1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে সংবাদ মাধ্যম কতটা স্বাধীন?

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

একদিকে মত প্রকাশের অধিকার, অন্যদিকে দায়িত্বজ্ঞান সম্পর্কে সচেতনতা৷ গণতন্ত্র হিসেবে জার্মানিতে এই দুইয়ের মেলবন্ধন দেখা যায়৷ আইনের সীমারেখা তো রয়েছেই৷ তবে সংঘাতের ঘটনাও বিরল নয়৷

https://p.dw.com/p/2srGP
Symbolbild - Griechenland nach dem Referendum
ছবি: Getty Images/L. Gouliamaki

কোনো গণতন্ত্রে মত প্রকাশের অধিকার কি সম্পূর্ণ লাগামহীন? সংবাদ মাধ্যমের ক্ষেত্রেও কি সেই স্বাধীনতা পুরোপুরি প্রযোজ্য? স্বাধীনতার সংজ্ঞা নিয়ে যুগে যুগে তর্ক-বিতর্ক চলে আসছে৷ জার্মানিও তার ব্যতিক্রম নয়৷ বিশেষ করে নাৎসি জমানার কালো ইতিহাসের ভার বহন করার প্রেক্ষাপটে সে দেশে বাকস্বাধীনতার একটা বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে৷ তাছাড়া প্রায় ৪০ বছর ধরে কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির স্বৈরাচারী শাসনকালে যা ঘটেছে, তার আঁচ আজও পুনরেকত্রিত জার্মানির উপর পড়ে৷ ফলে একদিকে সরকার ও প্রশাসনের ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরা যেমন সংবাদ মাধ্যমের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, অন্যদিকে নৈতিকতার একটা চাপও গোটা সমাজের উপর কাজ করে৷

পশ্চিমা গণতন্ত্র হিসেবে মত প্রকাশের অধিকার এবং সেইসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা জার্মানিতেও স্বীকৃত ও প্রচলিত, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ সরকার ও জনগণের মাশুলের অর্থে চালিত পাবলিক রেডিও ও টেলিভিশন নেটওয়ার্কেও তাই সরকারের কাজকর্মের কড়া সমালোচনার দৃষ্টান্ত বিরল নয়৷ তবে জার্মান সংবিধানে সেই স্বাধীনতার সীমাও স্থির করে দেওয়া রয়েছে৷ পঞ্চম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মত প্রকাশের অধিকারের আওতায়  শিশু-কিশোরদের সুরক্ষা ও ব্যক্তিগত সম্মান ও মর্যাদার ক্ষতি করা চলবে না৷ এছাড়া কেউই দেশের প্রচলিত আইনের কাঠামোর ঊর্ধ্বে নয়৷ তাই নাৎসিদের জয়গান, ইহুদি নিধনযজ্ঞ বা হলোকস্ট অস্বীকার, ইহুদি বিদ্বেষের প্রকাশ আইনি পথেই মোকাবিলা করা হয়৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাষ্ট্র হিসেবে ফেডারেল জার্মানির বিকাশের উপর মিত্রশক্তিসহ গোটা বিশ্বের কড়া নজর ছিল৷ নাৎসি জমানার পুনরাবৃত্তি রুখতে তাই একাধিক কাঠামোগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ বিশেষ করে শাসকগোষ্ঠীর হাতে লাগামহীন ক্ষমতা এড়াতে বিকেন্দ্রীকরণের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল৷ তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ফেডারেল জার্মানিতে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেওয়া হয়৷ তারপর জার্মান সংবিধানে মত প্রকাশের অধিকার পাকাপাকিভাবে স্থান পায়৷ জার্মানিতে এমনকি রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপও নিষিদ্ধ৷

অর্থাৎ, একদিকে সংববিধান মত প্রকাশের অধিকারের স্বাধীনতা দিলেও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ থেকে বিরত থাকার একটা পরিবেশও সৃষ্টি হয়েছে৷ সংবাদমাধ্যমও সামগ্রিকভাবে সেই অলিখিত আচরণবিধি মেনে চলে৷ এমনকি ট্যাবলয়েড সংবাদপত্রগুলিও সম্পূর্ণ লাগামহীন আচরণ এড়িয়ে চলে৷ যেমন রাজনৈতিক নেতাদের ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার কিছু দিক নিয়ে চর্চা হয় না৷ জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার নিজের কিশোরী কন্যাকে সংবাদ মাধ্যমের স্পটলাইটের আড়ালে রাখতে চেয়েছিলেন৷ সরকারি-বেসরকারি সংবাদ মাধ্যম সেই ইচ্ছার মর্যাদা দিয়েছিল৷

তা সত্ত্বেও আধুনিক জার্মানির ইতিহাসে সংবাদ মাধ্যমের উপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টার বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ বিখ্যাত পত্রিকা ‘ডেয়ার স্পিগেল' এমনই এক ঘটনার শিকার হয়েছিল৷ সে যাত্রায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বাড়তি গুরুত্ব পায়৷ আদালত এর পরেও বার বার সেই অধিকারকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে৷

জার্মানিতে সাংবাদিকদের একটি বিশেষ অধিকার রয়েছে৷ তাঁরা ইচ্ছা করলে তাঁদের তথ্যের সূত্র গোপন রাখতে পারেন৷ ফলে তাঁদের বাড়ি অথবা দফতরে তল্লাশি চালানো বা কোনো কিছু বাজেয়াপ্ত করা চলে না৷ কারণ, একমাত্র সে ক্ষেত্রেই কেউ সাংবাদিকদের আস্থা করে খবর দেবে৷ তদন্তের সময় কর্তৃপক্ষ এই অধিকার চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে৷ প্রতিটি ক্ষেত্রে আদালতকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷

এসবি/এসিবি

 

জার্মানিতে বাক স্বাধীনতার এই চিত্র নিয়ে আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নিচের মন্তব্যের ঘরে৷