1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভুতুড়ে কণা

১৯ মার্চ ২০১২

নিউট্রিনো আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে চলতে পারে - এই তথ্য দিয়ে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের হতবাক করে দিয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম বড় ল্যাবরেটরি স্যার্নের বিজ্ঞানীরা৷ কিন্তু তাদেরই আরেক পরীক্ষায় দেখা গেল আগের তথ্যটি ঠিক নয়৷

https://p.dw.com/p/14MUK
ছবি: AP

বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী জার্মানির অ্যালবার্ট আইনস্টাইন৷ তাঁর বিখ্যাত সমীকরণ E=MC²৷ ‘থিওরি অব স্পেশাল রিলেটিভিটি' বা বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সমীকরণ এটি৷ এই তত্ত্বের মূল কথা, আলোর চেয়ে দ্রুতগতির আর কিছু নেই৷ আজ থেকে প্রায় ১০৬ বছর আগে আইনস্টাইন এই কথা বলেছিলেন৷ পরবর্তীতে অনেকবার পরীক্ষা করা হলেও আইনস্টাইনের কথাটাই সত্য বলে প্রমাণিত হয়৷ বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের উপর ভর করেই দাঁড়িয়ে আছে পদার্থবিজ্ঞানের অন্যান্য অনেক তত্ত্ব৷

কিন্তু গত বছর সেপ্টেম্বরে একদল ইউরোপীয় বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের তত্ত্বকে ভুল বলে ধারণা দিয়েছিলেন৷ একটি পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা দেখিয়েছিলেন আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে চলতে পারে নিউট্রিনো৷ তাঁদের এই তথ্য সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মধ্যে রীতিমত হৈচৈ ফেলে দেয়৷ কেননা আইনস্টাইনের তত্ত্ব ভুল, এটা কেউই ঠিক কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না৷ তাই নতুন এই তথ্য কতটা সত্যি সেটা নিয়ে শুরু হয় গবেষণা৷ অবশেষে অ্যামেরিকার বিখ্যাত জার্নাল ‘সায়েন্স ইনসাইডার'এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷ তাতে স্যার্ন তথা ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সম্ভাব্য দুটি ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়৷ এর একটি ‘লুজ' অর্থাৎ ঢিলা অপটিক্যাল ফাইবার কানেকশন - যে কারণে সময় গণনায় ভুল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ আর আরেকটি ত্রুটি হতে পারে ‘অসিলেটর'এ৷ এটাও সময় গণনার একটি যন্ত্র৷ এরপর স্যার্নের পক্ষ থেকেও তাঁদের ভুলের কথা স্বীকার করে নেওয়া হয় এবং বলা হয় আবার নতুন করে পরীক্ষা করে দেখা হবে৷

Deutsche Physik Nobelpreisträger Albert Einstein
আইনস্টাইনছবি: AP

যে কথা সেই কাজ৷ ফলে নতুনভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেল আগে যেটা বলা হয়েছিল সেটা ভুল৷ মানে নিউট্রিনো আলোর চেয়ে বেশি গতিতে নয়, সমান গতিতে চলে৷ নতুন এই পরীক্ষাটা চালান স্যার্নেরই আরেক দল বিজ্ঞানী৷ এই তথ্য প্রকাশের পর স্যার্নের গবেষণা পরিচালক সার্গিও বার্তোলুচ্চি বলছেন, আগের পরীক্ষায় যে পরিমাপগত ভুল ছিল নতুন তথ্য সেদিকেই ইঙ্গিত করছে৷ তবে পুরো বিষয়টা নিশ্চিত হতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান তিনি৷ আগামী মে মাসে ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আবারও পরীক্ষা করা হবে বলে জানান স্যার্নের ঐ কর্মকর্তা৷

নতুন গবেষণার ফলাফল একটি ওয়েবসাইটে তুলে দেয়া হয়েছে৷ যার ঠিকানা http://arxiv.org/abs/1203.3433

প্রথম গবেষণা প্রকাশের পর ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের কণা-পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জেফ ফোরশাও বলেছিলেন, গবেষণার ফল যদি সত্যি হয়, অর্থাৎ নিউট্রিনো যদি সত্যিই আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে চলতে পারে, তাহলে আজকের তথ্য পাঠিয়ে দেয়া যাবে অতীতে৷ অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন, ‘‘আমরা কল্পবিজ্ঞানে হরহামেশাই যে ‘টাইম ট্রাভেল'এর কথা পড়ি সেটা সত্যি হবে৷''

স্যার্নের এক বিজ্ঞানীর মতে, নিউট্রিনো সাধারণত পরমাণু চুল্লিতে তৈরি হয়৷ ১৯৩৪ সালে প্রথমবারের মতো নিউট্রিনোর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এটা শুধু বিজ্ঞানীদের অবাকই করে যাচ্ছে৷ নিউট্রিনোকে এরপরেও অনেকে যে ‘ভুতুড়ে কণা' বলে ডাকে, সেটা কী ভুল? মোটেও নয়! নিউট্রিনো আসলেই একটি ভুতুড়ে কণা!

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য