গে হাত মিলিয়েই উত্তরবঙ্গের বিস্তৃত বনাঞ্চল আগলে রাখার সামাজিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে৷ তিনি জানালেন, ‘‌‘‌বক্সা টাইগার রিজার্ভে যে প্রশিক্ষিত সারমেয়টি রয়েছে, সে খুবই ভাল কাজ করছে৷ বিভিন্ন জায়গায় অনেকগুলো চোরাই সামগ্রী উদ্ধার করেছে৷ প্লাস যেটা হয়েছে, এমনিতে লোকজনের ভয়ডর কম, আর যেহেতু বনকর্মীর সংখ্যার অপ্রতুলতা, বনপাহারায় অনেক খামতি রয়েছে৷ সেখানে দেখা গেছে, বনসংলগ্ন গ্রামে যদি কুকুর নিয়ে যাওয়া যায়, লোকে ভীত হয়ে বলে দিচ্ছে অমুকে অমুক জায়গায় আছে৷ কুকুর নিয়ে যাওয়া হবে শুনলেই বলে দিচ্ছে, (‌চোরাশিকারে)‌ ওই ওই লোক ছিল৷’‌’‌
অনিমেষবাবু জানাচ্ছেন, উত্তরবঙ্গে পেশাদার চোরাশিকারী, যাদের হাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র আছে, এমন কেউ নেই৷ এই শিকারীরা মূলত আসে উত্তর–পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো থেকে৷ সেটাই স্বাভাবিক কারণ বাঘের কোনও বিশেষ প্রত্যঙ্গই হোক, বা গন্ডারের, মূলত চীনেই এই সব চোরাই জিনিসের চাহিদা৷ ব্যবহার হয় যৌনক্ষমতা বর্ধক ওষুধ তৈরির উপাদান হিসেবে৷ উত্তর–পূর্ব ভারতের সীমান্ত দিয়ে নির্বিবাদেই তা চলে যায় চীনে৷ এই চোরাচালান এবং চোরাশিকার বন্ধ করতেই রাজ্যের বনবিভাগের হাত শক্ত করবে সারমেয় বাহিনী৷