1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন চায় না দলগুলো’

রাহাত রাফি
১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

‘‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো চায় না দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের ধারণা বিকশিত হোক,'' ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমনটিই বললেন জার্মানিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি ব্লগার ও অ্যাকটিভিস্ট মাহমুদুল হক মুন্সী (বাঁধন)৷

https://p.dw.com/p/3AOnb
Bangladesch Nationalflagge Aktion
ছবি: Reuters

তিনি মনে করেন, ‘‘জনগণের মধ্যে গণতন্ত্রের ধারণা বিকশিত হলে রাজনীতিতে জনগণের ক্ষমতায়ন বাড়বে, যা ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য হুমকি স্বরুপ বলে মনে করেন তাঁরা৷''

‘‘কোনো রাজনৈতিক দলই দেশের মানুষকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে দিতে চায় না, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত ৩০-৪০ বছর যাবত কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না৷ সাধারণ মানুষ থেকে একজন নেতা উঠে আসবে, সেটাকে রাজনীতিবিদরা নিজেদের ক্ষমতার জন্য হুমকি মনে করেন৷ এ কারণে তাঁরা সাধারণ মানুষকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না, সাধারণ মানুষকে ক্ষমতা দিয়ে অধিষ্ঠিত করতে চায় না৷''

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মাহমুদুল হক মুন্সি৷ ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ফেসবুকে তাঁর করা একটি সামাজিক আন্দোলনের ইভেন্টের মাধ্যমেই মূলত শুরু হয় শাহবাগে ও পরবর্তীতে সারা দেশে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ৷

পরবর্তীতে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর হুমকির মুখে দেশ ছাড়েন মাহমুদুল হক মুন্সী৷

বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে মাহমুদুল হক মুন্সী বলেন, ‘‘বর্তমানে দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা একেবারেই নেই৷ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কোনো বিষয়ে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারছে না৷আপনি যদি সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেন, আপনাকে সাদা পোষাকের লোকজন ধরে নিয়ে যাবে, আপনি জানবেনও না আপনাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ আপনাকে টর্চার করা করা হবে৷ আপনি যদি ক্ষমতাবান হন, তাহলে দেখানো হবে আপনি বন্দি, আর যদি ক্ষমতাবান না হন, তাহলে হয়তো আপনাকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না৷''

মাহমুদুল হক মুন্সী

২০১৩ সালে যে উদ্দেশ্যে গনজাগরণ মঞ্চ আন্দোলনে নেমেছিল তা এখন পর্যন্ত কতটুকু অর্জিত হয়েছে– এমন এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুল হক মুন্সী বলেন ‘‘অনেক পার্থক্য৷'' তিনি মনে করেন ২০১৩ সালে যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল, আজকে সরকার তাদের সাথেই হাত মিলিয়েছে৷ ‘‘২০১৩ সালে আমরা যাদের সন্ত্রাসী, জঙ্গি হিসেবে জানতাম, আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান তাদের কাছ থেকে সংবর্ধনা নিয়েছেন৷ এ পরিবর্তনটুকু এসেছে৷''

আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্রিক নির্বাচন বলতে যা বোঝানো হয়, বাংলাদেশে তা সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে৷ গণতন্ত্রাতিক রাজনীতি চর্চার পরিবর্তে দলগুলো পরিবারতন্ত্র চর্চায় ব্যস্ত৷ শুধু রাজনৈতিক দল নয়, দেশের মানুষের মধ্যেও গণতন্ত্রের ধারণা বিকশিত হয়নি৷'' তাঁর মতে, ‘‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একজন প্রতিনিধি নির্বাচিত করার চেয়ে তারা (জনগণ) দলের প্রতীক বা পারিবারিক বা ব্যাক্তিগত সংশ্লিষ্টতার বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়৷''

২০১৫ সালে জার্মানির সামাজিক সংগঠন হেনরিখ বল স্টিফটুং-এর বৃত্তি নিয়ে দেশটিতে আসেন মাহমুদুল হক মুন্সী৷ বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে যুক্ত এ অ্যাক্টিভিস্ট মনে করেন, একটি ভারসাম্যপূর্ণ, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে না পারার দায় রাজনীতিবিদদের একার নয়৷ ‘‘এটা আমাদের সবার ব্যর্থতা৷ আমরা আমাদের স্বাধীনতার মূল্যটা বুঝতে পারিনি৷ স্বাধীনতার মাধ্যমে আমরা একটা দেশ পেয়েছি, সে দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মাধ্যমে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ বঙ্গবন্ধু গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন৷ আমরা সেদিকে যাইনি৷ একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র থেকে বেরিয়ে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠন করেছিলাম ১৯৭১ সালে৷ আবারো আমরা সেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং ধর্মভিত্তক রাষ্ট্রের দিকে ফিরে যাচ্ছি৷''

পরবর্তী সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চালিয়ে নেবে এমন প্রত্যাশা থাকলেও এ বিষয়ে ততটা আস্থা রাখতে পারছেন না মাহমুদুল হক মুন্সী৷ তিনি বলেন, ‘‘ঐক্যফ্রন্টের ভিতরে রাজাকারদের অবস্থান৷ তারা তো নিজেদের বিচার নিজেরা করবে না৷ আবার সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেছে তেমন লোককেও মনোয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ৷ যখন দেখছি যে, দলগুলো রাজাকারদের মনোয়ন দিচ্ছে, তখন আর এ আস্থাটা রাখতে পারি না৷''

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সাথে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সখ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘যদিও রাজনৈতিক দলগুলো বলতে চায় যে, দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করে, তাই ধর্মভিত্তিক দলগুলোর প্রভাব থাকবে, কিন্ত বিষয়টি সঠিক নয়৷''

‘‘রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক আদর্শ দিয়ে জনগণকে প্রভাবিত করার কথা ছিল৷ সেটা তারা পারছে না'', বলেন তিনি৷ বিষয়টি বিশ্লেষন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর সময় কি দেশে মুসলমান ছিল না? তিনি কি করে তাঁর দলের নাম আওয়ামী মুসলিমলীগ থেকে আওয়ামী লীগ করলেন? এটা আসলে সামর্থের বিষয়, আপনি কিভাবে জনগণকে পরিচালিত করছেন তার উপর নির্ভর করে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য