1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টক শো কি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে?

গোলাম মোর্তোজা
২২ অক্টোবর ২০১৮

সাধারণভাবে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, বাংলাদেশের মানুষ খুব রাজনীতি সচেতন৷ সারাক্ষণ তাঁরা রাজনীতি নিয়ে ভাবেন৷ কিন্তু সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা বলে মানুষ ‘রাজনীতি সচেতন’, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না৷

https://p.dw.com/p/36tDa
ছবি: Jamuna tv

তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মানুষের চেয়ে পৃথিবীর আর কোনো দেশের মানুষ রাজনীতি নিয়ে এত ভাবেন না৷

বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিক জীবনযাপন করে৷ মোট ভোটারের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ দলের প্রতি শতভাগ অনুগত৷ তাদের নিজস্ব কোনো সচেতনতা বা চেতনাবোধ নেই৷ দল যত খারাপ মানুষকেই প্রার্থী করুক না কেন, তাকেই ভোট দেয়৷

রাজনীতি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করা বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় শখ৷ এমন রাজনৈতিক বাস্তবতাতেই বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে টেলিভিশনের টক শো৷ পরিস্থিতিটা বেশ চিত্তাকর্ষক যে, মাঝরাতে বিশ-পঁচিশটি টেলিভিশনে একযোগে টক শো শুরু হয়৷ এবং প্রতিটি টক শো'র বিষয় প্রায় অভিন্ন, সমসাময়িক রাজনীতি৷ কিন্তু এসব টক শো কি জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে, পারলে কতটা পারছে? 

১. টক শো কতটা জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে, তার চেয়ে জরুরি প্রশ্ন, টক শো কেন এত জনপ্রিয় হয়ে উঠল? বাংলাদেশের মানুষ কখনো কার্যকর সংসদ দেখেনি৷ সংসদে সরকারি দল, বিরোধী দলের তর্ক-বিতর্কের আভাস কখনো কখনো পেয়েছেন৷ তবে তা ছিল অসম্পূর্ণ, মানুষের প্রত্যাশা পূরণের মতো আলোচনা কখনো সংসদে হয়নি৷ আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা প্রকাশ্যে আলোচনায় বসেন না৷ সেই নেতারা যখন টেলিভিশনের টক শোতে এক টেবিলে বসে আলোচনা বা তর্ক-বিতর্ক করতে শুরু করলেন, তা মানুষের আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হলো৷ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করলো টক শো৷ বাড়তে থাকলো টক শোর সংখ্যা, কমতে থাকলো টক শোর গুণগত মান৷

২. গুণগত মানের অবনতির সঙ্গে জনপ্রত্যাশা পূরণের বিষয়টি সম্পৃক্ত৷ মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে একথা বলে রাখা দরকার যে, সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও বেশ কয়েকজন উপস্থাপক এবং আলোচক আছেন, যাঁরা খুবই ভালো মানসম্পন্ন৷ এর বাইরে টক শো'র সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মানহীন উপস্থাপক ও আলোচকের সংখ্যা৷ উপস্থাপকের চেয়েও এক্ষেত্রে বেশি দায় আলোচকদের৷ তার চেয়েও বেশি দায় আয়োজক চ্যানেল কর্তৃপক্ষের৷

কোনো কোনো চ্যানেল কর্তৃপক্ষ সত্যের বিপরীতে অসত্যকে সত্যে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়ে টক শো আয়োজন করতে শুরু করেন৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন আলোচকদের টক শোতে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যাঁরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানা-বোঝা মানুষ নন৷ তাঁরা এসে রাজনৈতিক দলের বক্তব্য নিজের মতো করে বলতে শুরু করেন, যা হয়ত সত্য নয়৷ যেমন, একটি নির্বাচনে দেখা গেল মানুষ ভোট দিতে গেল না৷ পত্রিকায় সেই ছবি, সংবাদ প্রকাশিত হলো, টেলিভিশনে দেখানো হলো৷ যে টেলিভিশনের সংবাদে দেখানো হলো মানুষ ভোট দিতে যায়নি, দেখানো হলো অনিয়মের দৃশ্য, সেই টেলিভিশনের টক শোতেই আলোচকরা বললেন, ‘নির্বাচন খুব ভালো হয়েছে, দু'একটি কেন্দ্র ছাড়া অনিয়ম হয়নি, ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে' ইত্যাদি৷ টক শো জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার, এটি একটি কারণ৷

৩. টক শোর জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার বা জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার অন্যতম প্রধান কারণ, সমালোচনা সহ্য না করার মানসিকতা৷ জনপ্রত্যাশা থাকে, সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোচনা বা নির্মোহ বিশ্লেষণ করা হোক, তুলে ধরা হোক প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র, যা সরকার বলতে দিতে চায় না৷ সরাসরি একথা বলে দেয় না যে, এসব কথা বলা যাবে না৷ এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা হয় যার মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, কী বলা যাবে, কী বলা যাবে না৷ কঠোর নতুন আইন, মামলা তার দৃশ্যমান প্রকাশ৷ কোনো একজন সম্পাদকের নামে ৮০টিরও অধিক মামলা দেওয়া হলে, অন্যরা যে বার্তা পেয়ে যায় তার নাম সেলফ সেন্সরশিপ, যার উপস্থিতি বাংলাদেশে এখন প্রবলভাবে আছে৷  

শহীদুল আলমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা

৫৭ ধারা বাতিলের নামে তা আরও কঠোরভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রতিস্থাপন, ভয়ের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেলফ সেন্সরশিপ আরোপের পরিবেশ তৈরি করা৷ একজন শহিদুল আলমের প্রতি কঠোর মনোভাব, কারাগারে রাখা, ভয়ের সংস্কৃতি বিস্তৃত করে দেওয়ারই অংশ৷ 

৪. সম্প্রচার আইন ২০১৮ যেভাবে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে সেভাবেই যদি পাস হয়, তাহলে টক শোর জনপ্রিয়তা বা জনআস্থা বলে আদৌ হয়ত কিছু থাকবে না৷ ‘টক শোতে বিভ্রান্তি ছড়ালে শাস্তি' ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কথা বললে জেল-জরিমানা'! কোনটা বিভ্রান্তি কোনটা চেতনা বিরোধী, কে মূল্যায়ন করবেন? সরকার ঠিক করে দিবে কোনটা সত্য, কোনটা অসত্য৷ পৃথিবীতে বহু নজির আছে, সরকারিভাষ্য সাধারণত সত্য হয় না৷ নির্মোহ বিশ্লেষণ করলে, বিভ্রান্তি মূলত সরকারিভাষ্যেই ছড়ায়৷ সক্রেটিসকে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপরাধেই হত্যা করা হয়েছিল৷ পরে প্রমাণ হয়েছে যে, সক্রেটিস বিভ্রান্তি ছড়ান নি, সত্য বলেছেন৷ তারপর বহু বছর কেটে গেছে, সরকারগুলোর আচরণে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি৷

Bangladesh Journalist Golam Mortoza
গোলাম মোর্তোজা, সম্পাদক এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্বছবি: Golam Mortoza

বাংলাদেশের নতুন এসব আইনে যে কাউকে যে-কোনো বক্তব্যের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা যাবে

৫. দেশের রাজনীতি যদি সুস্থ ধারায় না চলে, রাজনীতি যদি জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে না পারে, আলাদা করে টক শো তা পারবে না৷ নতুন আইনগুলো যে রাজনীতির ইঙ্গিত বহন করছে, তাতে কোনো ক্ষেত্রেই জনপ্রত্যাশা গুরুত্ব পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে বলে মনে হয় না৷

তবে শত প্রতিকূলতার মাঝেও কোনো কোনো চ্যানেল এখনও জনআস্থা বিবেচনায় রেখে, টক শো আয়োজনের চেষ্টা করছে৷ কতদিন তা পারবে, দেখার বিষয় সেটাই৷ 

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান