1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রাম্প বনাম ম্যার্কেল

১৩ মার্চ ২০১৭

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের কখনো সাক্ষাৎ ঘটেনি৷ এবার যখন ঘটবে, তখন ম্যার্কেল সম্পর্কে ট্রাম্পের নানা সাম্প্রতিক মন্তব্য কোনো আড়ষ্টতা সৃষ্টি করবে না, বলে আশা করা যায়৷

https://p.dw.com/p/2Z5Uv
Angela Merkel und Donald Trump
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler/R. Sachs

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের কখনো সাক্ষাৎ ঘটেনি৷ এবার যখন ঘটবে, তখন ম্যার্কেল সম্পর্কে ট্রাম্পের নানা সাম্প্রতিক মন্তব্য কোনো আড়ষ্টতা সৃষ্টি করবে না, বলে আশা করা যায়৷

কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জার্মান ও মার্কিন রাজনৈতিক নেতাদের মতবিরোধ নতুন কিছু নয়৷

‘‘আমার নেতৃত্বে এই দেশ কোনো অ্যাডভেঞ্চারে লিপ্ত হবে না'', ২০০২ সালের গ্রীষ্মে বলেছিলেন সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার৷ তার পরের বছরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের আমলে ইরাকে মার্কিন অভিযান শুরু হয়৷ বুশ নাকি শ্র্যোডারের মন্তব্যে বিশেষভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন এবং দু'জনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক আর কোনোদিনই স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি৷

২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিউনিখের নিরাপত্তা সম্মেলনে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়শকা ফিশার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রাম্সফেল্ডকে বলেন, ‘‘আমার এখনও প্রত্যয় হচ্ছে না'' – যার এক মাস পরেই ইরাকে মার্কিন অভিযান শুরু হয়৷ সারা বিশ্ব থেকে আগত বিশিষ্ট অতিথিদের সামনে ফিশারের এই মন্তব্য চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে, বিশেষ করে জার্মানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যখন প্রথাগতভাবে ঘনিষ্ঠ এবং – অন্তত প্রকাশ্যে – সামঞ্জস্যপূর্ণ৷

‘‘লিবিয়া, কিউবা ও জার্মানি আভাস দিয়েছে যে, তারা কোনোভাবে সাহায্য করবে না'', রাম্সফেল্ডকে প্রত্যুত্তরে বলতে শোনা যায়৷ পেন্টাগন প্রধান যে জার্মানিকে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রথাগত বৈরির পর্যায়ে ফেলছেন, তাতে বার্লিন বিশেষ সন্তুষ্ট হয়নি৷

‘‘জার্মানির বারোটা বাজাচ্ছেন''

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনি প্রচার অভিযানে ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ বিরূপ মন্তব্য করেছেন, তা সত্যিই অভূতপূর্ব৷

ম্যার্কেল যে দশ লক্ষের বেশি উদ্বাস্তুকে জার্মানিতে ঢুকতে দিয়েছেন, সে বিষয়ে ট্রাম্প ২০১৫ সালের একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমি চিরকালই ভেবেছিলাম, ম্যার্কেল একজন মহান নেতা৷ কিন্তু তিনি জার্মানির যে দশা করছেন, তা স্রেফ পাগলামো৷ জার্মানিতে এবার দাঙ্গা হবে৷''

দু'মাস পরে টাইম ম্যাগাজিন যখন ম্যার্কেলকে ‘পার্সন অফ দ্য ইয়ার' নির্বাচন করে, তখন ট্রাম্প টুইট করেন...

‘‘আমি বলেছিলাম, আমি বিগ ফেবারিট হওয়া সত্ত্বেও টাইম ম্যাগাজিন কোনোদিন আমাকে মনোনীত করবে না৷ ওরা সেই ব্যক্তিটিকে মনোনীত করবে, যিনি জার্মানির বারোটা বাজাচ্ছেন'', টুইট করেন ট্রাম্প৷

২০১৫ সালের বর্ষশেষে কোলন রেলওয়ে স্টেশনের সামনে শত শত মহিলার যৌন হয়রানির ঘটনা সম্পর্কে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে আইওয়ার একটি নির্বাচনি প্রচার সভায় ট্রাম্পের মন্তব্য: ‘‘জার্মান জনগণ এবার দাঙ্গা করবে৷ জার্মান জনগণ এই মহিলাকে (আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে) ক্ষমতাচ্যুত করবে৷ আমি জানি না, উনি মাথামুণ্ডু কী ভাবছেন৷''

হাওয়া বদল

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ হঠাৎ ভোল পাল্টে ফেলেন ট্রাম্প, তাঁর মুখে ম্যার্কেলের প্রভূত প্রশংসা শোনা যায় – যদিও একেবারে নিঃশর্ত প্রশংসা নয়৷

‘‘হ্যাঁ, আমি সত্যিই মনে করি যে, ম্যার্কেল বাস্তবিক একজন মহান বিশ্বনেতা'', একটি সাক্ষাৎকারে বলেন ট্রাম্প৷ ‘‘কিন্তু আমি খুবই হতাশ হয়েছিলাম যখন তিনি – গোটা অভিবাসন প্রসঙ্গটি একটি বড় সমস্যা, বলে আমি মনে করি, গত দেড় বছরে উনি যা করেছেন, তা যখন দেখি৷ আমি চিরকালই ম্যার্কেলের তরফে ছিলাম৷ (উনি) সত্যিই দারুণ, বলে আমি ভাবতাম৷ কিন্তু দেড় বছর আগে উনি একটি ট্র্যাজিক ভুল করেন, বলে আমার ধারণা৷''

ম্যার্কেল ঠান্ডা, কিন্তু নীরব নন

ম্যার্কেল তাঁর যা বক্তব্য, সেটা ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার আগে প্রকাশ্যে ব্যক্ত করেননি৷ কিন্তু ট্রাম্পের জয়ের পর তিনি অভিনন্দন জানিয়ে যে বার্তা পাঠান, তাতে ম্যার্কেল দুই দেশের যৌথ মূল্যবোধের ভিত্তিতে সহযোগিতার আমন্ত্রণ জানান – সঙ্গে সেই মূল্যবোধের তালিকাও জুড়ে দেন: ‘‘গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, আইনের প্রতি সম্মান এবং বংশ, গাত্রবর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ, যৌন প্রবণতা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিচারে সব মানুষের মর্যাদার প্রতি সম্মান৷''

এ যেন ম্যার্কেল ট্রাম্পকে পশ্চিমি সভ্যতার ভিত্তি যে মূল্যবোধ, সে সম্পর্কে একটি বিশেষ পাঠ দিচ্ছেন – যা এক মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি একজন জার্মান চ্যান্সেলরের মন্তব্য হিসেবে প্রায় ভর্ৎসনার সমতুল৷

প্রধানত মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র যাত্রার উপর ট্রাম্প যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, তার বিরুদ্ধেও ম্যার্কেল জোরালো বক্তব্য রেখেছেন: ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও চূড়ান্ত সংগ্রাম কয়েকটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সাধারণভাবে সন্দেহ করার কারণ হতে পারে না, এক্ষেত্রে মুসলমান ধর্মাবলম্বী অথবা বিশেষ বিশেষ দেশের নাগরিকদের (প্রতি সন্দেহ)'', গত জানুয়ারি মাসে বার্লিনে মন্তব্য করেন ম্যার্কেল৷

দুই নেতার এই পরোক্ষ বার্তালাপের পরিপ্রেক্ষিতে উভয়ের প্রত্যক্ষ সাক্ষাতে যে কি ঘটবে, তা বলা শক্ত৷ তবে এক মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নাকি রসিকতা করে বলেছেন যে, ট্রাম্প খারাপ ব্যবহার না করলে আর সাক্ষাৎটা শেষমেষ বচসায় পর্যবসিত না হলেই নাকি তিনি খুশি!

মিশায়েল ক্নিগে/এসি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য