1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে বিএনপি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঢাকায় শনিবার ড. কামাল হোসেনের নাগরিক সমাবেশে কারা আসেন তা নিয়ে আগ্রহ ছিল রাজনৈতিক মহলে৷ নানা জল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত যোগ দেন বিএনপি'র চার শীর্ষ নেতা৷ ছেলে মাহী বি চৌধুরীকে নিয়ে যোগ দেন বি চৌধুরীও৷

https://p.dw.com/p/35L9f
Bangladesh
ছবি: bdnews24.com

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠনের পর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বৃহত্তর ‘জাতীয় ঐক্য' গঠনের জন্য পাঁচ দফা দাবিও ঘোষণা করেছে৷ আর সেই ঘোষণার মূল বিষয় হল সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন৷

তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার ঢাকায় মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশের কর্মসূচি দেন ড. কামাল হোসেন৷ আর সেই সমাবেশের মঞ্চে হাজির হন বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাস আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ড. আবদুল মঈন খান৷ আর জামায়াত ছাড়া বিএনপি-নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্য কয়েকটি শরিক দলের নেতাও যোগ দেন সমাবেশে৷

বিএনপি নেতারা বিকেলে সমাবেশে যোগ দেয়ার পর অপেক্ষা ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার প্রধান বি চৌধুরী সমাবেশে আসেন কি না৷ শেষ পর্যন্ত বিকেল ৫টার পর বি চৌধুরী আসেন তার ছেলে মাহি বি চৌধুরীকে নিয়ে৷ বি চৌধুরি ছিলেন সমাবেশের প্রধান অতিথি আর অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন ড. কামাল হোসেন৷

সমাবেশে ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান নূর হোসেন কাশেমী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ।

এছাড়া তেল-গ্যাস, বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, গণতান্ত্রিক বাম জোটের নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিও যোগ দেন ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে৷

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দেশের সকল বিরোধী রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি দাবি করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও যুক্তফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘‘যদি কেউ মনে করেন জোর করে লাঠি দিয়ে, পুলিশ দিয়ে বন্ধ করবেন, তাহলে এত জোরে কথা বলবো, কেউ টিকবে না৷ দেশ আজ গভীর সংকটে৷ গতকাল (শুক্রবার) সারাদেশে সাড়ে তিন হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷''

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান৷

তিনি বলেন, ‘‘দেশের জনগণের চলাফেরার স্বাধীনতা নেই৷ তাই তারা দিশেহারা৷ দেশের জনগণ সুশাসন দেখতে চায়, একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল সমাজ নিশ্চিত করতে চায়৷ কার্যকর গণতন্ত্র ও আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগের মাধ্যমে সুশাসন দেখতে চায়৷''

ড. কামাল আরো বলেন, ‘‘জনগণ সব ক্ষমতার মালিক৷ কিন্তু আজকে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার, মানবাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত৷ এসব অধিকার ফিরে পেতে হলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷ আমি আশা করবো আজকে যারা এই নাগরিক সমাজে এসেছে তারা জনগণের এসব অধিকার নিয়ে কথা বলবেন এবং কাজ করবেন৷''

বি চৌধুরী বলেন, ‘‘এই জাতীয় ঐক্য সফল হবে৷ আমাদের এমনভাবে সেফগার্ড তৈরি করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের সরকার আর না আসতে পারে৷''

বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাস আলমগীর বলেন, ‘‘ম্যাডাম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে খবর দিয়েছেন যেকোনো মূল্যে এই ঐক্য ধরে রাখতে হবে৷ এই ঐক্যের মাধ্যমেই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হবে এবং বিজয় আসবে৷''

ড. শান্তনূ মজুমদার

‘জাতীয় ঐক্য' এবং শনিবারের সমাবেশ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. শান্তনূ মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের ঐক্য দোষের কিছু না৷ যেকোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সেটা করতেই পারে৷ তবে ড. কামাল হোসেনের কাছে আমার প্রশ্ন, যে যুক্তি দেখিয়ে এই ঐক্য করা হচ্ছে এটা উত্তম বিকল্প কিনা৷ বিকল্প হতেই পারে৷ আমার প্রশ্ন সেটা উত্তম কিনা৷''

তিনি বলেন, ‘‘এই ঐক্য, এই সমাবেশ অবশ্যই মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে৷ কিন্তু ভোটের হিসেবে তা কতটা কার্যকর হবে বা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি৷''

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে এই ধরণের ঐক্য প্রক্রিয়া একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক অগ্রগতি৷ আজকের (শনিবার) সমাবেশ বিরোধী দলের এই ঐক্য প্রক্রিয়াকে আরো সামনে নিয়ে যাবে৷ তবে শেষ পর্যন্ত কোন ইস্যুতে ঐক্য হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ কারণ প্রশ্ন আছে, ঐক্য জামাতকে নিয়ে না বাদ দিয়ে৷ খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করা হবে কি না৷ যদিও মাহমুদুর রহমান আজকে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছেন৷ ঐক্যের ইস্যুগুলো এখনো চূড়ান্ত নয়৷ যদিও তারা বলছেন, তাদের ভিত্তি একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন৷ কিন্তু সেটার প্রক্রিয়া কী হবে? তারপরও আজকের সমাবেশ বড় ধরনের অগ্রগতি৷ তারা যদি এভাবে আগামীতে আরো কর্মসূচি দেন, তা নিঃসন্দেহে সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আবার এটা এমন একটা নাগরিক ঐক্য, এখানে অনেক নেতারই নির্বাচনি এলাকা কোনটা হবে তা নিশ্চিত নয়৷ অতীতে এঁদের অনেকে নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন৷ তাই প্রশ্ন হলো, এদের সঙ্গে নির্বাচনি ঐক্যটা কীভাবে গড়ে তুলবে বিএনপি?''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি অত্যন্ত সুচতুরভাবে এই জাতীয় ঐক্যের নেতা হিসেবে ড. কামালকে মেনে নিয়েছে৷ কারণ খালেদা জিয়া কারাগারে৷ তারেক রহমান আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না৷ বিএনপিতে এই ঐক্যের নেতৃত্ব দিতে তৃতীয় ব্যক্তি খুঁজে বের করতে সমস্যা আছে৷ ড. কামালের দেশে বিদেশে একটা ভালো যোগাযোগ আছে৷ তারা সেটা বিবেচনায় নিয়েছে৷''

ড. তারেক শামসুর রহমান

আগামী ১ অক্টোবর থেকে সারাদেশে সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া৷ তারা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঁচ দফা দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

পাঁচ দফা দাবি হলো:

১. আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে৷ নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না৷

২. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে৷ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে৷

৩. কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-ছাত্রীসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারসহ গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে৷ এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না৷

৪. নির্বাচনের একমাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত  প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে৷ একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে৷

৫. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে, ‘গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২'-এর যুগোপযোগী সংশোধনের মাধ্যমে গণমুখী করতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য