1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: টিসিবির ট্রাকে লম্বা লাইন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

টিসিবির ন্যায্যমূল্যের চার ধরনের ভোগ্যপণ্যের জন্য ঢাকায় ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ছে৷ লাইনে এখন মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্তদেরও দেখা যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/46xAz
Bangladesch Menschenschlange vor LKWs mit Lebensmitt´len in Dhaka
ছবি: Abdul Halim

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়তে থাকায় কম দামে পণ্য পেতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছে৷ তবে টিসিবি বলছে, তাদের পণ্যের মান ভালো এবং দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় মানুষ তাদের পণ্য কিনতে আগ্রহী হচ্ছে৷       

টিসিবির ট্রাকে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা, মসুর ডাল প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা৷ আর সংস্থাটির হিসেব অনুযায়ী, এ পণ্যগুলোর বর্তমান বাজার মুল্য যথাক্রমে ১৬৮ টাকা, ১০০ টাকা, ৮০ টাকা এবং ৩৮ টাকা৷

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণেই নিম্নবিত্তের সাথে মধ্যবিত্তও লাইনে শামিল হচ্ছেন৷ তাদের অনেকেই আবার সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখলে মুখ লুকান৷  নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়তে থাকায় আয়ের সাথে ব্যয় মিলাতে না পেরে তারা টিসিবির পণ্যের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের৷                                             

‘আগে শুধু নিম্নবিত্তরাই টিসিবির পণ্য কিনতেন’

ক্যাব-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজের হোসাইন বলেন, ‘‘আসল কথা হলো মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে৷ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে আয় বাড়ছে না৷ ফলে টিসিবির লাইন দীর্ঘ হচ্ছে৷ মধ্যবিত্তও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে৷ টিসিবির লাইনে দাঁড়ানো ছাড়া তাদের উপায় নেই৷ কিন্তু সেখানেও পর্যাপ্ত পণ্য না থাকায় তারা হতাশ হচ্ছেন৷’’

সক্রিয় প্রতারক চক্র!

এদিকে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতিদিনই সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে হুড়োহুড়ি হচ্ছে৷ আবার শেষ পর্যন্ত পণ্য না পেয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷

পণ্য না পাওয়ার জন্য প্রতারকচক্রকে দায়ী করছেন ভোক্তারা৷

জানা গেছে, বিভিন্ন প্রতারকচক্র সংঘবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে একাধিকবার পণ্য কিনে খোলা বাজারে লাভে বিক্রি করছে৷ তাদের হাতে অনেক সময়ই সাধারণ ক্রেতারা নাজেহাল হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷

এ বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র হমায়ুন কবির বলেন, ‘‘পণ্যের মান ভালো এবং দাম অনেক কম হওয়ায় একটি চক্র একাধিকবার লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিয়ে  লাভের জন্য খোলা বাজারে বিক্রি করে৷ তারাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অন্যদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে৷ ফলে কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত পণ্য পান না৷ আমাদেরও করার কিছু থাকে না৷ কারণ প্রতারকদের ঠেকানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় বাড়তি জনবল আমাদের নেই৷’’

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সারাদেশে ৪৫০টি পয়েন্টে এখন ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে৷ এর মধ্যে ঢাকা শহরসহ ঢাকা বিভাগে ১০১টি পয়েন্টে পণ্য বিক্রি হয়৷ শুক্রবার বাদে সপ্তাহে প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাকে দিনে ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল, ৪০০ কেজি ডাল, ৫০০ কেজি চিনি এবং ৫০০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়৷

একজন ক্রেতা সয়াবিন তেল দুই লিটার, চিনি ও মসুর ডাল দুই কেজি এবং পেঁয়াজ সর্বনিম্ন দুই কেজি থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি কিনতে পারেন৷

টিসিবির প্রত্যাশা, ওই পণ্য শেষ হওয়ার পরই ক্রেতারা আবার কিনবেন৷ কিন্তু দেখা যায়, অনেকে প্রতিদিনই কেনেন৷ আর প্রতারকচক্র তো আছেই৷

‘প্রতারকদের ঠেকাতে বাড়তি জনবল আমাদের নেই’

টিসিবি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জুয়েলও মনে করেন, টিসিবির পণ্যের মান এখন অনেক ভালো এবং দাম কম তাই মানুষের আগ্রহ বাড়ছে৷ মধ্যবিত্তদের কেউ কেউ এখন লাইনে দাঁড়ান৷ তার কথা, ‘‘আগে এরকম দেখিনি৷ আগে শুধু নিম্নবিত্তরাই টিসিবির পণ্য কিনতেন৷’’

লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকের পণ্য না পাওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, লাইনে যারা দাঁড়ান শেষ পর্যন্ত তাদের সবাই পণ্য পান না৷ দুই-তিন ঘন্টা দাঁড়ানোর পরও কেউ কেউ ফিরে যান৷ কারণ পণ্য সীমিত৷

তিনি বলেন, ‘‘দলবেধে লাইনে দাঁড়িয়ে একাধিকবার পণ্য কেনার ঘটনা তারা ধরে ফেললেও কিছু করার থাকেনা৷ কারণ পরিস্থিতি সামলানোর মতো লোকবল আমাদের নেই৷ আমরা তাদের চিহ্নিত করতে বিক্রি বন্ধ করলেও আবার বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হয়৷’’

উল্লেখ্য, আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রির কর্মসূচি শেষ হলেও মার্চ থেকে আবারো শুরু হবে৷ রমজান মাসেও চলবে৷ এবার পণ্য এবং বিক্রির আওতা দুইটোই আরো বাড়ানো হবে৷

আর যারা ইতিমধ্যে দুই হাজার ৫০০ টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা পেয়েছেন তাদের তালিকা করে তারা যাতে টিসিবির ন্যায্য মূল্যের পণ্য পান তা নিশ্চিত করা হবে৷

এদিকে পেঁয়াজের সংকটের সময় অনলাইনে টিসিবির পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হলেও তা এখন আর চালু নেই৷