1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নদীবক্ষে বালি খনন পরিবেশের পক্ষে বড় চ্যালেঞ্জ

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
৭ মে ২০১৯

নদীবক্ষ থেকে অবৈধভাবে বালি খনন বন্ধ করার দাবিতে হরিদ্বারে অনশনে বসেন সাধকপুরুষ ও সমাজসেবী স্বামী আত্মবোধানন্দ৷ ১৯৪ দিন অনশনে থাকার পর সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় অনশন ভঙ্গ করেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/3I4K3
Kolumbien Sandabbau
ছবি: Getty Images/AFP/G. Legaria

গঙ্গা এবং ভারতের অন্যান্য বড় বড় নদীগর্ভ থেকে মাফিয়াদের অবৈধভাবে  বালি খনন ও উত্তোলনের দৌরাত্মে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ব্যাহত হয়ে আসছে৷ ধীরে ধীরে নদীর গোটা ইকো-সিস্টেম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে৷ এটা বন্ধ করতে না পারলে পরিবেশের সমূহ বিপদ৷ এই দাবির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রতিবাদ অনশনে বসেন হরিদ্বার মাতৃসদনের সাধকপুরুষ, তথা প্রকৃতিপ্রেমী ২৭ বছর বয়সি আত্মবোধানন্দ স্বামী৷ পাশাপাশি তাঁর আরো দাবি, গঙ্গানদীর জলের গভীরতা বাড়াতে যেসব নদী গঙ্গায় এসে মিশেছে, সেইসব নদীতে বাঁধ দেওয়া বা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণকার্য নিয়ন্ত্রনের জরুরি ব্যবস্থা বলবৎ করা৷ উপায়ন্তর না দেখে জাতীয় স্বচ্ছ গঙ্গা মিশনের মহাঅধিকর্তা রাজীব রঞ্জন মিশ্র আত্মবোধানন্দ স্বামীকে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি তাঁর ১৯৪ দিনের অনশন ভঙ্গ করেন৷ এর আগে, প্রাক্তন অধ্যাপক এবং সাধকপুরুষ ৮৬ বছর বয়সি জি.ডি আগরওয়াল একই দাবিতে অনশন শুরু করেন৷ অনশনের ১১২ দিনের মাথায় তিনি মারা যান৷

 নমামী গঙ্গে মিশন গঙ্গা ও অন্যসব বড় বড় নদীর পাশের শিল্প-কারখানার দূষিত ও বর্জ্য পদার্থ এবং পয়ঃপ্রণালীর নোংরা জল যাতে গঙ্গায় পডতে না পারে, সেদিকটা দেখে থাকে৷ সেখানেও গলদ৷ সরকারের বিরুদ্ধে পরিবেশ কর্মীদের ক্ষোভ, সরকার সেটাও ঠিকমতো করছে না৷ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ৷ যার পরিণামে গঙ্গার স্বাভাবিক গতিস্রোত ব্যাহত হচ্ছে৷ বিপন্ন হচ্ছে নদীর ইকো-সিস্টেম৷ ভারতের হিমালয় রাজ্য উত্তরাখন্ডে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে অনুমতি দেওয়ায় নদীর স্বাভাবিক জলপ্রবাহ রুদ্ধ হচ্ছে৷ ফলে নদীজলের স্বচ্ছতা প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে৷ এসব বিষয় নিয়ে গত এপ্রিল মাসে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয় এবং নদীবক্ষে বালি খনন নিষিদ্ধ আইন আরো কঠোরভাবে কার্যকর করার আশ্বাস দেওয়া হয়৷

‘‘উত্তরাখন্ড সরকারের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প আইন পর্যালোচনা করার কথাও বলা হয়৷ তবে বর্তমানে সাধারণ নির্বাচনের ভোটপর্ব চলেছে, নির্বাচনি বিধি বলবৎ আছে৷ কাজেই এই মূহুর্তে কিছু করা যাবে না৷ কিন্ত নির্বাচনের পরেও যদি কিছু করা না হয়, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভেবে দেখতে হবে,'' বলেন স্বামী আত্মবোধানন্দ স্বামী৷ পরিবেশ কর্মীদের দাবি, উত্তরাখন্ডের অলকানন্দা, ধৌলি গঙ্গা, মন্দাকিনি এবং পিন্ডারা নদীর উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করতে হবে এবং গঙ্গার জলপ্রবাহ অবাধ রাখতে আইন প্রণয়ন করতে হবে৷

বালি তোলার ফলে জলের ইউনিফর্ম লেভেল বজায় থাকছে না: সুভাষ সাঁতরা

এই বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বললেন নদী, তথা পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সুভাষ সাঁতরা৷ তাঁর কথায়, ‘‘বালি তোলার ফলে নদীর যে গভীরতা তা কমে যাচ্ছে এবং জায়গা বিশেষে নদীর স্রোতে অদলবদল হচ্ছে৷ জলের একটা অভিন্ন মাত্রা, যাকে বলে ইউনিফর্ম লেভেল, তা বজায় থাকছে না৷ তারজন্য মাছ বা বিভিন্ন জলজ প্রজাতির প্রাণীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে৷ এছাড়া অন্য বিপদও আছে৷ যেমন, নেভিগেশন. বালি খননের সবথেকে বড় বিপদ স্রোতের ভাটির দিকের জলজ উদ্ভিদ, যেটা মাছদের আহার৷ তার উত্পাদনশীলতা কমে যাচ্ছে৷ যেসব পচা জিনিষ সেডিমেন্টেশনে যায়, সেটা মিক্সিং হয়ে যায়৷ তাতে জলজ প্রাণীর আয়ু কমে যায়৷ জলজ প্রাণীদের দেহে বিষক্রিয়া হতে পারে৷ বালি খুঁডলে সেটা সাসপেন্সশনে চলে যায়৷ সেডিমেন্টেশনে আবার ফিরে আসতে বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ লেগে যায়৷ নদীর ভাটির দিকে প্রোডাক্টিভিটির প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়৷''

পরিবেশবিজ্ঞানী সুভাষ সাঁতরা ডয়চে ভেলেকে আরো বললেন, ‘‘দ্বিতীয়ত, নদীতে বাঁধ দেবার ফলে এমন অনেক প্রজাতির মাছ আছে, কেউ চলে যায় উজানের দিকে, কেউ চলে যায় ভাটির দিকে৷ সেটা মাছেদের প্রজননের পক্ষে প্রতিকূল৷ বালি খনন বা নদীতে বাঁধ দেবার ফলে মাছেদের মতো অন্য জলজ প্রজাতির প্রজননেও সমস্যা দেখা দেয়৷ ডিম নষ্ট হয়ে যায়৷ মাছের উত্পাদন যথেষ্ট কমে যায়৷ এছাড়া গঙ্গায় যেসব ডলফিন বা শুশুক আছে, ঘড়িয়াল আছে, তাদের প্রজননও কমে যাচ্ছে৷ উজানে ফারাক্কার কাছে হয়ত কিছু শুশুক বা ঘড়িয়াল পাবেন, সংখ্যায় খুবই কম৷ মাঝখানটায় না থাকার মতো৷ আবার বিহারের ভাগলপুরের কাছে একটা জায়গা আছে, সেখানেও কিছু কিছু ডলফিন এবং ঘড়িয়াল চোখে পড়বে৷ মোট কথা, নদীর পুরো ইকোলজিটা ভেঙে পড়ছে ধীরে ধীরে৷ তা সে বালি তোলা বলুন, ড্রেজিং বলুন বা বাঁধ তৈরি বলুন৷ ভারতের সব নদীরই মোটামুটি একই দূরবস্থা৷ কোথাও নদীর জল যাচ্ছে শিল্প কারখানায়, কোথাও যাচ্ছে সেচের কাজে৷ আর এসব করতে গিয়ে অনেক নদীতে জল এতটাই কমে গেছে যে, জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকাই এখন দায়৷''

আসলে ভারতে ইমারতি ব্যবসা চড়চড়িয়ে বাড়ছে৷ তার সঙ্গে তাল রেখে বাড়ছে বালির চাহিদা৷ সরকার ২০২২ সালের মধ্যে কম দামের আরো প্রায় দুই কোটি বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেছে৷ এমনিতে বছরে চাহিদা-জোগানের অনুপাতে প্রায় ৫০ হাজার টন বালি তোলা হয় নদীবক্ষ থেকে৷ ফলে বাড়ছে বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম৷ কোনো আইন-কানুন নিষেধাজ্ঞা এদের থামাতে পারছে না৷ এমনকি সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞারও তোয়াক্কা করে না এরা৷ এই শক্তিশালী মাফিয়া চক্র ভয় দেখিয়ে হোক, ঘুস দিয়ে হোক, চাকরির লোভ দেখিয়ে হোক, তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিনা বাধায়৷ সংসদে পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় চার লাখ ১৬ হাজার অবৈধ বালি খননের ঘটনা জানা গেছে৷ সবথেকে বেশি দিল্লির যমুনা নদীতে, পাঞ্জাবের শতদ্রু নদীতে, মধ্যপ্রদেশের চম্বল  এবং ওড়িষার সুবর্ণনদীতে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য