1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে উগান্ডায়

১৯ জানুয়ারি ২০২১

উগান্ডার নির্বাচন লোক দেখানো। বিরোধীদের বন্দুকের নলের সামনে দাঁড় করানো হয়েছিল। লিখছেন সেসাঙ্গা ইড্ডি।

https://p.dw.com/p/3o6ht
মুসেভেনি
ছবি: Henry Nicholls/REUTERS

উগান্ডার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কোনো ভাবেই স্বচ্ছ বলা চলে না। পুলিশ এবং সেনার সহিংসতা গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াকেই কলঙ্কিত করেছে। প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

দেশ জুড়ে প্রচার চালানোর সময় বিরোধী নেতাদের একাধিকবার বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়াতে হয়েছে। প্রতিটি মিছিলে, সমাবেশে বন্দুক নিয়ে পুলিশ এবং সেনার কর্মকর্তারা বিরোধী নেতাদের উপর নজরদারি চালিয়েছেন। বিভিন্ন সময় বিরোধীদের সমাবেশ সহিংস পদ্ধতিতে ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

এত কিছু সত্ত্বেও অত্যন্ত সাহস দেখিয়েছেন উগান্ডার সাধারণ মানুষ। তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ভোট গণনার পর জানা গিয়েছে, মুসেভেনি ৫৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। আর ববি ওয়াইন পেয়েছেন ৩৪ শতাংশ। সাধারণ মানুষ হতাশ হয়েছেন নির্বাচন প্রক্রিয়া দেখে। তাঁদের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনও নিরপেক্ষ ছিল না। এত হত্যা, এত হামলার ঘটনা অভূতপূর্ব।

পশ্চিমের অবস্থান

মুসেভেনির সময়ে পশ্চিমি দুনিয়ার সঙ্গে উগান্ডার সম্পর্ক ভালো হয়েছিল। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পশ্চিমের দেশগুলির সাহায্য পেয়েছেন মুসেভেনি। কিন্তু সেই একই সময়ে দেশের ভিতর অরাজকতা চালিয়েছেন এই শাসক। প্রায় তিন দশকের রাজত্বে উগান্ডার মানুষের উপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছেন তিনি। কিন্তু পশ্চিমের দেশগুলি নীরব থেকেছে।

গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মুসেভেনি একাধিকবার ওয়াইনকে পশ্চিমের দালাল বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ সেই তিনিই পশ্চিমের টাকায় বিমান ভর্তি অস্ত্র পাঠিয়েছেন দেশের বিভিন্ন এলাকায়। বিরোধী এবং সাধারণ ভোটারদের আটকাতে একের পর এক সহিংস আক্রমণ চালিয়েছেন।

মুসেভেনি
ছবি: Tanzania State House/Xinhua News Agency/picture alliance

অ্যামেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন মুসেভেনিকে দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন করছে। লাখ লাখ ডলার ফান্ড দেওয়া হচ্ছে তাঁকে সাহায্যের নামে। যে ফান্ড সহিংসতায় কাজে লাগিয়েছেন মুসাভেনি। দেশের আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন তিনি। অথচ বাইরের বিশ্বে নিজেকে গণতন্ত্রপন্থি বলে দেখানোর চেষ্টা করেন এই একনায়ক শাসক। অথচ এই মুসাভেনিই এক সময় দেশকে একনায়কদের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন। অনেকেই বলেন, তারপর শাসক হিসেবে নিজের যে ছবি তিনি তৈরি করেছেন, তা আগের একনায়কদের চেয়েও ভয়ঙ্কর।

এবারের নির্বাচনের সময়েও মুসাভেনি নিজের অতীত তুলে ধরেছেন মানুষের সামনে। বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কী ভাবে একনায়কদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করেছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি যে নিজেও একনায়ক হয়ে গিয়েছেন, সে কথা স্বীকার করেননি। বন্দুকের নলের সামনে বিরোধীদের দাঁড় করিয়ে, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কারচুপি করে তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি

এক সময় মুসাভেনি বলেছিলেন, আফ্রিকান নেতারা ক্ষমতা ছাড়তে জানেন না। ২০০১ সালে তিনি কথা দিয়েছিলেন, সেটিই হবে তাঁর শেষ শাসনকাল। এরপর প্রত্যেকবারই ভোটের আগে একই প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। কিন্তু ক্ষমতা থেকে সরেন না।

সম্প্রতি মুসাভেনি বলেছিলেন, ৭৫ বছর হয়ে গেলে কারো শাসন ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়। অথচ তাঁর বয়স ৭৫ হওয়ার পরে দেশের সংবিধানই বদলে ফেলেছেন তিনি। প্রেসিডেন্টের বয়সসীমা বদলে দিয়েছেন।

২০২১ সালের নির্বাচনের সময় মুসাভেনি বলেছেন, কোনো ভাবেই বিরোধীদের ক্ষমতায় তিনি আসতে দেবেন না। ভোটে হেরে গেলেও নয়। নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে বিরোধীরা এবং সাধারণ মানুষের একাংশের প্রশ্ন, তা হলে নির্বাচনের নামে এই প্রহসনের দরকার কী ছিল?

সেসাঙ্গা ইড্ডি/এসজি

 LINK: http://www.dw.com/a-56251144