1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার উদ্যোগ

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
১৬ মে ২০১৮

ভারতের বহু জায়গার মতো বিজেপি-‌শাসিত হরিয়ানাতেও সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরির চেষ্টা চলছে৷ এর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে শুক্রবারের নামাজকে৷ তবে বিতর্কে জল ঢালতে উদ্যোগী হয়েছে ওয়াকফ বোর্ড৷ পথে নেমেছে নাগরিক সমাজও৷

https://p.dw.com/p/2xlV4
Indien Lucknow Unabhängigkeitstag
ছবি: DW/S. Waheed

হরিয়ানার গুরুগ্রাম শহরে এতদিন ১২৫টি খোলা জায়গায় নামাজ পড়তেন মুসলমানরা৷ প্রশাসন ১০০টি জায়গায় নামাজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছে৷ মাত্র ২৫টি জায়গায় শুক্রবারের প্রার্থনা করতে পারছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন৷ মূলত ২২টি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের আপত্তির জেরেই এই সিদ্ধান্ত৷ ঘটনার সূত্রপাত কয়েক সপ্তাহ আগে৷ গুরুগ্রামের সেক্টর ৫৩-তে ওয়াজিরাবাদে এক সরকারি জায়গায় একদল যুবক আচমকাই নামাজের জন্য জড়ো হওয়া মানুষদের বাধা দেয়৷ তাদের নামাজ ভন্ডুল করে দেয়৷ ভয়ে, অনেকেই ফিরে যান৷ ওই যুবকদের বক্তব্য ছিল, ‘‌প্রকাশ্যে নয়, নামাজ পড়তে হবে শুধুমাত্র মসজিদ বা দরগাতেই৷'‌

এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে শহরের ওয়াজিরাবাদ-‌সহ সাইবার পার্ক, বখতাওয়ার, আতুল কাটারিয়া চক এবং সাউথ সিটি এলাকাতেও৷ নামাজে আপত্তি তকোলা সংগঠনগুলির মধ্যে রয়েছে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল, হিন্দু ক্রান্তি দল, গো-রক্ষক দলের মতো ২২টি সংগঠন৷ তারা ‘‌সংযুক্ত হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি'‌ তৈরি করেছে৷

কিন্তু সমস্যাটা হলো, গুরুগ্রামে যথেষ্ট মসজিদ নেই৷ অন্যদিকে, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলায় বাধ্য হয়েই খোলা জায়গায় নামাজ পড়তে হচ্ছে তাদের৷ হরিয়ানা ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান রহিশ খানের বক্তব্য, ‘‘‌‌গুরুগ্রাম শহরে বোর্ডের ২০টি জায়গা চিহ্নিত করেছি আমরা৷ এর মধ্যে অনেক জায়গা জবরদখল হয়ে রয়েছে৷ এখন সরকার যদি জবরদখলকারীদের হঠাতে সাহায্য করে, তাহলে যেখানে মুসলিমরা জুম্মার নামাজ পড়তে পারবেন৷'‌'‌ প্রসঙ্গত গুরুগ্রামে ১২,০০০ সম্পত্তি আছে বোর্ডের, যার মধ্যে ৪,০০০ জবরদখলকারীদের হাতে৷

লোকসভার সাংসদ ইদ্রিস আলি বলেন, ‘‌‘‌বিষয়টা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক৷ যাঁরা জুম্মার নামাজে বাধা দিচ্ছেন, তাঁরা নামাজ কী জিনিস তা-‌ই জানেন না৷ বোঝেনও না৷ ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ৷ সংবিধানে সব ধর্মের মানুষকে নিজের নিজের ধর্মাচরণের অধিকার দেওয়া আছে৷ সেসব না জেনেই বিশেষ উদ্দেশ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে৷ কিছু মানুষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এইসব করছে৷ আমাদের সমাজ ও দেশে নামাজে বাধা দেওয়ার ঘটনা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না৷'‌'‌

ইদ্রিস আলী

বেছে বেছে মুসলিমরা কেন? অন্যান্য ধর্মের মানুষরাও তো ধর্মাচরণ করেন৷ সে বিষয়ে তাঁর পালটা প্রশ্ন, ‌‘‘হিন্দুদের দেব-‌দেবী পুজোতেও তো পথ আটকে প্যান্ডেল হয়৷ অনেকের অসুবিধআ হয়৷ কিন্তু সব ধর্মের মানুষ তো সেটা মানিয়ে নেয়৷ তাহলে এক্ষেত্রে এমন আচরণ করা হচ্ছে কেন?‌''

এত সবের মধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর হিন্দুত্ববাদীদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন৷ তাঁর সাফ কথা‘‘সরকারি জমি নমাজ পড়ার জায়গা নয়৷ নামাজ পড়া উচিত ইদগাহ বা মসজিদের ভেতর৷''

খট্টর বলেন, ‘‌‘আইন-‌শৃঙ্খলা বজায় রাখা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব৷ ইদানীং খোলা আকাশের নীচে, জনবহুল এলাকায় নমাজ পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ সরকারি জায়গার বদলে মসজিদ বা ইদগাহে নামাজ পড়লেই তো হয়৷''

বলা বাহুল্য, বিষয়টি নিয়ে পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত৷ তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৫ মে পর্যন্ত সমস্ত সরকারি কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে সরকার৷ উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনাও চলছে৷

তবে দেশটার নাম ভারত৷ মুসলিমদের ওপর অন্যায় হলে এগিয়ে আসেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন হিন্দুরাই৷ ঠিক যেমনটা হয়েছে গুরুগ্রামেও৷ সেখানকার নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে পুরো ঘটনার তীব্র নিন্দা করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে৷

রাহুল রায়

সংগঠনের কর্ণধার রাহুল রায় বলছেন, ‘‌‘‌আমরা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে গুরুগ্রামের পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছি৷ নামাজে হামলা রোখার আর্জি জানানো হয়েছে৷ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে৷ শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে৷ গুরুগ্রাম অত্যন্ত বড় ও জনবহুল শহর৷ এখানে মাত্র ১৫টি মসজিদ আছে৷ এত মানুষ কোথায় যাবেন?‌ একটি ধর্মের মানুষের এই সমস্যার সমাধানে রাজ্য সরকারকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে৷ পুলিশ কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন৷''

গুরুগ্রামের পুলিশ কমিশনার সন্দীপ খিরবারের বক্তব্য: ‘‘চিন্তা করবেন না৷ আমরা এলাকায় কোনো অশান্তি বরদাস্ত করব না৷ ধর্মীয় কোনো সমস্যা হলে আলাপ-‌আলোচনার মাদ্যমে তা মিটিয়ে নেওয়া হবে৷''

সংযুক্ত হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির অধ্যক্ষ রাজীব মিত্তলের প্রশ্ন, ‌‌‘‘এতদিন আমরা আপত্তি তুলিনি, কারণ এতদিন রাস্তায় নেমে কেউ নামাজ পড়েনি৷ এখন হঠাৎ করে অন্যের সমস্যা তৈরি করে খোলা জায়গায় নামাজ পড়া হচ্ছে৷ আচমকা একটি সম্প্রদায়ের এত মানুষ কোথা থেকে এলেন?‌''

সংগঠনের মহামন্ত্রী মহাবীর ভরদ্বাজ তো আরও একধাপ এগিয়ে অভিযোগ করেছেন: ‘‌‘রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলিমরা গুরুগ্রামে এসে উঠেছে গুরুগ্রামে৷ সংখ্যাটা নাকি প্রায় চার লক্ষ৷ কারও সঙ্গে বিরোধ নেই৷ সরকার ও প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে মাত্র৷ সরকার জল আর দুধ আলাদ করুক৷''

স্থানীয় বাসিন্দা মৌলানা রিজওয়ান সাকলাইন যদিও বলছিলেন, ‘‘‌‌দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মুসলমান সম্প্রদায়ের বহু মানুষ এই শহরে কাজের সন্ধানে আসেন৷ বেশিরভাগই গরিব শ্রমিক৷ শহরে মসজিদ খুবই কম৷ ফলে জুম্মার নামাজের জন্য বাধ্য হয়েই কোনো ফাঁকা জায়গায় যেতে হয়৷''

‘‌‘কাউকে বিরক্ত করা, কারও সমস্যা তৈরি করা ‌নামাজের উদ্দেশ্য নয়৷ এখন গুরুগ্রামে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তার শান্তিপূর্ণ সমাধানই কাম্য৷ ওয়াকফ বোর্ড যে প্রস্তাব দিয়েছে তা সাধুবাদের যোগ্য৷ বোর্ডের সম্পত্তি দখলমুক্ত করুক সরকার৷ তাতে উভয়েরই সুবিধা হবে৷ রাজ্য সরকার ও বোর্ড বৈঠক করে সমাধান করুক৷'‌'‌

প্রসঙ্গত, ভারতের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি হাব হিসেবে ধরা হয় গুরুগ্রাম শহরকে৷ এখানে বহুজাতিক কোম্পানি, সুবিশাল অট্টালিকার সারি এবং বিশ্বখ্যাত সব শপিং মলের ভিড়৷ দেশের এই শহর ‘‌মিলেনিয়াম সিটি'‌ নামেও পরিচিত৷ এর আগে শহরটির নাম ছিল গুড়গাঁও৷ ২০১৬ সালের এপ্রিলে হিন্দু পুরাণ মহাভারতের চরিত্র গুরু দ্রোনাচার্যের নামে শহরের নাম পরিবর্তণ করে নতুন নামকরণ করা হয় গুরুগ্রাম৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য