1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দীপাবলিতে হইচই, বছরভর দূষণ মোকাবিলা নয় কেন?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৪ নভেম্বর ২০২০

দীপাবলিতে বাজি পোড়ানো নিয়ে হইচই হলেও বছরভরই বায়ু দূষণের কবলে থাকে কলকাতা৷ দিল্লির মতো কৃষিবর্জ্যজনিত সমস্যা এখানে নেই৷ তবু কেন রোধ করা যায় না তিলোত্তমার দূষণ?

https://p.dw.com/p/3lI43
Indien Westbengalen | Luftverschmutzung
ছবি: Payel Samanta/DW

শব্দবাজি আগেই নিষিদ্ধ হয়েছিল৷ এবার করোনা পরিস্থিতির জন্য সব ধরনের বাজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত৷ প্রতি বছর দীপাবলীর আগে বাজি ও তার থেকে হওয়া দূষণ সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা শোনা যায়৷ কিন্তু সারা বছর দূষণ নিয়ে এতটা ভাবনা থাকে না৷

দিল্লিতে প্রতি বছরের মতো এবারও দূষণ মাত্রাছাড়া৷ হাজার হাজার একর জমির কৃষিবর্জ্য পোড়ানোর ফলে দূষণ ফের বেড়েছে৷

কলকাতা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে

দূষণের ক্ষেত্রে যে কয়েকটি বিষয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হয়ে ওঠে, তার মধ্যে রয়েছে পরিবহন অর্থাৎ বিভিন্ন গাড়িতে ব্যবহৃত জ্বালানি৷ দিল্লির মতো কলকাতায় সিএনজি ব্যবহার শুরু করা যায়নি৷ এর ফলে নানা ধরনের জ্বালানি থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া নিয়মিত কলকাতার বাতাসকে দূষিত করছে৷ রাস্তার ধারে স্থায়ী ও অস্থায়ী খাবারের দোকানে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠকয়লা৷ এই পদার্থটি জ্বলার ফলে ব্যাপক দূষণ ছড়াচ্ছে৷ এর সঙ্গে রয়েছে অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ৷ রাস্তা সংস্কার থেকে বহুতল নির্মাণের সময় কোনো সাবধানতা নেওয়া হয় না৷ উন্মুক্ত স্থানে সিমেন্ট-সহ নির্মাণে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়৷ এসব সামগ্রী বাতাসে মিশে তা দূষিত করে তোলে৷

‘যে কারণে দূষণ তৈরি হচ্ছে তা নির্মূল করার উদ্যোগ নেই’: সোমনাথ বৈদ্য

দিল্লি আইআইটি-র অধ্যাপক, বিশেষজ্ঞ সোমনাথ বৈদ্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কালীপুজোয় বাজি পোড়ানো দু-একদিনের ব্যাপার৷ এক্ষেত্রে সতর্কতা অবশ্যই জরুরি৷ কিন্তু বিভিন্ন কারণে দূষণ সারা বছরই হচ্ছে৷ তাকে নিয়ন্ত্রণ করার কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না৷ অর্থাৎ যে কারণে দূষণ তৈরি হচ্ছে তা নির্মূল করার উদ্যোগ নেই৷ শুধু দূষণ হলে তা কমানোর কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷ এই পদক্ষেপ জরুরি নয় তা বলছি না, কিন্তু বেশি জরুরি দূষণকে তার উৎস থেকে নিশ্চিহ্ন করা৷''

কলকাতার বাতাসে সাধারণভাবে প্রতি ঘনমিটারে ২০০-৩০০ মাইক্রোগ্রাম পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) বা অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা থাকে। দীপাবলির সময় বাজি পোড়ানোর ফলে তা অনেকটা বেড়ে যায়৷ বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে মেশে৷ তাতে করোনা আক্রান্ত রোগীর শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে বলে এবার বাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ লকডাউন পর্বে পিএম ১০০-র নীচে নেমে গিয়েছিল৷ কিন্তু আনলক পর্ব শুরু হতেই ফের বাতাসে পিএম-এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে৷ প্রতি ঘনমিটারে তা ১৬ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে৷ দীপাবলিতে আরও বৃদ্ধির আশঙ্কায় জনস্বার্থ মামলা হয় আদালতে৷ শনি ও রবিবার এই দুদিন দীপাবলি উৎসব পালিত হচ্ছে৷ প্রকাশ্যে বাজি বিক্রি আগেই বন্ধ৷ তা সত্ত্বেও কতটা বাজি পোড়ানো হয় সেটাই দেখার৷ তার থেকেও বড় প্রশ্ন, পরের দীপাবলির আগ পর্যন্ত যে দূষণ নিয়মিত কলকাতার বাতাসে ছড়িয়ে পড়বে, তা রুখতে কতটা তৎপরতা দেখা যাবে বিভিন্ন স্তরে৷ দিল্লির থেকেও বেশি দূষণ ছিল চীনে৷ তারা দ্রুত সেটা কমিয়ে আনতে পেরেছে৷

কলকাতা পারবে না কেন?

কলকাতায় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই৷ তবে বিক্ষিপ্তভাবে ছোটখাটো শিল্প থেকে দূষণ ছড়ায়৷ তাই শুধু বাজিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধিকর্তা তড়িৎ রায়চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সার্বিক দূষণের ফলে শ্বাসকষ্ট শুধু নয়, ত্বকের সমস্যা থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হয়৷ ভারী ধাতু যত বেশি বাতাসে মিশবে, ততই কষ্ট হবে শ্বাস নিতে৷ বাজি নিষিদ্ধ করা ভালো পদক্ষেপ৷ তবে বছরভর দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপযোগী ব্যবস্থা নিতে হবে৷''

‘বছরভর দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপযোগী ব্যবস্থা নিতে হবে’: তড়িৎ রায়চৌধুরী

আমফানে কলকাতার ৫০ হাজার গাছ পড়ে গিয়েছিল৷ তাই পরিবেশ রক্ষার বিকল্প উপায় হিসেবে অন্য রকম উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছে৷ নিউটাউনে তৈরি হয়েছে এয়ার পলিউশন আরজি পার্টি৷ নিজেদের উদ্যোগে এই দলের সদস্যরা নজর রাখছেন এলাকায়৷ দরকার হলে তাঁরা পুলিশের সাহায্য নেবেন৷ কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ মিস্ট ক্যানন, মিস্ট ব্লোয়ার মেশিন কিনেছে৷ এই যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুদূষণের মাত্রা কমানোর চেষ্টা চলছে৷ কলকাতায় চলছে ইলেকট্রিক বাস, ব্যাটারিচালিত টোটো৷ কিন্তু তা কতটা পর্যাপ্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় উৎসমূলে দূষণ দূর করলে সেটাই হবে সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ৷