1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৭ নভেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট আছে কি নেই – তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও জঙ্গিদের নতুন রূপ আর কৌশল নিয়ে বিতর্ক নেই৷ তারা যে এখন মাদ্রাসার ছায়া থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, তা স্বীকার করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা৷

https://p.dw.com/p/1H7DY
Bangladesch Aktivist Hizb-ut-Tahrir Dhaka Zusammenstöße Polizei
ফাইল ফটোছবি: Reuters

২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যায় গ্রেপ্তার হয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বা এনএসইউ-এর পাঁচ ছাত্র৷ তারা হলো, ফয়সাল বিন নাইম দীপ, মাকসুদল হাসান অনিক, এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম শিকদার ইরাদ ও নাফিস ইমতিয়াজ৷ তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়৷ এরা সকলেই ছিল আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য৷

সে সময় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. আবদুস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘‘এক শ্রেণির শিক্ষক ও কর্মকর্তা কতিপয় শিক্ষার্থীকে জঙ্গিবাদে জড়াতে মগজধোলাই করছেন৷''

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট-এর ছাত্র মোহাম্মদ নুরউদ্দনি এবং আবু বারাকাত মোহাম্মদ রফকিুল হাসানকে বুয়েট থেকে বহিষ্কার করে পুলিশে দেয়া হয় সেপ্টেম্বর মাসে৷

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এবং জঙ্গি বিষয়ক বিশেষ সেলের সদস্য সানোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের একাংশ এখন জঙ্গি তৎপরতার দিকে ঝুঁকছে৷ আর যারা অপারেশনে অংশ নিচ্ছে, তারাও বয়সে তরুণ এবং ছাত্র৷''

সানোয়ার হোসেনের কথার সত্যতা পাওয়া যায় ঢাকায় নিহত ব্লগার নিলয় নীলের স্ত্রী আশামনির কথায়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘যারা নীলকে হত্যা করেছে তারা বয়সে তরুণ এবং দেখে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলেই মনে হয়েছে৷ তারা জিন্সের প্যান্টসহ আধুনিক পোশাক পরা ছিল৷''

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রধান মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয়ের আইবিএ-র শিক্ষক ছিলেন৷ ২০১০ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ গোলাম মাওলা হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশের সমন্বয়ক৷ তিনিও গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে ছাড়া পান৷

নিষিদ্ধ হলেও প্রায় প্রকাশ্যেই তৎপরতা চালাচ্ছে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে নিষিদ্ধ এই সংগঠনটি৷ তাছাড়া বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা তৎপর৷ ছাত্ররাই হচ্ছে এই সংঠনের মূল শক্তি৷ প্রায়শই ঝটিকা মিছিল এবং লিফলেট বিতরণসহ নানাভাবে তৎপর তারা৷ গতমাসে তারা ৪১ জন বিচারপতিকে হুমকিও দেয় ‘ইসলামের পথে' আসার জন্য৷ একই মাসে তারা অনলাইন সম্মেলনও করেছে৷

উপ-পুলিশ কমিশনার সানোয়ার হোসেন জানান, ‘‘তরুণদের একাংশ এখন ছোট ছোট গ্রুপে সক্রিয়৷ তারা ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের সহায়তায় এই গ্রুপগুলো গঠন করে৷ নিজেদের মধ্যে তথের আদান-প্রদান করে৷ তাদের প্রত্যেক গ্রুপই আলাদা৷ তারা মূলত অনলাইনে নানা টেক্সট এবং ভিডিও দেখে উদ্ধুদ্ধ হয় এবং পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে৷ বলা বাহুল্য, এদের চিহ্নিত করাও বেশ কঠিন৷''

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জঙ্গিরা ছদ্মনাম ব্যবহার করে ফেসবুক ও জিমেল অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে৷ হাজার হাজার ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ওয়েবসাইট রয়েছে – যেগুলো ব্যবহার করে জঙ্গিরা সংঘঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছে, তৈরি করছে জঙ্গি নেটওয়ার্ক৷''

Bangladesch Aktivist Hizb-ut-Tahrir Dhaka Zusammenstöße Polizei
জঙ্গিরা নানা নামে এবং ব্যানারে নুতন করে তৎপরতা চালাচ্ছে, মনে করে পুলিশছবি: Reuters

বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অফিসিয়াল আইটি কনসালটেন্ট তানভীর হাসান জোহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরাও বিষয়টি দেখছি৷ এ পর্যন্ত আমরা এক ব্যক্তির ৫০০ ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টও পেয়েছি৷ এই সব ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে জঙ্গি তৎপরতাসহ তথ্য আদান-প্রদান করা হয়ে থাকে৷ এছাড়া ছোট ছোট জঙ্গি গ্রুপ ওয়ার্ডপ্রেস-এ ব্লগ সাইট খুলে কিছু দিন তৎপরতা চালিয়ে বন্ধ করে দিয়ে, আবার নতুন আরেকটি সাইট খোলে৷''

২০০৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশে মোট ছয়টি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়৷ এগুলো হলো – জামাআতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ, শাহদাতই আল-হিকমা এবং হিযবুত তাহরীর এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিম৷ এ পর্যন্ত পুলিশ ও র‌্যাব বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার সদস্য আটক করলেও, তাদের বড় একটা অংশ জামিনে ছাড়া পেয়ে নতুনভাবে তৎপর৷

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘জঙ্গিরা নানা নামে এবং ব্যানারে নুতন করে তৎপরতা চালাচ্ছে৷ তারা এখন আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে৷''

অন্যদিকে, যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘অনেকটা ‘হিরোইজম' এবং জঙ্গিদের টেক্সট ও ভিডিও-র সহজলভ্যতার কারণে ছাত্রসহ তরুণদের একাংশ এখন জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ছে৷'' তিনি জানান, ‘‘এ কারণে আমরা এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নজরদারি বাড়িয়েছি৷''

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য