1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‘তেলের ঘাটতি আছে এমন চিত্র আমরা মাঠ পর্যায়ে পাচ্ছি না”

সমীর কুমার দে ঢাকা
১১ মার্চ ২০২২

ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অভিযান পরিচালনার বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন একটি টিমের নেতৃত্বে থাকা সহকারী পরিচালক মাহমুদা আক্তার।

https://p.dw.com/p/48N4s
ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর।
ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর। ছবি: Mahmuda Akther

ডয়চে ভেলে : এখন আপনারা বিশেষকত কোন পণ্যের  জন্য অভিযান করছেন?

মাহমুদা আক্তার : সাম্প্রতিক সময়ে আমরা তেল, পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে অভিযান করছি। এছাড়া যেসব পণ্যের দাম বিক্রেতারা বেশি নিচ্ছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে, সেগুলো নিয়েই অভিযান পরিচালনা করছি। এখন তো তেলের মূল্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেদিকেই বিশেষ মনোযোগ দিয়ে অভিযান করছি। এক্ষেত্রে আমরা দেখি, একজন ব্যবসায়ী যে তেল ক্রয় করেছে তার পাকা রশিদ আছে কিনা৷ অনেক সময় গুদামে মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সেখানে আমরা দেখি, আসলেই তার গুদামে তেলের মজুদ আছে কিনা। সে আসলে কত টাকায় কিনেছে, আর কত টাকায় বিক্রি করেছে সে হিসাবটাও দেখি। আবার বোতলজাত তেলের গায়ে যে দাম লেখা থাকে সেখানে টেম্পারিং করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সেগুলোও আমরা দেখি। এগুলো যারা করেন, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি আমরা। 

আপনারা কোন এলাকায় অভিযান করবেন, সেটা কীভাবে নির্ধারণ করেন?

এগুলো আমরা আগে থেকে নির্ধারণ করি না। আমাদের সিনিয়র অফিসাররা আছেন, তাদের কাছে অনেকে তথ্য দেন। সবকিছু মিলিয়ে উর্ধ্বতনরাই অভিযানের এলাকা নির্ধারণ করে দেন। আমরা যখন অভিযানে যাই তখন দেখি, বিক্রেতারা জিনিসগুলো কোথা থেকে কিনেছেন ৷আমরা কিন্তু সম্প্রতি মৌলভীবাজার, শ্যামবাজার, কৃষি মার্কেটেও অভিযান চালিয়েছি। এই পাইকারি বাজারগুলোসহ যেখানেই অভিযোগ পাচ্ছি, সেখানেই অভিযান পরিচালনা করছি। অনেককে কিন্তু আইনের আওতায়ও নিয়ে আসা হয়েছে।

বুধবার যে মালিবাগ এবং মধুবাগে অভিযান চালালেন, সেটাও কি অভিযোগের ভিত্তিতে?

এখানে আমাদের কাছে তথ্য ছিল, তেলের বোতলের গায়ে যে দাম লেখা আছে, তার চেয়ে বেশি নিচ্ছে। এটা একেবারে খুচরা পর্যায়ে। আজকে যেটা করেছি, আমাদের একজন অফিসারকে ক্রেতা সাজিয়ে পাঠিয়েছি আসলে অভিযোগের সত্যতা কতটুকু তা দেখার জন্য। আসলেই কি বেশি রাখছে কিনা? আমরা ওখানে গিয়ে দু-একটি দোকান পেয়েছি যারা আসলে গায়ের দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। আবার অনেক জায়গায় অভিযোগ পেয়েছি, অন্য পণ্য না নিলে তেল দিচ্ছে না। সেক্ষেত্রে তাদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। অনেক জায়গায় আমরা পেয়েছি, তেলের বোতলের গায়ে যে দামটা লেখা ছিল, সেটা মুছে দিয়েছে, পরে বেশি দামে বিক্রি করছে।

তেলের মূল্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে: মাহমুদা আক্তার

এদিন কতজনকে শাস্তির আওতায় এনেছেন বা কতটাকা জরিমানা করেছেন?

আজকে আমরা খুচরা পর্যায়ে যেহেতু অভিযান চালিয়েছি, সেক্ষেত্রে একজনকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। আসলে জরিমানা তো মূল কথা না। আমরা কতটুকু তদারকি করতে পারছি, সেটাই আসল কথা। আসলে দোকানের ধরন দেখে জরিমানাগুলো নির্ধারণ করা হয়। পানি নিয়েও আমরা আরেকটা অভিযান করেছি।

যাকে জরিমানা করেছেন, তার অপরাধ কী ছিল?

একেক জনের তো একেক ধরনের অপরাধ। বোতলের গায়ে লেখা মূল্যের চেয়ে বেশি দাম নেওয়ার অপরাধে তাকে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও অন্য পণ্য না কিনলে তেল বিক্রি করা হবে না- এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে আবার গায়ের লেখা হয়ত মোছেনি, কিন্তু বেশি দাম নিচ্ছে। এসব অভিযোগ থেকেই মূলত আমরা জরিমানা করি।

অভিযানে আপনারা কী দেখছেন? তেলের সরবরাহ কি স্বাভাবিক আছে?

আমরা গত কয়েকদিনের অভিযান থেকে যেটা দেখেছি তাতে মনে হয়েছে, আমাদের সরবরাহটা যথেষ্ট ভালো রয়েছে। এখানে দাম বাড়ানোর কোনো কিছু নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কাজগুলো করছে। তাদেরকেই আমরা আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। আর সরবরাহে কোনো ঘাটতি আছে, এমন কোনো তথ্যই আমরা পাইনি। অভিযানে আমরা দেখেছি, যথেষ্ট মজুদ রয়েছে।

সংকটটা কারা সৃষ্টি করছে? খুচরা ব্যবসায়ী, না পাইকারী ব্যবসায়ীরা?

এখানে আসলে যে যার লেভেল থেকে পারছে, করছে। সবাই যে করছে তা না। আমি কিন্তু সবাইকে অভিযুক্ত করছি না, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছেন তারা এটা করছেন।

আপনার অভিজ্ঞতা কী?

আমরা আসলে খুচরা বাজারেও পেয়েছি, পাইকারি বাজারেও পেয়েছি। কে কত আমদানি করছেন, কত মজুদ আছে, সে বিষয়গুলোও আমরা দেখছি। খুচরা, পাইকারি দুই জায়গাতেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এগুলো নিয়ে এখনো কাজ করা হচ্ছে।

আপনারা তো খুব অল্প জায়গায় যাওয়ার সুযোগ পান, এতে কি বাজারে কোনো প্রভাব পড়ে?

প্রভাব তো অবশ্যই পড়ে। আমরা যদি মনিটরিং না করতাম তাহলে তো ব্যবসায়ীরা আরেকটু বেশি দাম নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যেতেন। পেঁয়াজের দাম যখন আড়াইশ' টাকা উঠলো, তখন মন্ত্রণালয় থেকেও অভিযান শুরু হলো। তাদের সঙ্গে বৈঠক করলাম। তখন কিন্তু দাম আর বাড়াতে পারেনি। পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এটা নিয়েও আমরা কাজ করছি, ইতিমধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা কিন্তু ম্যাসেজ পেয়ে গেছে। দেখা যাবে ইনশাল্লাহ এটাও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

আপনারা যেখানে অভিযান চালান, পরে কি আবার ফলোআপ করেন?

প্রতিদিনই যেহেতু আমাদের বাজার মনিটরিং হচ্ছে, ফলে ফলোআপ করা হয়। কৃষি মার্কেট বলেন আর মৌলভীবাজার বলেন, সেখানে কিন্তু আমরা বারবার যাচ্ছি। আমরা যেখানে অভিযান চালাই, সেখানে আবার যাই, কারণ আসলেই ব্যবসায়ীরা সংশোধন হয়েছেন কিনা সেটা তো দেখতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, অনেকেই সংশোধন হয়েছেন।

আপনারা প্রতিদিন কয়টা টিম পরিচালনা করছেন?

ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে ৬টা টিম অভিযান চালায়। আবার মন্ত্রণালয় থেকেও অভিযান পরিচালনা করা হয়।

টিম বাড়ানো দরকার না?

এগুলো আসলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। তবে আমরা যারা মাঠে কাজ করি, আন্তরিকতার সঙ্গেই কাজগুলো করি। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।

একদিনে একটা টিম কয়টা এলাকায় অভিযান চালাতে পারে?

এগুলো তথ্যের উপর নির্ভর করে। যেমন আজকে আমরা মধুবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করলাম। সেখান থেকে মালিবাগের একটা তথ্য পেলাম, তারপর সেখানেও গেলাম। পরে মিটিংয়ের কারণে চলে আসতে হয়েছে। প্রতিদিন দুই-তিনটা এলাকা তো আমরা কাভার করিই। আমরা যখন অভিযানের এলাকা নির্ধারণ করি, তখন সংশ্লিষ্ট থানায় আমরা যোগাযোগ করি। পুলিশের সহযোগিতা নিয়েই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের বিরোধের মুখে কখনো পড়েছেন?

আমার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনর অভিজ্ঞতা হয়নি। উল্টো ব্যবসায়ীদের যথেষ্ট আন্তরিকতা পেয়েছি। যারা অসাধু ব্যবসায়ী আছেন, তাদের যখন আইনের আওতায় আনি, তখন তারাও নমনীয় হয়। এক্ষেত্রে খুব বেশি বড় বাধা আমি দেখিনি।

আপনি তো মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলেন, কী করলে আসলে তেলের বাজার স্বাভাবিক হতে পারে?

আমার জায়গা থেকে তো পুরো চিত্রটা বলতে পারবো না। আমার জায়গা থেকে যেটা বলতে পারি, তেলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের উর্ধ্বতনদের গতকাল বৈঠক হয়েছে, আজও হয়েছে। সেখানে কিন্তু একটা বিষয় আমরা বলেছি, পাকা ভাউচার দিতে হবে। এখন অনেক জায়গায় গেলে ভাউচার পাচ্ছি না। বেশি দামে বিক্রি করার কারণে ভাউচার দিচ্ছে না। ভাউচার থাকলে তো তাদের ট্র্যাক করা সহজ হয়ে যায়। যাদের এটা থাকবে না, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। যদি ক্রয় রশিদ থাকে, তাহলে আমরা নিশ্চিত হতে পারি তিনি কত টাকায় কিনেছেন, আর কত টাকায় বিক্রি করছেন। পুরো চিত্রটা বোঝা যায়। দাম টেম্পারিং করলে তো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছেই।