1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জিয়ার বাতিল ফরমানে আওয়ামী দুর্নীতি

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সরকারে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নে আর কার্যাদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে৷এই দুটি শাখায় দুর্নীতি না থাকলে সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি একেবারে ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব৷

https://p.dw.com/p/3PKtf
Symbolbild Bangladesch Korruption Banknoten Geld Bestechung
ছবি: DW

জিয়াউর রহমানেরসামরিক ফরমান সর্বোচ্চ আদালতে নিষিদ্ধ হলেও তার প্রবর্তিত পন্থাতেই নিয়োগে দুর্নীতির সুযোগ রাখা হয়েছে৷  
খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক মহাপরিচালক ও সাবেক সিনিয়র জেলা জজ মঈদুল ইসলাম ৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক সমকালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলছেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনাগুলোয় দুদকের অনুসন্ধান-তদন্তে পাওয়া গেছে বেপরোয়া আচরণের ভয়াবহ চিত্র৷ পছন্দের প্রার্থীকে তুলে আনতে নম্বর বাড়াতে বেহুঁশ হয়ে ১০ মানের প্রশ্নের উত্তরে দেওয়া হয়েছে ১২ নম্বর; কেউ কেউ আবার আরেক কাঠি ওপরে সাদা খাতাতেই নম্বর দিয়ে রেখেছে যেখানে আউটসোর্সিং করে (চুক্তিভিত্তিক) অন্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পরীক্ষা নিয়েছে, সেখানেও কম্পিউটারে করা হয়েছে কারসাজি, জালিয়াতি৷অফিস-আদালতগুলোর বাজেটের কোটি কোটি টাকা ব্যয় তো আছেই৷’’


পাঠক লক্ষ্য করুন, ১০-এর মধ্যে ১২ দেওয়া বা সাদা খাতাতে নম্বর দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷ তৃতীয় পক্ষ বা আউটসোর্সিং করে যে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে সেখানে কম্পিউটারে কারসাজি করা হয়েছে, জালিয়াতি করা হয়েছে৷ 
আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ, ইন্টারেস্টিং তাই না? মজার বিষয় হলো, দুর্নীতি দমন কমিশনও নিয়োগের ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং পদ্ধতিই প্রয়োগ করে থাকে৷ সহকারী পরিচালক বা পরিদর্শক পদে যারা নিয়াগ পান বা পেয়ে থাকেন, তাদের ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ করার একটি সুযোগ দুদক কর্তৃপক্ষের থাকে৷ কিন্তু কেন এই তৃতীয় প্রতিষ্ঠান বা আউটসোর্সিং, কেন পিএসসি নয়? 
১৯৭৭ সালের ৫৭ নম্বর অধ্যাদেশে প্রতিষ্ঠিত পিএসসির দায়িত্ব সংবিধানের ১৪০(১)(ক) অনুচ্ছেদে দেওয়া 'প্রজাতন্ত্রের কর্ম', অর্থাৎ পুরোপুরি সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়াতেই সীমাবদদ্ধ৷ দুদকের মতো নির্দিষ্ট আইনে প্রতিষ্ঠিত সরকারি আর সব কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব ১৪০(১)(গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেওয়ার আর ব্যবস্থা করা হয়নি তাতে৷

তাই এসব চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা পিএসসির মাধ্যমে নেওয়া যাচ্ছে না৷
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনে করা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হলে এবং সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে চতুর্থ তফসিল থেকে ওই সম্পর্কিত ৩ক ও ১৮ অনুচ্ছেদ বাদ পড়লে ওই সামরিককালের অন্যান্য অধ্যাদেশের সঙ্গে এই ৫৭ নম্বর অধ্যাদেশও কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে৷ কাজেই এখানে ১৯৭৩ সালের ২৪ নম্বর পিও পুনর্বহাল হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, যাতে দুটি পিএসসির প্রথমটির মাধ্যমে বেসামরিক সব গেজেটেড সরকারি পদের এবং সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি সব স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, কর্পোরেশনসহ সব সংবিধিবদ্ধ সংস্থার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হবে এবং দ্বিতীয় পিএসসির দায়িত্বে থাকবে এমএলএসএস পদ ছাড়া বাকি সব নন-গেজেটেড সরকারি পদের এবং সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি সব স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, কর্পোরেশনসহ সংবিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোর তৃতীয় শ্রেণির পদের নিয়োগের সুপারিশ করা৷
কিন্তু তা না করে বরং ২০১৩ সালের এক নম্বর অধ্যাদেশ ও পরে ছয় নম্বর আইন দিয়ে ১৯৭৭ সালের ৫৭ নম্বর অধ্যাদেশটিই কার্যকর করে রাখা হয়েছে; যেখানে সংবিধিবদ্ধ সরকারি সংস্থাগুলোর চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা পিএসসির আওতা থেকে একেবারেই বাদ, বাদ বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের সরকারি অফিসগুলোর যেসব পদের নিয়োগ ক্ষমতা ওইসব অফিসপ্রধানের হাতে সেসব পদও৷ 
পাঠক লক্ষ্য করছেন নিশ্চয়ই, জিয়াউর রহমানের সামরিক ফরমান বাতিল করা হলেও যত্ন করে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে নিয়োগের ক্ষেত্রে চালু করা তার পদ্ধতিকে, যেখানে জেনে-বুঝে সুযোগ রাখা হচ্ছে নিয়োগ দুর্নীতির বা অসমতার৷ 
নিয়োগে অসমতার সুযোগ নিয়ে একজন রাজনৈতিক কর্মী আমাকে বলছেন, দল করি সঙ্গে এই আশাও করি যে, দল আমাকে মূল্যায়ন করবে৷ আর নিজেদের কর্মীদের মূল্যায়নের ঘোষণা সরকারের গুরুত্বপূর্ণদের কাছ থেকে আমরা প্রকাশ্যে পাই৷ 
আমাদের প্রস্তাব, দলের নেতা-কর্মীদের আপনারা অবশ্যই মূল্যায়ন করুন, কিন্তু সেটা নিজেদের দলের সম্পদ দিয়েই, রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে নয়৷ এই রাষ্ট্র যেমন যারা আপনাদের জন্য ত্যাগ করেছে তাদের, তেমনি যারা আপনাদের সমর্থন করে না তাদেরও৷

Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন, প্রধান, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগছবি: DW/P. Böll
Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত।
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য