1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিল্লিতে সোয়াইন ফ্লু'র প্রকোপ উদ্বেগজনক

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৯ জানুয়ারি ২০১৯

গত সপ্তাহে দিল্লির সরকারি হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত তিন জনের মৃত্যু হয়৷ এছাড়া এ শহরে এ মাসে মোট অন্তত ৯৯ জন সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েছেন৷ আশপাশের রাজ্যগুলি থেকেও চিকিত্সার জন্য দিল্লিতে আসছেন অনেকে৷

https://p.dw.com/p/3CNdm
Symbolbild Schweinegrippe Injektion Impfung
ছবি: Colourbox

গত সপ্তাহেই অন্তত তিনজন মারা যায় দিল্লির সরকারি রাম মনোহর লোহিয়া (আরএমএল) হাসপাতালে৷  হাসপাতালের প্রশাসন সূত্রে বলা হয় একথা৷ জানুয়ারি মাসেই এ পর্যন্ত এইচ-ওয়ান এন-ওয়ান ভাইরাসে আক্রান্ত ২৫ জনকে ভর্তি করা হয় এই হাসপাতালে৷ ৫০ বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে জানুযারির প্রথম সপ্তাহে ভর্তি করার দু'দিন পরেই তিনি মারা যান৷ ১১ই জানুয়ারি ভর্তি করা হয় ২৫ বছরের এক যুবককে৷ ১৫ই জানুয়ারি তিনি মারা যান৷ আরএমএল হাসপাতালের মুখপাত্র বলেন, হাসপাতাল থেকে রোগ নির্ণয় ও চিকিত্সা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাঠানো হয় জাতীয় রোগ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এনসিডিসিতে৷ বলা হয়, সাধারণত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেই সোয়াইন ফ্লু-র প্রকোপ বেশি হয়৷ এ বছর দিল্লিতে শীতের প্রকোপ বেশি বলে রোগীর সংখ্যাও বেশি হচ্ছে৷ ‘‘শীত যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে সংক্রমণের সংখ্যাও বাড়তে পারে,'' বলেন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. আর.এস তানেজা৷ জাতীয় সোয়াইন ফ্লু নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারির প্রথম তিন সপ্তাহে সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১৬৮ জন৷

দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সুরঞ্জিত চ্যাটার্জী জানান, যেভাবে  সোয়াইন ফ্লু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে,তা সত্যিই উদ্বেগজনক৷ ভর্তি হওয়া সব রোগীর শরীরের ভাইরাস কিভাবে এবং কোথা থেকে এলো এখনো তা চূড়ান্তভাবে নির্ণয় করা যায়নি৷ সোয়াইন ফ্লু'র ভালো চিকিত্সা হলো ট্যামিফ্লু৷ এছাড়াও আছে জানামিভির (রিলেঞ্জা)৷ তবে ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে সবথেকে বেশি দরকার দেহের রোগ প্রতিরোধক শক্তি৷ সংক্রমণের শিকার বেশি হয় ৬৫ বছরের ঊর্ধে এবং পাঁচ বছরের নীচের মানুষরা৷ তিন শ্রেণির ভাইরাস আছে, এ, বি এবং সি৷ সবথেকে মারাত্মক সি-ভাইরাস৷ অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত রোগীরা দিল্লিতে চিকিত্সার জন্য আসার ফলে সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে৷

‘রোগ নির্ণয়ের পর রোগীকে আলাদাভাবে রাখা, যাতে অন্যদের মধ্যে না ছড়ায়’

সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণ কিভাবে হয়, এর লক্ষণ কী এবং কিভাবে তা নিবারণ করা যায় সে সম্পর্কে বিশিষ্ট চিকিত্সক ডা. পিনাকী দে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মূলত এটা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস৷ এইচ-ওয়ান, এন-ওয়ান-টু-কেই বলা হয় সোয়াইন ফ্লু৷ খুবই সংক্রামক রোগ৷ এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি অপরের মুখের সামনে কথা বলে, তাহলে যার মুখের সামনে কথা বলছে, তার মধ্যেও তা সংক্রমিত হ পারে৷ অনবরত সর্দি কাশি, জ্বর,গলা ব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ৷ অন্যসব ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতোই৷ এর প্রতিষেধক হিসেবে নিতে হবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন৷ তবে জরুরি হচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগ নির্ণয়ের পর রোগীকে আলাদাভাবে রাখা, যাতে অন্যদের মধ্যে তা না ছড়ায়৷

‘‘রোগ প্রতিষেধক যেসব ওষুধ পাওয়া যায়, তারমধ্যে আছে ট্যামিফ্লু ৭৫ মিলিগ্রাম করে রোগীকে খাওয়াতে হবে,'' ডয়চে ভেলেকে বললেন ডা. পিনাকী দে৷ বিশেষ করে শীতকালে এই রোগ বেশি হয় কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘শীতকালে যে-কোনো ইনফ্লুয়েঞ্জাই বেশি হয়৷ দ্বিতীয়ত, শীতকালে মানুষের মধ্যে একটা ক্লোজ গ্যাদারিং হয়৷ মানে সব মানুষেরই ঘনিষ্ট হয়ে, জড়োসড়ো হয়ে কাছাকাছি থাকার প্রবণতা বাড়ে৷ যত বেশি কাছাকাছি থাকা হবে, তত বেশি ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে৷ এই রোগকে সোয়াইন ফ্লু বলা হয়, কারণ, শূকরের কাছ থেকেই প্রথমে মানুষের দেহে এই ভাইরাস এসেছিল৷''

দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে সতর্কতামূলক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে৷ সচেতনতা বাড়াতে এক বিশেষ মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে৷ শুরু করা হয়েছে এক বিশেষ অভিযান৷ এই টিম বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই রোগ প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সে সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করছেন৷ 

রাজস্থানে সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের ছবিটা সবথেকে বেশি উদ্বেগজনক৷ ২০শে  জানুয়ারি পর্যন্ত ১২৩৩ জন এই রোগের শিকার হয়েছে৷ তারমধ্যে ৫৪ জন মারা যায়৷ এর প্রধান কারণ রাজস্থানে সোয়াইন ফ্লু পরীক্ষার ল্যাবেটরির অভাব৷ প্রথম দিকে তা ধরা পড়ে না৷ দিন তিনেক আগে ৫০ বছর বয়সি এক মহিলা মারা যাবার পর জানা যায়, তিনি সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন৷ পরিবারের কেউ তা জানতে পারেনি৷ মহিলার স্বামী বলেন, ‘‘জানুয়ারির প্রথম দিকে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ ৭-৮ দিন পর অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়৷ ডাক্তার দেখালে তিনি যোদপুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন৷ আমার গ্রাম থেকে যোধপুর হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার৷ অনেক কষ্টে যোধপুর হাসপাতালে ভর্তি করার দিন দুয়েকের মধ্যেই আমার স্ত্রী মারা যান৷''

এবছর চন্ডিগড়ে সোয়াইন ফ্লু-তে মারা য়ায় তিনজন৷ তার আগের বছর ৬৪ জনের দেহে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস ধরা পড়ে৷ তারমধ্যে মারা যায় ছয় জন৷  গত বছর গোটা দেশে সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জায়মারা যায় ১১০০ জন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান