1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির পথে সাহসিনী টোঙ্গাম

শীর্ষ বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা১৬ এপ্রিল ২০১৩

অরুণাচল প্রদেশের সাংবাদিক টোঙ্গাম রিনা-কে এক বছরের জন্য জার্মানি নিয়ে যাচ্ছে হামবুর্গার স্টিফটুং নামে একটি জার্মান এনজিও৷ এক বছর আগে বন্দুকবাজের হামলায় মারাত্মক জখম হয়েছিলেন টোঙ্গাম৷

https://p.dw.com/p/18GUv
ছবি: DW

কলকাতার জার্মান কনসুলেট ভবনের দোতলার হলঘরে ডাকা হয়েছিল সাংবাদিক সম্মেলন৷ লম্বা টেবিলের মাথার দিকে, জার্মান কনসাল জেনারেল রাইনার শ্মিডশেনের পাশেই হাসিমুখে বসেছিলেন ছোটখাট চেহারার ওই মহিলা, যাঁকে দেখে আন্দাজ করাও সম্ভব নয় কী অপরিসীম সাহস লুকিয়ে আছে মানুষটির মধ্যে৷

টোঙ্গাম রিনা৷ বয়স ৩৩, পেশায় সাংবাদিক৷ উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রত্যন্ত রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের প্রথম এবং সবথেকে পুরনো ইংরেজি দৈনিক অরুণাচল টাইমস-এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর টোঙ্গাম লেখেন নানা সামাজিক এবং মহিলা সংক্রান্ত ইস্যুতে এবং পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে৷

অরুণাচলে জঙ্গল হাসিল করে, আদিবাসী ভূমিপুত্রদের উচ্ছেদ করে জোর জবরদস্তি নদী-বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার যে বিপুল কর্মযজ্ঞ, যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার এবং একাধিক বিত্তবান, ক্ষমতাবান বাণিজ্যিক গোষ্ঠী, যার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন টোঙ্গাম এবং তাঁর কাগজের আরও একাধিক সাংবাদিক৷ এছাড়া অরুণাচলে জোর করে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার মতো একতরফা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত, বা নাগা-কাচিন গেরিলাদের জঙ্গিপনার বিরোধিতা করতেও ভয় পান না টোঙ্গাম৷

Tongam Rina
জার্মান কনসাল জেনারেল রাইনার শ্মিডশেনের সঙ্গে টোঙ্গাম রিনাছবি: DW

সেই সাহসেরই মাশুল সম্ভবত দিতে হয়েছে টোঙ্গামকে৷ গত বছর জুলাইয়ে, তাঁর কাগজের অফিসের বাইরে দু'জন অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকবাজ তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে৷ একটি গুলি তাঁর পেট ফুঁড়ে মেরুদণ্ডে গিয়ে বিঁধে যায়৷ একাধিক জটিল অস্ত্রোপচারের পর বিপন্মুক্ত হলেও একটা সময় এমন আশঙ্কা ছিল যে জীবনে হয়ত আর কোনোদিন হাঁটতেই পারবেন না টোঙ্গাম৷ কিন্তু দমিয়ে রাখা যায়নি তাঁর মনোবল, কেড়ে নেওয়া যায়নি তাঁর সাহস৷ আজ টোঙ্গাম হাসিমুখে বলেন, এখনও হাঁটতে একটু অসুবিধা আছে, কিন্তু আরও কিছুদিন ফিজিওথেরাপি করালে নিশ্চয়ই ঠিক হয়ে যাবে৷ তবে ভুল করে একটু বেশি খেয়ে ফেললে হজম করতে অসুবিধে হয়, কারণ, গুলি লেগে আমার অন্ত্রের কিছুটা তো নষ্টই হয়ে গিয়েছে৷

জার্মান কনসাল জেনারেল রাইনার শ্মিডশেন জানালেন, সংবাদমাধ্যমে টোঙ্গান রিনার ওপর হামলার ঘটনা জানার পর হামবুর্গার স্টিফটুং স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে কলকাতার জার্মান কনসুলেটে ই-মেল মারফৎ জানতে চেয়েছিল, ঘটনাটি কতদূর সত্যি৷ খোঁজ নিয়ে তাদের বিস্তারিত তথ্য দেন শ্মিডশেন৷ তার পর ওই জার্মান এনজিও সংস্থাটিই উদ্যোগী হয়ে টোঙ্গামকে এক বছরের জন্য জার্মানি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে৷ বিমানভাড়া থেকে শুরু করে জার্মানিতে থাকা এবং ঘোরার সমস্ত খরচ দেবে হামবুর্গার স্টিফটুং৷ আগামী এক বছরে মিউনিখ, বার্লিন, ভাইমার-সহ একাধিক শহর ঘুরবেন টোঙ্গাম, ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন নিজের অভিজ্ঞতা এবং দর্শন৷

ইউরোপে থাকাকালীন কি অরুণাচল প্রদেশে উন্নয়ন বনাম পরিবেশ সুরক্ষার দ্বন্দ্বের জরুরি বিষয়টির দিকেও আন্তর্জাতিক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইবেন টোঙ্গাম৷ ডয়চে ভেলের এই প্রশ্নের উত্তরে টোঙ্গাম বললেন, অবশ্যই৷ প্রথমত, তিনি প্রচুর লিখতে চান এই পরিবেশ সংকটের নানা দিক নিয়ে৷ জার্মানিতে বসে এবং দেশে ফিরেও তিনি জারি রাখবেন পরিবেশ সুরক্ষার জন্য তাঁর লড়াই৷

টোঙ্গামের পাশে বসে কিছুটা মজার ছলেই জার্মান কনসাল জেনারেল রাইনার শ্মিডশেন বললেন, এমনও হতে পারে যে টোঙ্গাম জার্মানিতেই রয়ে গেলেন৷ কারণ, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পশ্চিমী দেশগুলোর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগ্রহী হলেও, জার্মানিতে কিন্তু একজনও অ্যাক্রেডিটেড বা নথিভুক্ত ভারতীয় সাংবাদিক নেই যিনি জার্মানির খবর ভারতে পাঠান৷ কে বলতে পারে, টোঙ্গাম রিনাই হবেন জার্মানিতে কর্মরত সেই প্রথম ভারতীয় সাংবাদিক-প্রতিনিধি৷