1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডায়াবেটিস মোকাবিলায় নতুন ভাবনাচিন্তা

২৫ জুন ২০১৯

ডায়াবেটিস অনেক মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে৷ ইনসুলিন প্রয়োগ করে এই রোগের চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও সুখকর নয়৷ বাড়তি ওজন সহ অনেক সমস্যা দেখা যায়৷ নতুন কিছু ওষুধ এই সমস্যা কিছুটা লাঘব করছে৷

https://p.dw.com/p/3KzdX
Sterbehelfer Uwe Christian Arnold
ছবি: DW/W. Dick

সুসানে রিপে-র জীবনে অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ পেশায় তিনি ডাক্তারের চেম্বারে সাহায্যকারী৷ তিনি ক্রোন রোগে ভুগছেন৷ ওষুধ খাবার আগে তাঁর ওজন ছিল ৫৫ কিলোগ্রাম৷ এখন ২০ কিলো ওজন বেড়ে গেছে৷ ফলে ৩ সাইজ বেশি মাপের জামাকাপড় পরতে হচ্ছে৷ ফলে মন বেজায় খারাপ৷ বলছেন, তাঁর মুখ গোল হয়ে ফুলে গেছে৷ আগে তাঁকে মোটেই এমন দেখতে ছিল না৷

২০১১ সালে তাঁর ক্রোন রোগ ধরা পড়ে৷ অন্ত্রনালীর এই সমস্যার মোকাবিলা করতে তাঁকে কর্টিসন ওষুধ খেতে হয়৷ তাতে লাভ হয়, প্রদাহ বা জ্বালা দূর হয় বটে, কিন্তু সেইসঙ্গে ওজন বাড়তে থাকে৷ কয়েক মাস পর তিনি বুঝতে পারেন, কর্টিসনের কারণেই এমনটা হচ্ছে৷

বাতরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে গাব্রিয়েলা রিমেকাস্টেন এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতন৷ রিউম্যাটিক ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহের দ্রুত মোকাবিলা করতে হলে তিনি কর্টিসন প্রয়োগ না করে পারেন না৷ তবে তিনি ওষুধের মাত্রা যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করেন৷ রিমেকাস্টেন বলেন, ‘‘প্রদাহের জন্য সব সময়ে শক্তির প্রয়োজন হয়৷ এখন সেই প্রদাহ কমাতে বা পুরোপুরি দূর করলে মনে রাখতে হবে, যে আগের পরিমাণে খাবার খেলে আপনার ওজন বেড়ে যাবে৷ কারণ তখন আপনার তত শক্তির প্রয়োজন হয় না৷''

কর্টিসন তাছাড়া স্ট্রেস হরমোন হিসেবে শরীরকে সঙ্কেত পাঠায়৷ ফলে শরীর ভবিষ্যতে কঠিন সময়ের জন্য আগে থেকেই বেশি খেতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে৷ সুসানে রিপে এই প্রক্রিয়া মোকাবিলার চেষ্টা করছেন৷ ইতোমধ্যে তিনি অন্য কিছু ওষুধ খাচ্ছেন৷ নিজের শরীরের আগের রূপ তিনি ভুলতে পারছেন না৷

কর্টিসন যদি খেতেই হয়, সেক্ষেত্রে তার ডোজে পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন গাব্রিয়েলা রিমেকাস্টেন৷ তাঁর মতে, ‘‘কিছু সময়ের জন্য খুবই হাই ডোজ, তারপর দ্রুত মাত্র ১০ মিলিগ্রামের মতো কম ডোজের ওষুধ দিয়ে থাকি৷ তারপর আরও ধীর গতিতে ডোজ কমাই৷''

ওষুধ খেয়ে মোটা হওয়ার প্রবণতা এতকাল ইনসুলিনের ক্ষেত্রে স্পষ্ট লক্ষ্য করা যেত৷ ১০ বছর আগে হিল্ডেগার্ড সুয়রকাম্প-ব্র্যোনস্ট্রুপ জানতে পারেন, যে তাঁর টাইপ টু ডায়াবেটিস হয়েছে৷ এক বিশেষজ্ঞ তাঁকে দ্রুত ইনসুলিন নেবার নির্দেশ দেন৷ কিন্তু তার পরিণতি হাতেনাতে পাওয়া গেল৷ ডায়াবেটিসের রোগী হিসেবে হিল্ডেগার্ড সুয়রকাম্প-ব্র্যোনস্ট্রুপ বলেন, ‘‘আমি এখন আর যাই না এবং প্রতিদিন দুপুরে কেক জাতীয় খাবার খেয়েছি৷ ফলে ধীরে ধীরে ওজন বেড়ে গেছে৷''

ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ হিসেবে মাটিয়াস রিডেল মনে করেন, ওজন কমানোর দরজা বন্ধ করে দেয় বলে ইনসুলিন এক সমস্যা৷ ইনসুলিন ওজন বাড়িয়ে দেয়৷

৫৮ বছর বয়সি এই নারী ইনসুলিন নেওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন৷ তাঁকে আর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত মাপতে হয় না, কারণ ডায়াবেটিসের নতুন ওষুধগুলি অন্যভাবে কাজ করে৷ একটি ওষুধ অন্ত্রের উপর প্রভাব খাটায়৷ অন্যটি রক্তের মধ্যে শর্করা মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বার করে দেয়৷

তাতে কাজও হচ্ছে৷ এর মধ্যে তিনি ২০ কিলো ওজন কমিয়ে ফেলেছেন৷ মাটিয়াস রিডেল বলেন, ‘‘এই সব ওষুধ ডায়াবেটিসের দৌরাত্ম্য কমিয়ে অনেক কমজোরি করে দেয়৷ এমন ওষুধ আরও প্রয়োগ করলে শুধু রোগীদের ওজন কমে না৷ ইনসুলিনের জটিল চিকিৎসার অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও এড়ানো সম্ভব হয়৷ অনেক রোগী এমন ওষুধের ফলে ওজন এত কমিয়ে ফেলেন, যে শরীর থেকে ডায়াবেটিস দূর হয়ে যায়৷''

হিল্ডেগার্ড এখনো ডায়াবেটিস  পুরোপুরি দূর করতে পারেননি৷ তবে তাঁর ক্ষেত্রে মেটাবলিজম বা বিপাক সংক্রান্ত প্রায় সব মাত্রার উন্নতি ঘটেছে৷ এমনকি রক্তচাপও এর মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে৷ তবে শুধু ওষুধে কাজ হয় না৷ তিনি খাদ্যাভ্যাসও বদলে ফেলেছেন৷ এখন তিনি অনেক কম কার্বোহাইড্রেট খান৷ তার বদলে তিনি বেশি শাকসবজি ও প্রোটিন খাচ্ছেন৷

বির্গিট আউগুস্টিন/এসবি