1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে গুজরাট‌

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২৫ অক্টোবর ২০১৭

ভাগ্য নির্ধারণের আসল পরীক্ষা হবে বছর দেড়েক পর লোকসভা নির্বাচনে৷ আগে গুজরাট নির্বাচন কার্যত সেমি-‌ফাইনাল৷ বিজেপির কাছে গুজরাটে জয় অব্যাহত রাখা মস্ত চ্যালেঞ্জ৷ অন্যদিকে, কংগ্রেস গুজরাটেই বিজেপি-কে কবর দেওয়ার স্বপ্ন দেখছে৷

https://p.dw.com/p/2mSIW
ছবি: UNI

‘‌গুজরাট মডেল’-‌কে সামনে রেখেই‌ সাড়ে তিন বছর আগে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি৷ গুজরাটের রূপকার হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল সেই রাজ্যের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী, তথা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীকে৷ চলতি বছরেই গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচন৷ অর্থাৎ, রাজ্যের শাসনভার কার ওপর বর্তাবে, তা নির্ধারণ করবেন গুজরাটের আম জনতা৷ কিন্তু, এবার সম্ভবত গুজরাট মডেলের ‌ফানুস ফুটো হয়ে গেছে৷ মোদী বা তাঁর দলের কেউই আর ভোট ভিক্ষা করতে গিয়ে গুজরাট মডেলের কথা বলছেন না৷

হিমাচল প্রদেশে নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা করলেও গুজরাটে ভোটের দিন জানায়নি নির্বাচন কমিশন৷ এতেই সুবিধা পেয়ে গেছেন নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দল ভারতীয় জনতা পার্টি৷

বেশ কয়েকদিন যাবত শুধু শিলান্যাস আর উদ্বোধন করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ উদ্বোধন করা, যেটা পঞ্চায়েত ও পুরসভার কাজ, তা-‌ই করতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে!! দেখা গেল, একটি স্কুলে গেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ সেখানে ছাত্রছাত্রীরা মাটিতে বসে রয়েছে৷ নিন্দুকরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে উন্নয়নটা কোথায় হয়েছে?‌ উল্টে, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ'র ছেলে জয় শাহ'র কোম্পানির অবিশ্বাস্য সাফল্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷

‘এবার গুজরাট থেকেই মোদীর পতন শুরু হতে চলেছে’

সিপিএম সাংসদ মোহাম্মদ সেলিম বলছেন, এবার গুজরাট থেকেই মোদীর পতন শুরু হতে চলেছে৷ গুজরাট থেকে শুরু, গুজরাট থেকেই শেষ হবে বিজেপি৷

তাঁর কথায়, ‘‌‘‌২০০২ সালে গুজরাটে গণহত্যার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদীর উত্থান হয়েছে৷ তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বেছে নিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ৷ পরে তিনি ক্লিনচিট পেয়ে গেছেন৷ এখন দেশের এমন অবস্থা যে, ব্যবসায়ী, সিনেমা নির্মাতা, অভিনেতা, সাংবাদিক যে কেউ সরকারের সমালোচনা করলেই শায়েস্তা করার চেষ্টা হচ্ছে৷ এমনকি খুন হতে হচ্ছে৷ এর পাশাপাশি সরকার আশ্রিতদের লুটের বন্দোবস্ত করে দেওয়া হচ্ছে৷’’

তবে, সেলিম যা-‌ই বলুন না কেন, এই মুহুর্তে গোটা দেশে নরেন্দ্র মোদী অথবা বিজেপি'‌র হাওয়া যে অনুকূলে বইছে না, সাধারণ সংবাদকর্মী হিসেবে সেটুকু বুঝতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না৷‌ রাজনীতির সহজ হিসেব অনুযায়ী, ভবিষ্যতে এই হাওয়া বদলে যেতেও সময় লাগবে না হয়ত৷ আসলে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তিলে তিলে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে সাধারণ মানুষের মনে৷ ‌বেকারত্ব, ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা, গো-‌রক্ষা বাহিনীর নামে নিরীহদের পিটিয়ে খুন করা, আচমকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে সাধারণ মানুষকে অসহনীয় যন্ত্রণার মুখে ঠেলে দেওয়া এবং পণ্য ও পরিষেবাকর চালু করার বিষয়গুলি ভালোভাবে নেয়নি দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা৷ চটেছে ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ৷ সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, কালোটাকা শেষ হয়ে যাবে৷ দুর্নীতি বলে আর কিছু থাকবে না৷ সন্ত্রাসবাদ ধ্বংস হবে৷ উন্নতির শিখরে পৌঁছে যাবে দেশ৷ কিন্ত, কোথায় কি৷ বিমূদ্রাকরণের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে৷ একাধিক সমীক্ষা এবং সরকারি হিসেবেই বলছে, দেশের অর্থনীতি যেখানে ছিল, তার থেকে অধঃপতন হয়েছে৷ একচুলও অগ্রগতি হয়নি৷

সবমিলিয়ে সমস্ত ভারতবাসীর নজর আটকে রয়েছে গুজরাটে৷ ভোট ভিক্ষায় সেখানে পৌঁছে গেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী থেকে ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কংগ্রেস সহ-‌সভাপতি রাহুল গান্ধী৷ তরতরিয়ে বাড়ছে রাজনৈতিক উষ্ণতার পারদ৷ ‌বিজেপি'র লক্ষ্য, কমপক্ষে ১১৫টি আসন৷

টানা ২২ বছর ধরে গুজরাটে ক্ষমতা ধরে রাখার পরে বিজেপি এখন বুঝতে পারছে, এরের পরিস্থিতি অন্য রকম৷ একে তো ‘‌পণ্য ও পরিষেবা কর'‌ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা৷ এই ব্যবসায়ীরাই বিজেপির দীর্ঘদিনের ভোটব্যাঙ্ক৷ পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে ‌পণ্য ও পরিষেবা করে ছাড়সহ কিছু সুবিধা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে সরকার৷ কিন্তু, তাতেও অবস্থা বিশেষ বদলায়নি বলে বুঝতে পারছেন মোদী, তথা বিজেপি নেতৃত্ব৷ তার মধ্যেই মোদী-অমিত শাহদের রক্তচাপ বাড়িয়ে অনগ্রসর শ্রেণীর জনপ্রিয় নেতা অল্পেশ ঠাকর কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন৷ সরাসরি কংগ্রেসে না গেলেও রাজ্যের সামাজিক আন্দোলনের আরও দুই প্রভাবশালী নেতা হার্দিক প্যাটেল এবং জিগ্নেশ মেবানিও বিজেপির বিরুদ্ধে মাঠে নামার কথা বলে চাপ বাড়িয়েছে কেন্দ্রের শাসক দলের৷ তার উপর সাম্প্রতিক একাধিক ভোটে বিজেপির হার উৎসাহ জুগিয়েছে বিরোধীদের৷

এই পরিস্থিতিতে উন্নয়নের তাসেই বাজিমাত করতে মরিয়া বিজেপি৷ এবং এ কাজে তাদের প্রথম এবং শেষ টেক্কাটি সেই নরেন্দ্র মোদী৷ বিজেপি নেতৃত্ব ভালোই জানেন, কোনোভাবে গুজরাটের ফল খারাপ হলে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা আরও অক্সিজেন পেয়ে যাবে৷ বিষয়টি বিলক্ষণ জানেন, মোদী নিজেও৷ সে কারণেই দিল্লি ছেড়ে বারবার গুজরাট পাড়ি দিচ্ছেন তিনি৷ গত মাসে নিজের জন্মদিনে সর্দার সরোবর বাঁধের উদ্বোধনে ‘নর্মদে সর্বদে' রণহুঙ্কার দিয়ে গুজরাট ভোটের ঢাকে কাঠি দিয়েছিলেন মোদী৷ তারপর থেকে বারবার দিল্লির রাজ্যপাট ছেড়ে ছুটে গিয়েছেন নিজের রাজ্য সামলাতে৷

অনেকেই বলছেন, ‌পালাবদল হতে পারে৷ তবে দেখতে হবে, গুজরাটে বিরোধী দল (‌কংগ্রেস)‌ কতটা সংগঠিত৷ নির্বাচন কমিশন কতদূর পর্যন্ত নিরপেক্ষ থাকে৷ সরকারি কোষাগারের টাকা ব্যবহার করে শিলান্যাসের হিড়িক পড়েছে তার প্রভাব কতটা পড়ে৷ সেইসঙ্গে অবশ্যই গোটা দেশে সরকারি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলিকে যেভাবে সরকার এবং শাসক দলের অনুগত হতে বাধ্য করা হচ্ছে, জনগণের ওপর তার কতটা কুপ্রভাব পড়ে সেদিকেও নজর থাকবে সবার৷