ডুবতে বসেছে আশার চর
সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের আশার চরের মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কমে আসছে চরের আয়তন৷ সেখানকার অধিবাসীদের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে৷
বিপজ্জনক এলাকা
আশার চর, বঙ্গোপসাগরের কোলে জেগে ওঠা এই চরটির বেশিরভাগ এলাকা এখন প্লাবিত৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এলাকাটিতে প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়৷
জল থেকে স্থলে জীবিকার সন্ধান
যারা শুঁটকি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের কাজ শুরু হয় ভোর থেকে৷ আশার চর থেকে মাছ ধরা নৌকাগুলো ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য মাছের সন্ধানে বের হয়৷ ফিরে আসার পরও থাকে নানা কাজ৷ তারা মাছ বের করে সেগুলো শুকানোর কাজ শুরু করে৷
প্রয়োজনীয়তা
ছয় বছর বয়স ধনেশ প্রতিদিন মাছ ধরে৷ সঠিকভাবে কাজ করার জন্য বয়সটা তার আসলেই অল্প৷ কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে এই কাজ করতে সে বাধ্য৷ শিশুশ্রমকে ভালো চোখে দেখা না হলেও এখনও এখনকার সমাজে প্রায়ই তা চোখে পড়ে৷ প্রতিদিন এই শিশুরা ৪০ টাকা করে পায়৷
একই কাজ, অসম পারিশ্রমিক
আশার চরে নারী শ্রমিকরাও পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে৷ কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতই নারীরা পুরুষদের চেয়ে কম পারিশ্রমিক পায়৷
নিরাপত্তাহীন জীবন
৫২ বছর বয়সি করিম আলী অনেক বছর ধরে এই পেশায় নিয়োজিত৷ তাঁর জীবনে তিনি অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখেছেন, সেইসাথে দেখেছেন অনেক অপহরণের ঘটনা৷ আলী জানান, একসময় তাঁর কয়েকজন শ্রমিক উধাও হয়ে যায় এবং তারা আর ফিরে আসেনি৷ এখানে জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই বলে জানান তিনি৷
স্থানের অভাব
আশার চরের মানুষের উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম শুঁটকি মাছ৷ আর এই মাছ শুকানোর জন্য প্রয়োজন হয় বিস্তৃত এলাকার৷ আধুনিকতার কোন ছোঁয়া নেই আশার চরে৷ তাই নেই কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি, যার মাধ্যমে মাছ শুকানো যায়৷ ফলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে মাদুর বিছিয়ে ছয় দিন ধরে মাছগুলো শুকানো হয়৷
প্রাণের বন্ধু, ভয়ঙ্কর শত্রু
বঙ্গোপসাগর আশার চরের মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন, সাগরের মাছগুলোই তাদের জীবন বাঁচানোর মুখ্য উপাদান৷ কিন্তু বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে এই সাগরই তাদের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে৷
হারিয়ে যাওয়া ভূমি
সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে চরের বেশ কিছু অংশ প্রতিদিনই সমুদ্রগর্ভে চলে যাচ্ছে৷ এমনকি মাছের খামার এবং চাষের জমিও প্লাবিত হচ্ছে৷
ঘূর্ণিঝড়
২০০৭ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল৷ রেডক্রসের হিসেব অনুযায়ী ঝড়ে ৯ লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷ যত মানুষ নিহত হয়েছিল তার মধ্যে ৪০ ভাগই শিশু৷
বাইরের কোন সাহায্য নেই
আশার চরের জেলে সম্প্রদায় বৈরি পরিস্থিতির মধ্যেই কাজ করে যায়৷ এখানে সরকার কোনো ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেনি, তেমনি নেই কোন স্যানিটেশন প্রকল্প৷ খুব ছোট ছোট ঘরে জীবন কাটান এখানকার মানুষ৷