1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্নীতিবাজদের রুখতে সরকারি চাকরি আইন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ অক্টোবর ২০১৯

এখন থেকে যে-কোনো পর্যায়ের সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করতে সরকারের অনুমতি লাগবে৷ আইনের নতুন এই বিধানটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ এটাকে বৈষম্যমূলক এবং দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষার আইন বলছেন অনেকেই৷

https://p.dw.com/p/3Qgb6
ছবি: Privat

তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোনো ফৌজদারি অপরাধ করলে, তাকে গ্রেপ্তারে এই আইনে কোনো বাধা নেই৷ গ্রেপ্তার করতে সরকারের কোনো অনুমতিও লাগবে না৷''

‘‘তা না হলে সরকারের কাজ ব্যাহত হবে’’

গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ প্রণীত হয়েছে৷ তবে কার্যকর হয়েছে এই বছরের ১ অক্টোবর থেকে৷ এই আইনের ৪১(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগ গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হইবে৷'' 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রথম কথা হলো, এটা সংবিধানের পরিপন্থি৷ আইনের চোখে সবাই সমান৷ কিন্তু এই আইনে একটি বিশেষ শ্রেণি বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে৷ দুর্নীতি দমন কমিশনের যখন গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হবে, তখন এই বৈষম্যমূলক আইনের কারণে এই বিশেষ শ্রেণিকে গ্রেপ্তার করা যাবে না৷ সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনতে দুর্নীতি দমন কমিশন বাধাগ্রস্ত হবে৷ এছাড়া  হত্যাসহ যে-কোনো ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রেই তারা এই সুরক্ষা পাবেন৷'' 

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই আইন দিয়ে সব সরকারি বেআইনি কাজে কর্মচারীকে সুরক্ষা দেয়া হলো৷ তাহলে প্রশ্ন ওঠে, সবাই কি দুর্নীতি বা অপরাধের সঙ্গে জড়িত? আমরা তা মনে করি না৷ আমরা মনে করি, দুর্নীতি বা অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা কম৷ তাহলে এই আইন দিয়ে গুটি কয়েকের জন্য সবাইকে অপবাদের মধ্যে ফেলা হলো কেন?'' 

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অবশ্য এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষন করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই আইনে বলা হয়েছে ‘দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত'৷ এখন কেউ যদি দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কোনো ফৌজদারি অপরাধ করেন, তাহলে তাকে গ্রেপ্তারে  সরকারের কোনো অনুমতি নিতে হবে না৷ ঘুস খওয়া বা দুর্নীতি করা সরকারি কর্মচারিদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না৷ হত্যা বা অন্য কোনো ফৌজদারি অপরাধ কারো দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না৷ এইসব অপরাধ যদি কোনো সরকারি কর্মচারী করেন, তাহলে তাকে গ্রেপ্তারে কোনো অনুমতি লাগবে না৷ কিন্তু কেউ সরকারের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন, সেখানে কেউ মামলা করে দিলো, এক্ষেত্রে গ্রেপ্তারে সরকারের অনুমতি লাগবে৷  তা না হলে সরকারের কাজ ব্যাহত হবে৷ প্রশাসন গতি হারাবে৷ প্রশাসনে কাজের গতি আনার জন্যই এই আইন৷ কেউ যদি সরকারের কাজে কোনো বাড়িতে তল্লাশি চালান, তাহলেও তো অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা হতে পারে৷ কিন্তু এটা তো সরকারি কাজ৷''

তবে ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, ‘‘আসলে সরকারি কর্মচারিদের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পুরোটাই তার দায়িত্বকালীন সময়৷ দায়িত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত৷ এই আইনের ফলে তারা যে-কোনো ধরনের ফৌজদারি অপরাধে অনুমতি ছাড়া গ্রেপ্তার থেকে রেহাই পাচ্ছেন৷ ফলে তিনি এর সুযোগ নিয়ে পালিয়ে যেতে পারেন৷ তদন্ত প্রভাবিত করতে পারেন৷ মোট কথা, তিনি আসামি হয়েও বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন৷ এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না৷ এটা দেশের নাগরিকদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক৷''

আর এই আইনটি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে প্রণয়ন করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘২০১৩ সালে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতির বিধান রেখে দুদক আইন সংশোধন বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়৷ কিন্তু ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংশোধনী বাতিলের আদেশ দেয়৷'' 

‘‘এটা সংবিধানের পরিপন্থি’’

এদিকে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি মনে করি, নতুন এই আইনটির প্রয়োজন ছিল না৷ ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯৭ ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে চার্জশিট দিতে হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে৷ এটাই যথেষ্ট ছিল৷ নতুন আইনটি করা হয়েছে অকারণে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে কেন গ্রেপ্তার করা যাবে না? একজন পুলিশ কনস্টেবল যদি অবৈধ কোনো কিছু করতে গিয়ে ধরা পড়েন, তাহলে তাকে আপনি গ্রেপ্তার করবেন না, এটা কেমন কথা?''

প্রসঙ্গত, নতুন এই আইনের ৪২(২) ধারা মতে, কোনো সরকারি কর্মচারীর ফৌজদারি অপরাধে শাস্তি এক বছরের কম হলে তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হবেন না৷ তাকে তিরস্কার, পদোন্নতি স্থগিত, পদাবনমন জাতীয় বিভাগীয় ব্যবস্থার বিধান রাখা হয়েছে৷