1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে মোদী

২৪ আগস্ট ২০২০

ট্রাম্পের ভোট প্রচারের বিজ্ঞাপনে নরেন্দ্র মোদীর ফুটেজ। ভারতীয়-মার্কিনদের ভোট পেতে মরিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

https://p.dw.com/p/3hNtW
ছবি: AFP/P. Singh

হাতে সময় মাত্র দুই মাস। নভেম্বর নির্বাচনের আগে অ্যামেরিকার দুই রাজনৈতিক শিবির ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান দুই পক্ষেরই পাখির চোখ ভারতীয়-মার্কিন ভোটাররা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোট পূর্ববর্তী সমীক্ষায় বোঝা যাচ্ছে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। ফলে প্রায় ২৫ লাখ ভারতীয়-মার্কিনের ভোট নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যে এই ভোট ব্যাঙ্ককে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন, রোববার তা আরও একবার প্রমাণিত হলো। রিপাবলিকান প্রার্থীর প্রথম নির্বাচনী টেলিভিশন বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে রোববার। তার একটা বড় অংশ জুড়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে অ্যামেরিকার হিউজটনে বিশাল সমাবেশ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। ২০১৯ সালের নির্বাচনের বেশ কিছুদিন আগে অ্যামেরিকায় তাঁর জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে গিয়েছিলেন মোদী। সেখানে প্রায় ৫০ হাজার ভারতীয়-মার্কিনের উপস্থিতিতে 'হাউডি মোদী' শো হয়েছিল। যেখানে উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পও। প্রকাশ্যে মোদী-ট্রাম্পের গলায় গলায় বন্ধুত্বের সেখানেই সূচনা। মোদী সেই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, যে কোনও কথা বলতে গেলেই প্রথম বাক্যে ট্রাম্পের নাম চলে আসে। আর মোদীর ভূয়সি প্রশংসা করেছিলেন ট্রাম্প। নিজেদের এবং দুই দেশের বন্ধুত্বের কথা বলেছিলেন। ট্রাম্পের যে নির্বাচনী বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে, তার প্রথম ফ্রেমেই হিউস্টনের সেই বিশাল অনুষ্ঠানের ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে মোদী এবং ট্রাম্প হাত ধরাধরি করে হাঁটছেন।

এখানেই শেষ নয়। ট্রাম্পের নির্বাচনী বিজ্ঞাপনে মোদীর বক্তৃতার আরও অংশ আছে। নির্বাচনের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট শেষ বিদেশ সফর করেছেন ভারতে। হাউডি মোদীর মতো ভারতের আমেদাবাদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেছিলেন। 'নমস্তে ট্রাম্প'। ওই অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী কার্যত ট্রাম্পের হয়ে নির্বাচনী প্রচার করেছিলেন। ভারতীয়-মার্কিনদের কাছে সরাসরি ট্রাম্পের ফের নির্বাচিত করার আবেদন জানিয়ে মোদী বলেছিলেন, ট্রাম্প ভারতকে কী কী সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক কতটা গভীর। ট্রাম্পও ওই দিনের বক্তৃতায় মোদী এবং ভারতের ঢালাও প্রশংসা করেছিলেন। একই সঙ্গে বলেছিলেন, দেশের ভারতীয়-মার্কিনদের তিনি কতটা গুরুত্ব দেন। নমস্তে ট্রাম্পের ফুটেজও ব্যবহার করা হয়েছে ট্রাম্পের নির্বাচনী বিজ্ঞাপনে।

বেশ কিছু মাস আগের সেই অনুষ্ঠান থেকেই স্পষ্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ভারতীয়-মার্কিনদের ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত, বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতীয়-মার্কিন এবং চীনা-মার্কিনদের ভোট অ্যামেরিকার ভোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ট্রাম্প বুঝতে পারছেন, করোনাকালে যে ভাবে তিনি চীনকে আক্রমণ করেছেন তাতে চীনা-মার্কিনিদের ভোট তাঁর দিকে যাবে না। ফলে ভারতীয়-মার্কিনিদের ভোট তাঁর প্রয়োজন। অন্য দিকে ডেমোক্র্যাটরাও ভারতীয়-মার্কিনদের ভোটের প্রয়োজন বুঝতে পারছেন। এবং সে কারণেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কমলা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্টের পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে আনা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তাঁর প্রতিটি বক্তৃতায় কমলা তাঁর ভারতীয় এবং আফ্রিকান অতীত তুলে ধরছেন।

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাটদের ট্রাম্প কার্ড। ডনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের এই চালে দৃশ্যত খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন। ফলে প্রথমে কমলা হ্যারিসকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার চেষ্টা করেছেন। এ বার মোদীকে নামিয়ে দিয়েছেন হ্যারিসের বিকল্প হিসেবে।

বাস্তব হলো, ভারতীয়-মার্কিনদের একটা অংশ মোদী ভক্ত। বিশেষত, পশ্চিম ভারতের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। গত কয়েক দশকে তাঁদের একটা বড় অংশ অ্যামেরিকায় গিয়ে বসবাস করছেন। এই অংশ বরাবরই রিপাবলিকানপন্থী। মোদীর কথার গুরুত্ব তাঁদের কাছে খুবই বেশি। কিন্তু বাঙালি, দক্ষিণ ভারতীয়, মহারাষ্ট্র থেকে যাওয়া ভারতীয়রা আবার চিরাচরিত ভাবে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থক। কমলা হ্যারিস আসরে নামায় এই অংশের ভোটাররা এমনিই আরও বেশি ডেমোক্র্যাটপন্থী হয়ে গিয়েছেন। রিপাবলিকান ভোটারদেরও একাংশ ইতিহাসের সাক্ষী থাকতে ডেমোক্র্যাটদের এ বার ভোট দিতে পারেন। ট্রাম্প সেই অশনি সংকেত বুঝতে পেরেছেন বলেই নির্বাচনী প্রচারে মোদীকে ব্যবহার করে বসলেন। এতে লাভ হবে কি না, তা সময়ই বলবে।

এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এনডিটিভি)