1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জোড়া কাণ্ডে ভোটের সময় অস্বস্তিতে জোড়াফুল

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২০ এপ্রিল ২০১৯

লোকসভা নির্বাচনের মুখে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস দুটি ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে৷ একটি চলচ্চিত্র ঘিরে বিতর্কে রাজ্যকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে আদালত৷ বিমানবন্দরে ‘সোনা কাণ্ডে' নোটিশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারকে৷

https://p.dw.com/p/3H5bB
Prämierministerin Mamta Banerjee besucht das Dorf Nandigram, West Bengalen, Indien
ছবি: DW

‘ভবিষ্যতের ভূত' ঘিরে অস্বস্তি

লোকসভা ভোটের প্রচার এখন তুঙ্গে৷ ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে৷ নানা বিষয়ে রাজনৈতিক তরজার মধ্যে দুটি বিতর্ক তৃণমূলের মাথাব্যথা বাড়িয়েছে৷ প্রথম বিষয়টি একটি চলচ্চিত্রের প্রদর্শন ঘিরে৷ অনীক দত্ত পরিচালিত ‘ভবিষ্যতের ভূত' ছবির প্রদর্শন কলকাতায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৷ হল মালিকরা জানান, পুলিশের নির্দেশে ছবির প্রদর্শন বন্ধ করে দিতে হয়েছে৷ পরে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র ভবিষ্যতে্র ভূত প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করতে হবে, যাতে দর্শক বা প্রেক্ষাগৃহের ক্ষতি না হয়৷ গত ১১ এপ্রিল আর এক নির্দেশে সর্বোচ্চ আদালত বলে, এ জন্য ছবির প্রযোজক ও হল মালিকদের ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে৷ পরিচালক অনীক দত্তের সঙ্গে একমত হয়ে আদালতও বলেছে, যে ছবিকে সেন্সর বোর্ড অনুমোদন দিয়েছে, তার প্রদর্শন বন্ধ করা বাক্ স্বাধীনতা হরণ ছাড়া কিছু নয়৷

শিল্প জগতের একটা বড় অংশও এই ভাবনার সঙ্গে সহমত৷ গায়ক, লেখক ও অভিনেতা পল্লব কীর্তনিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সব শাসকই চায় নিঃশর্ত আনুগত্য৷ তাদের বিরুদ্ধে শিল্প, সংস্কৃতি জগতে কিছু হলেই তা বন্ধ করে দেওয়াটাই রেওয়াজ৷ পশ্চিমবঙ্গের সুনাম ছিল, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এখানেও তাই হচ্ছে৷ আমি নিজে ভুক্তভোগী৷ আমার গান দিয়ে শাসকদলের বিরোধিতা করেছি, তাই বাম আমলেও যেমন আমার অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তৃণমূল আমলেও তা করা হয়েছে৷''

‘সব শাসকই চায় নিঃশর্ত আনুগত্য’

দায় এড়াচ্ছে তৃণমূল

তৃণমূলের তরফে কেউই এ কথা স্বীকার করতে চাননি যে, সরকারের প্রত্যক্ষ মদতেই পুলিশ বিভিন্ন হলে ছবিটির প্রদর্শনে বাধা দিয়েছে৷ তৃণমূল নেতা নির্বেদ রায় বলেন, ‘‘বন্ধ করার জন্য তৃণমূল সরকারের কোনো সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রচার হয়নি৷ যারা বন্ধ করেছে, তারা কি সরকারের নাম বলেছে?'' তাহলে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা করল কেন? নির্বেদ বলেন, ‘‘এর উত্তর সুপ্রিম কোর্টই ভালো বলতে পারবে৷ তবে রাজ্য সরকার বন্ধ করেছে, এটা সুপ্রিম কোর্ট হয়তো বলতে চায়নি৷ কোনো প্রমাণ নেই৷ রাজ্য সরকার হয়তো প্রোটেকশন দিতে পারেনি বলে এই জরিমানার ব্যবস্থা৷'' লোকসভা ভোটের বাজারে ‘ভবিষ্যতের ভূত' ছবির প্রদর্শন বন্ধ নিয়ে তৃণমূল ধাক্কা সামলে ওঠার জন্য সবরকম দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে৷ কিন্তু বিরোধীরা পিছু ছাড়ছে না৷ 

লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুরের বামপ্রার্থী আইনজীবি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এ বিষয়ে বলেন, ‘‘মমতার সরকার সবসময়েই ধাক্কা খাচ্ছে৷ ‘ভবিষ্যতের ভূত' উনি বন্ধ করতে চেয়েছিলেন লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই৷ সুপ্রিম কোর্ট একদমই ঠিক রায় দিয়েছে৷ তবে আমাদের দাবি, এই জরিমানার টাকাটা রাজ্যের মানুষের পকেট থেকে নেওয়া হবে কেন? মুখ্যমন্ত্রী আর ওঁর চিফ সেক্রেটারির পকেট থেকে এই টাকা নেওয়া হোক৷'' পল্লব কীর্তনিয়ার মতে, ‘‘সরকার খুবই পরিকল্পিতভাবে এটা বন্ধ করেছে, যার জন্য কোনো প্রমাণ রাখেনি৷ কারা বন্ধ করেছে, সেটার কোনো হদিশই নেই৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এটা মানেনি৷ পরিষ্কার বলেছে, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বন্ধ করেছে৷ তাই সরকারের কাছে এটা তো একটা ধাক্কা৷''

সোনা নিয়ে ঝামেলা

দ্বিতীয় বিতর্কে সরাসরি যুক্ত তৃণমূল নেতৃত্ব৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের যুব সভাপতি৷ তিনি এবারও লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী৷ অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা ১৬ মার্চ থাইল্যান্ড থেকে ফেরার সময় সোনাসহ কলকাতা বিমানবন্দরে শুল্ক বিভাগের আধিকারিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন৷ অভিযোগ, তিনি অনুমোদিত পরিমাণের থেকে বেশি সোনা সঙ্গে এনেছিলেন৷ সেই সময় রাজ্য পুলিশ রুজিরাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়৷ এ ব্যাপারে কাস্টমস ও রুজিরা উভয়ই পুলিশে অভিযোগ জানান৷ এই খবর প্রকাশ্যে আসে অভিষেকের সাংবাদিক বৈঠকের সূত্রে৷ নতুন বিতর্ক তৈরি হয় ভোটের মরসুমে৷ বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এ নিয়ে ট্যুইট করেন, তিনি আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের দাবি তোলেন৷ তাঁর অভিযোগ, রাজ্য পুলিশ ও কাস্টমস এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলেও ব্যবস্থা নেয়নি৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বোঝাপড়ায় বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষই হাত গুটিয়ে রেখেছে৷ পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপি আঁতাত করেছে বলে বামেরা অভিযোগ তুলছে৷ সেই পরিপ্রেক্ষিতেই সোনা-কাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সুজন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি বলেছিলাম, বালিপাচার, কয়লাপাচারের মতো এবার আন্তর্জাতিক সোনা পাচারে তৃণমূল সরকার নাম তুললো৷ আমার এই কথার পরিপ্রেক্ষিতেই মামলার হুমকি আসে৷'' 

বাস্তবিকই বাম নেতার ট্যুইটের পর তাঁকে মানহানির মামলার হুমকি দেওয়া হয়৷ সুজন এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একজন বিদেশে গিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে এফআইআর আর জিডি হবে কেন? সবাই বোঝে৷ আমার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি ছিল, কিন্তু সে মামলা আজও হয়নি৷ কারণ, মামলা করতে গেলে আসল সত্য যদি বেরিয়ে আসে, সেই ভয়টা তো আছে৷''

‘মামলা করতে গেলে আসল সত্য যদি বেরিয়ে আসে’

সুপ্রিম কোর্টে গড়িয়েছে সোনা-কাণ্ডও৷ সেখানে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর আইনজীবী বলেছেন, কলকাতার প্রাক্তন নগরপাল রাজীব কুমারের ঘটনার মতো সোনা সংক্রান্ত তদন্তেও বাধা দিচ্ছে রাজ্য সরকার৷ পশ্চিমবঙ্গে সাংবিধানিক সঙ্কটের পরিস্থিতি চলছে৷ এ বিষয়ে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাধারন মানুষ এয়ারপোর্টে কাস্টমসের মুখে পড়লে, নিশ্চয়ই রাজ্য পুলিশ ছুটে যাবেন না৷ এঁদের ক্ষেত্রে যখন সেটা হচ্ছে, তার মানে এতে দুর্নীতি আছে৷ প্রত্যেক মুহূর্তে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করতে চাইছে এঁরা৷ কেন্দ্রে মোদী ধর্ম নিয়ে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি করছে৷ রাজ্যে মমতা একইরকম পরিস্থিতি তৈরি করছে৷ যৌথভাবে এঁরা এটা করছে, রাজীব কুমার থেকে শুরু করে এয়ারপোর্টে সোনা কাণ্ড সবটাই এর মধ্যে পড়ছে৷''                                                                    

সরকারের ধাক্কা?

চলচ্চিত্রের মতো এই মামলাতেও আদালতে ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার৷ বিষয়টিকে ‘খুব গুরুতর' আখ্যা দিয়ে গত শুক্রবার রাজ্যকে নোটিস পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ ভারতের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ মন্তব্য করে, বিষয়টি খুব গুরুতর৷ তবে তৃণমূল নেতা নির্বেদ রায় মনে করেন, ‘‘এটা দলের কোনো বিষয়ই নয়৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী দলের কোনো সদস্য নয় যে, দল তাঁর কাজের জবাবদিহি করবে৷ অভিষেক যে প্রেস বৈঠক করেন, সেটা দলের বাইরে গিয়ে তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত৷''  নির্বাচনি মরশুমে যে এই দুটো কাণ্ড ভোটের তাপমাত্রা বাড়িয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই৷ একদিকে নির্বেদ বলেন, ‘‘অন্য কিছু না পেয়ে এই দুটো কাণ্ডই সংবাদমাধ্যমগুলো প্রচার করছে৷ তাতে দলের কিছু এসে যায় না৷'' অন্যদিকে সুজন বলেন, ‘‘এই দুটো কাণ্ড শুধু নয়, তোলাবাজি, বিভাজন, লুটপাট সব কিছুতেই তৃণমূলের স্বরূপ মানুষ বুঝতে পেরেছে৷ তাই তৃণমূল মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চায়৷ আপাতত ভোট ঠিকঠাক দিতে দিলেই সেটা বোঝা যাবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য