1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অন্ধবিশ্বাসের পাহাড়ে জাঁকিয়ে বসেছে ‘‌বাবারা’

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২৬ আগস্ট ২০১৭

ভারতে স্বঘোষিত ভগবানের দূতের ছড়াছড়ি৷ কেবল ভোটবাক্সের লোভে রাজনৈতিক নেতাদের তোষামোদের কারণে ক্রমেই প্রভাব বাড়ছে ‘‌বাবা'দের৷ গুরমিত রাম রহিমকে ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছে সিবিআই আদালত৷

https://p.dw.com/p/2itHz
Indien - Guru und Religiöser Führer - Gurmeet Ram Rahim Singh Insan
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Pal Singh

‌এক ‘‌বাবা', হাজার গুণ তার৷ সে ‌একই সঙ্গে গায়ক-‌নায়ক, দার্শনিক, খেলোয়াড়, চিত্রপরিচালক, শিল্প নির্দেশক, সঙ্গীত পরিচালক, লেখক, সুরকার, জীবনীকার... আরও কত কী! টুইটার হ্যান্ডেলে এমনটাই উল্লেখ৷ নিজের ওয়েবসাইটে, ‘সাধু চিকিৎসক গুরমিত রাম রহিম সিংহ জি ইনসান'৷ আর সিনেমায় সে ভগবানের দূত, ‘ম্যাসেঞ্জার অব গড'৷ কিন্তু আদতে সে যে একজন ধর্ষক তা প্রমাণ হলো আদালতে৷

রামরহিমের ব্যভিচারের বিরুদ্ধে প্রথম আলোকপাত করেছিলেন এক সাংবাদিক৷ তিনি রামচন্দ্র ছত্রপতি৷ পরে এক সাধ্বীর গোপন চিঠি পেয়ে ২০০২ সালে সিবিআই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গুরমিতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা শুরু করে৷ এর পরেই ডেরা সচ্চা সৌদার ম্যানেজার রঞ্জিত সিংহ খুন হয়ে যান৷ ওই বছরই অক্টোবরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন ‘পুরা সচ'-র সম্পাদক ছত্রপতিও৷ দু'টি খুনের মামলাই এখনও চলছে৷

কখনও খুন হতে হয়েছে, তো কখনও তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলার পরে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন তাঁর গাড়ির চালক৷ অভিযোগ, চারশো ভক্তকে জোর করে লিঙ্গচ্ছেদ করিয়েছিলেন এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু৷ সে সময়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, এতে মেয়েরা সুরক্ষিত হবেন ও ভগবানের আরও কাছাকাছি পৌঁছতে পারবেন সাধকেরা৷ এত অভিযোগের পরেও বিশ্বজুড়ে রামরহিমের ভক্ত সংখ্যা ৬ কোটি৷ আর তাঁদের দানে, ‘‌বাবা'‌র সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় লক্ষ কোটি৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর একজন ‌বাঙালি কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘‌কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে গোপন রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে৷ অনেক তথ্য পাওয়া গেছে৷ রাম রহিমের মতো আরও কিছু সাধু বাবার ওপর নজর রাখা শুরু হয়েছে৷ এরা ধর্মের আড়ালে সমাজের একটা অংশে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে৷ গোয়েন্দারা গোপন রিপোর্ট তৈরি করছে, তদন্ত করছে৷ এক সাংবাদিক প্রথমে বিষয়টি সামনে এনেছিলেন, তারপর থেকেই নড়েচড়ে বসেছিল গোয়েন্দারা৷ কিন্তু, ধুরন্ধর রাম রহিমকে সেইভাবে বাগে আনা যায়নি৷'‌'‌‌

আগাম সতর্কতা ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের৷ ধর্ষণ মামলায় ‘‌বাবা'‌ গুরমিত রাম রহিম দোষী সাব্যস্ত হলে হরিয়ানার পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে৷ কিন্তু, তা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি হরিয়ানা সরকার৷ শুক্রবার প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজ্য জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে ডেরা সাচা সমর্থকরা৷ প্রাণ গেছে ৩১ জনের, শতাধিক মানুষ গুরুতর জখম৷ কয়েকশো যানবাহন পুড়ে ভস্ম৷ সরকারি অফিস, রেলস্টেশন, বিদ্যুৎ দপ্তরে অগ্নিসংযোগ করতেও পিছপা হয়নি রাম রহিমের ভক্তরা৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বত্র সেনা নামানো হয়েছে৷ কিন্তু এখনও আতঙ্ক কাটছে না৷ অশান্তির আশঙ্কায় শনিবার সকাল থেকে গোটা হরিয়ানা-‌সহ পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজধানী দিল্লির একাংশে কার্ফ্যু (‌১৪৪ ধারা)‌জারি করা হয়েছে৷ বাড়ির বাইরে পা রাখার সাহস দেখাচ্ছেন না কেউ৷ গুণ্ডামি রুখতে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন সবাই৷

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রাম রহিমের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে৷ রামরহিমের কুকীর্তি নিয়ে সরব হয়েছেন তারকারা৷

ভারতের বিখ্যাত কয়েকজন ‘বাবার’ কথা

আশারাম বাপু — নামটা কেউ এখনও ভুলে যায়নি। বিপুল ক্ষমতার অধিকারী৷ ২০১৩ সালে ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে৷ জানা গেছে, ‘‌বাবা’‌র বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে গোটা দেশ তোলপাড়৷ জল গড়াল আদালতে৷ তারপর এখনও বাবা গারদের ওপারেই৷

স্বামী নিত্যানন্দ — ইনিও এক স্বঘোষিত ধর্মগুরু৷ ২০১০ সালে স্টিং অপারেশে টিভির পর্দায় ফাঁস হয় তাঁর কীর্তি৷ দক্ষিণের এক অভিনেত্রীর সঙ্গে আপত্তিজনক অবস্থায় দেখা যায় বাবাকে৷ সেই ভিডিও সম্প্রচারিত হতেই হুলস্থূল পড়ে যায়৷ সিআইডি তদন্তের মুখোমুখি হতে হয়েছিল বাবাকে৷ সেবারও বাবার গ্রেপ্তারিতে ভক্তকূল আকুল হয়ে প্রতিবাদ জানায়৷

‘এরা ধর্মের আড়ালে সমাজের একটা অংশে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে’

স্বয়ম্ভূ বাবা শিব দ্বিবেদী — এই বাবার গুণও কম নয়৷ কেউ কেউ আবার বলতেন সন্ত স্বামী ভীমানন্দ৷ মহারাজ চিত্রকূটওয়ালে নামেও পরিচিত৷ রীতিমতো ‘‌সেক্স ব়্যাকেট'‌ চালানোর অভিযোগ উঠেছিল এই ‘‌বাবা'‌র বিরুদ্ধে৷ দেহব্যবসায় জড়িত থাকার জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷

বিক্রম চৌধুরী — হট যোগ বিখ্যাত হয়েছিল বিক্রম চৌধুরির কল্যাণে৷ একাধিক যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে এর নামে৷

স্বামী ওম —টেলিভিশন শো ‘‌বিগ বস'‌-‌এর কল্যাণে এর নাম অনেকেই শুনেছেন৷ ইনি আবার প্রকাশ্যে নগ্ন কন্যাকে যোগ গুণ শিখিয়েছেন৷ ভাইরালও হয়েছিল সেই ভিডিও৷ কিছুদিন আগে আবার নিজের কাণ্ডকারখানার জন্য মহিলাদের হাতে মারও খেয়েছেন ওম৷ তবে, স্বঘোষিত বাবাজি আজও শোধরাননি৷

অন্যদিকে, জেলে গিয়েও বহাল তবিয়তে গুরমিত রাম রহিম৷ কার্যত ভিআইপি মর্যাদা পাচ্ছে সে৷ মিনারেল ওয়াটারের জোগান রয়েছে৷ এমনকি তার সঙ্গে রয়ছে এক সহযোগীও৷ দোষী সাব্যস্ত করার পর অনুগামীদের তাণ্ডব নিয়ে এপর্যন্ত একটি শব্দও খরচ করেনি রাম রহিম৷ আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখে হরিয়ানার বিজেপি শাসিত সরকার৷ স্বঘোষিত ধর্মগুরুর এই ভিআইপি জেল জীবন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷

এদিকে, সকাল হতেই অভিযানে নামে হরিয়ানা সরকার৷ কুরুক্ষেত্র, আম্বালা এবং কৈথাল মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ডেরা সাচার মোট ৩৬টি আশ্রমে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ গুরমিত রাম রহিমের ছয় দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করেছে চণ্ডীগড় পুলিশ৷ একে ৪৭-‌সহ প্রচুর বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র এবং কেরোসিন তেল ও পেট্রোলের টিন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আটক করা হয়েছে প্রায় ৬০০ ডেরা সমর্থককে৷ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সংগঠনের ৬০টি গাড়িও৷

ওদিকে, রাম রহিম অনুগামীদের গুণ্ডাগিরির পর থমথমে হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের একাংশ৷ বন্ধ দোকানপাট৷ স্কুল-কলেজে ছুটি দেওয়া হয়েছে৷ এলাকায় চলছে সেনার ফ্ল্যাগমার্চ৷ অশান্তি এড়াতে ডেরা সাচার সদর দপ্তর ঘিরে রেখেছে সেনা৷ হরিয়ানায় ১১ জেলা এবং পাঞ্জাবের ৯টি জেলায় কারফিউ জারি হয়েছে৷ দুই রাজ্যের পরিস্থিতি অগ্নগর্ভ থাকায় উত্তর রেলের ৪৪৫টি ট্রেন বাতিল হয়েছে৷

২৮শে আগস্ট পর্যন্ত উপদ্রুত এলাকায় ট্রেন চলবে না৷ মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর গাফিলতির দায় মানলেও তাঁর কোপে পড়েছেন সরকারি আধিকারীকরা৷ কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে পাঁচকুলার ডিএসপিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ বরখাস্ত করা হয়েছে জেলাশাসককে৷

এ বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান