1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্ম নিয়ে ফের বিতর্কিত মন্তব্য আরএসএস প্রধানের

৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

ভারতীয় মুসলিমরাও আসলে ঐতিহাসিকভাবে হিন্দু। মুম্বইয়ের অনুষ্ঠানে মোহন ভগবতের বিতর্কিত মন্তব্য।

https://p.dw.com/p/400de
Mohan Bhagwat Anführer der Organisation Rashtriya Swayamsevak Sangh
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images

ভারতে যারা বসবাস করেন, তাদের সকলের পূর্বপুরুষই এক। সকলেই হিন্দু। সেই অর্থে সকল ভারতীয় নাগরিকই হিন্দু। মুম্বইয়ের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ফের বিতর্কিত মন্তব্য করলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত। তার বক্তব্য নিয়ে ভারতীয় নাগরিক সমাজে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

মুম্বইয়ের মুসলিম বিশিষ্টজনেদের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন মোহন ভগবত। সেখানে সমাজে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কথা বলছিলেন তিনি। কট্টরবাদী সংগঠনগুলি থেকে কেন দূরত্ব তৈরি করা দরকার, সে বিষয়ে নিজের মতামত জানাচ্ছিলেন। এমনকী তালেবানের প্রসঙ্গও তোলেন বক্তৃতায়। এ সব বিষয়ে কথা বলতে গিয়েই ভগবত দাবি করেন, ''ভারতের ইতিহাস সহনশীলতার। এদেশের পূর্বপুরুষরা সকলেই হিন্দু ছিলেন। ইসলাম এসেছিল আক্রমণকারীদের সঙ্গে। তার আগে সকলেই হিন্দু ছিলেন।'' ভগবতের দাবি, সেই বিচারে এখনো ভারতের সমস্ত নাগরিকই হিন্দু

এর আগেও এধরনের উসকানিমূলক কথা বলেছেন মোহন ভগবত। ভারত এবং ইন্ডিয়াকে আলাদা চোখে দেখার কথা বলেছেন। তার এদিনের বক্তব্য নিয়ে খোদ আরএসএস-এর মধ্যেই দ্বিমত আছে। সাবেক আরএসএস নেতা কে এন গোবিন্দাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, মোহন ভগবতের এ ধরনের কথা সম্পূর্ণ অর্থহীন। তাঁর বক্তব্য, ''অতীতই যদি খুঁজে বার করতে হয়, তাহলে দেখা যাবে রাবণ এবং বশিষ্টমুণির ডিনিএ এক। তার মানেই কি তারা এক হয়ে গেলেন?'' তার কথায়, যদি দেশের মুসলিম সম্প্রদায়কে এই চোখেই দেখা হবে, তাহলে বার বার তাদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশকারীর অভিযোগ আনা হয় কেন? কেন গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষকে এক চোখে দেখা হয় না। অনুপ্রবেশকারী এবং শরণার্থীকে আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়?

মোহন ভগবতের এই বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্ট রাজনীতি  আছে বলে মনে করেন ইতিহাসের অধ্যাপক এবং গবেষক অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বক্তব্য, ''ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের ইতিহাস দীর্ঘ। আরএসএস তা যে দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে, তা অনৈতিক। এই ভূখণ্ডে শতাব্দী ধরে মুসলিমরা বসবাস করছেন। সেটা মাথায় রেখেই আলোচনা হওয়ার কথা। পিছনে তাকালে তো এপ, বনমানুষ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া যায়!'' অনির্বাণের মতে, ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো তার বৈচিত্র্য। ঐক্য কিংবা সম্প্রীতি তৈরি হবে সেই বৈচিত্র্যকে উদযাপন করলে। ভগবত ঠিক তার উল্টো পথে হেঁটেছেন।

মোহন ভগবতের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার শরদ গুপ্তা। মুম্বই থেকে তিনি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বিষয়টিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে। আরএসএস জাতীয়তাবাদী মুসলিমের একটি ব্লক তৈরি করতে চাইছে। যাদের সামনে রেখে তারা নিজেদের হিন্দুত্ববাদী ভাবনাটিকে মুসলিম সমাজেও ছড়িয়ে দিতে চাইছে। সে জন্যই এ ধরনের মন্তব্যের জন্য ভগবত মুসলিমদের অনুষ্ঠান বেছে নিয়েছেন।''

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, মোহন ভগবত যথেষ্ট ভেবে-চিন্তেই এ কাজ করেছেন। সামনে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন। সেখানে বিভাজনের রাজনীতি খুব চড়া সুরে বাঁধা। বিজেপি সেখানে বরাবরই হিন্দুত্ববাদী তাস খেলার চেষ্টা করে। এবারও করছে। সেই বিষয়টিকেই আরেকটু উসকে দিয়েছেন ভগবত। এ নিয়ে রাজনৈতিক স্তরে আলোচনা হলে ভোটে তার প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন তারা।