1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নব্য নাৎসি আন্দোলন তৃণমূল স্তরের কার্যকলাপের জোরেই টিকে রয়েছে: আন্দ্রেয়া ব়্যোপকে

১৫ এপ্রিল ২০০৯

জার্মানির এনপিডি দলের আর্থিক দুরবস্থাই কি শেষ পর্যন্ত দলটিকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবে? নাকি চরমপন্থী আদর্শের জোরে ঐ দল টিকে যাবে? ঐ দলের কার্যকলাপের উপর দীর্ঘদিন ধরে নজর রেখে চলেছেন সাংবাদিক আন্দ্রেয়া ব়্যোপকে৷

https://p.dw.com/p/HXm4
সমাজের মূল স্রোতে স্থান করে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এনপিডি দলছবি: picture-alliance/dpa

প্রশ্ন: সরকারকে জরিমানা দিতে হলে এনপিডি দলের অস্তিত্ব কি বিপন্ন হয়ে উঠবে?

উত্তর:

আমার তা মনে হয় না৷ তবে হ্যাঁ, নির্বাচনের এই বছরে এনপিডি সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করে কয়েকটি রাজ্যে পুরোদমে প্রচারাভিযান চালাতে চেয়েছিল৷ এই আর্থিক সঙ্কট দলের জন্য স্বাভাবিকভাবেই এক বিপর্যয় ডেকে এনেছে৷ দলের নেতা উডো ফোগ্ট্ অবশ্য হার মানতে রাজি নন৷ তিনি বলেছেন, যাই হোক না কেন এনপিডি টিকে যাবেই৷ মনে রাখতে হবে, অতীতেও তারা অনেক সঙ্কট কাটিয়ে উঠেছিল৷

প্রশ্ন: যদি এনপিডি দল মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে জার্মানির উগ্র দক্ষিণপন্থী শিবিরের বিরুদ্ধে সংগ্রামের উপর কী প্রভাব পড়বে?

উত্তর:

আমার মনে হয়, উগ্র দক্ষিণপন্থী আন্দোলনের মূল কেন্দ্রই হল এই এনপিডি দল৷ এই দল দুর্বল হয়ে পড়লে গোটা শিবিরের নেতারাই আপাতত দুর্বল হয়ে পড়বেন৷ তবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে এই আন্দোলন, এই নব্য নাৎসি আন্দোলন কিন্তু তৃণমূল স্তরের কার্যকলাপের জোরেই টিকে রয়েছে৷ পৌর বা পঞ্চায়েত স্তরে এরা অত্যন্ত সক্রিয়৷ নব্য নাৎসিদের এই কার্যকলাপের কথা ভুলে গেলে চলবে না৷ এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷

প্রশ্ন: জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভল্ফগাং শয়েবলে ইতিমধ্যে ‘দেশপ্রেমী জার্মান তরুণ’ নামের এক উগ্র দক্ষিণপন্থী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন৷ এই পদক্ষেপের মধ্যে কি কোন অগ্রগতি দেখা যেতে পারে?

উত্তর:

নাগরিক সমাজে আমাদের একটা স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে – এটাকেই আমি অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি৷ আমাদের প্রতীকি অর্থে দেখিয়ে দিতে হবে সীমারেখাটা ঠিক কোথায় রয়েছে৷ বলতে হবে, এর বাইরে যাওয়া চলবে না, আমরা এর বেশী সহ্য করব না৷ বাস্তবে এমনটাই ঘটছে এবং এটাই হওয়া উচিত৷ কিন্তু আমাদের আরও একবার স্পষ্ট করে দিতে হবে যে ওরা কট্টরপন্থী৷ ওরা ওদের কাজ চালিয়ে যাবে৷ কিন্তু সুশীল সমাজ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হল তাদের উপর কড়া নজর রাখা, সজাগ থাকা৷

প্রশ্ন: আপনি বলছেন, সজাগ থাকতে হবে এবং স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে৷ ঠিক কীভাবে তা করা যেতে পারে?

উত্তর:

যেমন এই ইস্টারের সময়েই নিও নাৎসিরা তাঁবু খাটিয়ে প্রচারাভিযান চালায়৷ তাদের দেখলে মুখ ফিরিয়ে নিলে চলবে না৷ ইস্টারের সময় যে শান্তি মিছিল হয়, তাতেও বিষয়টি তুলে ধরতে হবে৷ নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ঠিক সময়ে মানুষকে জানাতে হবে যে তাদের মতলব কী৷ জানাতে হবে – তারা কতটা বিপজ্জনক, হিংসার পথ নিতে তারা কতটা প্রস্তুত৷ এটা আমাদের সবারই দায়িত্ব৷

প্রশ্ন: রাষ্ট্র সর্বশক্তি প্রয়োগ করে উগ্র দক্ষিণপন্থীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছে৷ তাদের সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে, জরিমানা করে ইত্যাদি৷ এমন এক অবস্থায় মরিয়া হয়ে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা অন্য কোন্ পথ বেছে নিতে পারে বলে আপনি আশঙ্কা করছেন?

উত্তর:

বর্তমানে এনপিডি দলের বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে করদাতাদের অর্থ থেকে৷ বাকি ৬০ শতাংশ তারা চাঁদা বা ঋণ হিসেবে জোগাড় করে৷ যেসব নাৎসি এখনো জীবিত আছেন, তাদের কাছ থেকেও কিছু অর্থ সংগ্রহ করা হয়৷ এছাড়া তারা বিদ্বেষমূলক গানের সিডি ও প্রচারের অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করেও কিছু অর্থ উপার্জন করে৷ তবে এই সব উৎস থেকে তারা সেই অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে না, যা রাষ্ট্রের কাছ থেকে এতদিন পাওয়া যেত৷

প্রশ্ন: এবার একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে চাই৷ আপনি তো বার বার উগ্র দক্ষিণপন্থীদের রোষের শিকার হয়েছেন৷ শুধু তাদের বিরুদ্ধে প্রচারের কারণে নয়, আপনার কাজের কারণেই তারা আপনাকে বার বার হয়রান করেছে৷ এনপিডির এই অবস্থায় কি আপনার কাছে সুখবর বয়ে আনছে?

উত্তর:

দেখুন, ‘দেশপ্রেমী জার্মান তরুণ’ নামের উগ্র দক্ষিণপন্থী সংগঠন সম্পর্কে আমার গবেষণার কাজ ছিল অত্যন্ত কঠিন৷ আমার ধারণা ছিল না যে এমন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সম্পর্কে বেশী কিছু জেনে গেলে তা এতটা বিপজ্জনক হতে পারে এবং তারা এতটা হিংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে৷ ঠিক সেকারণেই আমি মনে করি, যে গণতন্ত্র ও সুশীল সমাজ হিসেবে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে৷ সাংবাদিক হিসেবে তাদের গোপন কর্মকাণ্ডের কথা ফাঁস করার কাজ আরও কঠিন হয়ে উঠবে – এবিষয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই৷

সাক্ষাৎকার: সান্দ্রা শুলৎস, অনুবাদ: সঞ্জীব বর্মন