1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডাক্তারদের ধর্মঘট মেটাতে এত সময় কেন লাগলো?

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
১৮ জুন ২০১৯

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় ধর্মঘটের শেষ হয়েছে ঠিকই কিন্তু একযোগে ধর্মঘট করে ডাক্তাররা যে রোগের দিকে আঙুল তুললেন তার নিরাময় কি হবে খুব সহজে?

https://p.dw.com/p/3KddT
Indien Kalkutta Medizinstudenten protestieren
ছবি: DW/Sirsho Bandopadhyay

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ছাপিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এখন সবচেয়ে প্রশ্ন, দুই ঘন্টায় সমাধানযোগ্য সমস্যা মেটাতে সাত দিন কেন লাগলো? সাধারণ মানুষকে কেন এতোটা দুর্ভোগ পোহাতে হল? তিনজন শিশুকে কেন মরতে হল?

অনেকে আঙ্গুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে, দায়ী করেছেন তাঁর অনমনীয় জেদ বা অহংবোধের দিকে৷ সমাজবিদ বুদ্ধদেব ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বললেন, অচলাবস্থার জন্য দায়ী মমতা৷ ‘‘জুনিয়ার ডাক্তারদের আন্দোলনটা ছিল খুবই ন্যায়সঙ্গত৷ আর এটাই প্রথম ঘটনা নয়৷ মমতা যেটা আজ করলেন, সেটা তিনি আগে করলেই পারতেন, জিদ ধরে বসে না থেকে৷ প্রথম থেকেই উনি হুমকি দিতে থাকলেন আন্দোলনকারী জুনিয়ার ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ চার ঘন্টার মধ্যে কাজে যোগ না দিলে দেখে নেবো ইত্যাদি৷ এই অনমনীয় মনোভাব মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে অনুচিত কাজ হয়েছে৷ দ্বিতীয়তঃ এই সব ছেলেমেয়ে মেধাবী৷ ডাক্তার হিসেবে সমাজে এরা সম্মান দাবি করতে পারেন৷ কাজেই এসব ক্ষেত্রে যে অহংবোধ কাজ করে না, সেটা হয়ত উনি বুঝতে পারেননি৷ উনি অকারণে নিজেই সমস্যা সৃষ্টি করেছেন৷ এই রকম আরো অনেক সমস্যা আছে, কি করে যে উনি সামলাবেন, বুঝে উঠতে পারছি না৷'' 

অচলাবস্থার জন্য দায়ী মমতা: বুদ্ধদেব ঘোষ

সোমবার কোলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জুনিয়ার চিকিত্সকদের সাতদিনের ধর্মঘট তুলে নেওয়া হয়৷ রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আন্দোলনকারী ডাক্তারদের প্রতিনিধিদলের মধ্যে বৈঠকের পর এই অচলাবস্থার অবসান হয়৷

মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়ার ডাক্তারদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া মেনে নেন৷ পরদিন সকাল থেকেই কাজে যোদ দেন আন্দোলনকারী ডাক্তাররা৷ স্বাভাবিক হয় সরকারি হাসপাতালের আউটডোর৷

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মোট ২৮জন জুনিয়ার ডাক্তারের প্রায় দুঘন্টার বৈঠক চলে৷ হাসপাতালে ডাক্তারদের নিরাপত্তার অভাবে কোলকাতার নীল রতন সরকার (এনআরএস) হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে রোগীর আত্মীয় স্বজনদের হাতে কীভাবে মার খেতে হয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি হাসপাতালে উপযুক্ত নিরাপত্তা পরিকাঠামোর দাবিটি তুলে ধরা হয় জোরেসোরে৷

এবিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর আন্তরিকতা বোঝাতে প্রশাসনিক স্তরে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেবার কথা বলেন৷ যেমন, সব সরকারি হাসপাতালে নিযুক্ত করা হবে একজন মুখ্য সিকিউরিটি অফিসার৷ হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগের বাইরে কোলাপসিবল গেট বসানো হবে৷ রোগীর সঙ্গে দুইজনের বেশি লোক ঢোকা বারণ, যাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়৷ রোগীর পরিবার ও ডাক্তারদের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হাসপাতালের প্রতি শিফটে থাকবেন একজন জনসংযোগ আধিকারিক৷ সরকারি হাসপাতালগুলোতে চালু করা হবে পাবলিক গ্রিভান্স সেল৷ এই সেলে চিকিত্সা সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করা যাবে৷ হাসপাতালে ঢোকার এবং বেরিয়ে যাবার গেটে মোতায়েন থাকবে ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা কর্মী৷ গেটে বসানো থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা৷ রাতে মোতায়েন থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ৷

কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার পর আহত চিকিত্সক পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, চিকিত্সকের ওপর হামলা করার অভিযোগে যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আদালতে তাঁদের জামিন হয়নি৷ সরকার চেষ্টা করবে তাঁদের যেন শাস্তি হয়৷ বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন৷ শুনানি চলবে৷

আন্দোলনকারী কোনো ডাক্তারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না৷ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, কোনো অবস্থাতেই যেন ডাক্তারদের গায়ে হাত তোলা না হয়৷ এজন্য জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি৷

আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু কোলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঝাপটা ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভারতে৷ আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি সংহতি জানাতে সোমবার দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে একদিনের প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করা হয়৷ অবশ্য ইমারজেন্সি বিভাগ ছাড়া৷ এর পুরোভাগে ছিল দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সসহ (এইমস) নামকরা সব সরকারি হাসপাতাল এবং চিকিত্সা সংগঠন৷ তবুও চিকিত্সক নিগ্রহ আটকানো যায়নি৷ গত রবিবার মধ্যরাতে রোগীর এক আত্মীয়ের হাতে ডিউটিতে থাকা এক ডাক্তারকে লাঞ্ছিত হতে হয়৷

বুদ্ধদেব ঘোষের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও মনে করেন, চিকিত্সা সংকটের জন্য দায়ী মমতার অনমনীয় অহংবোধ৷ প্রথম দিনেই যদি তিনি আহত ডাক্তারকে দেখতে যেতেন, তাঁদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিতেন, তাহলে পরিস্থিতি এতটা জটিল হতো না৷ উল্টো তিনি আন্দোলনকারী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এসমা আইন (অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন) জারি করার হুমকি দেন৷ সংবাদ মাধ্যম ও পত্রপত্রিকার অভিমত, মমতা যদি নিজের অহংকে সরিয়ে রেখে সেই পুরাতন মমতাময়ী জননেত্রীর অবস্থান নিতেন, তাহলে এতোটা জল ঘোলা হতো না, সাধারণ মানুষকে এতোটা দুর্ভোগ পোহাতে হতো না৷