1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে নেকড়ের আবির্ভাব

১৮ জুলাই ২০১৮

জার্মানিতে হিংস্র জন্তু নেই৷ কিন্তু বহুকাল পর প্রকৃতির কোলে নেকড়ের আবির্ভাব ঘটায় পশুপালক, কৃষকসহ অনেকেই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন৷ তাদের সঙ্গে মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/31dAW
ছবি: picture alliance/AP Photo/J. Ekströmer

নেকড়ের আবির্ভাব

নেকড়ে আবার ফিরে এসেছে৷ নতুন শতাব্দীর শুরু থেকেই জার্মানিসহ উত্তর গোলার্ধের অনেক দেশে তাদের বংশবৃদ্ধি ঘটছে৷ অনেক পশু পালনকারীদের কাছে নেকড়ের আবির্ভাব দুঃস্বপ্নের কারণ হয়ে উঠছে৷ মেষপালক গ্যার্ড ইয়ানকে জানান, ‘‘সাতটি হামলায় আমরা প্রায় ৪০টি ভেড়া হারিয়েছি৷ খুবই ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি৷''

মেষপালক হিসেবে গ্যার্ড মোটেই কাছাকাছি নেকড়ের উপস্থিতি চান না৷ অন্যদিকে নেকড়ে সংক্রান্ত উপদেষ্টা কেনি কেনার নেকড়েপ্রেমীদের একজন৷ এক সংরক্ষিত এলাকায় প্রকৃতির কোলে তিনি থাকেন৷ নেকড়ে নিয়ে তাঁর মনে কোনো ভয় নেই৷ কেনি বলেন, ‘‘এখনো পর্যন্ত জার্মানিতে মানুষের সঙ্গে নেকড়ের কোনো সংঘাত ঘটে নি৷ মানুষকে আহত করার কোনো ঘটনার কথাও শুনিনি৷''

তিনি নেকড়ের চিহ্নের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন৷ জঙ্গলের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে হাঁটেন, কখনো তাদের সন্ধানে কয়েক দিন ধরে বাইরে থাকেন৷ অবশেষে চিহ্ন পাওয়া গেল৷ কেনি জানালেন, ‘‘এটা নেকড়ের মল, অত্যন্ত তাজা, গত রাতের৷''

নেকড়ের স্বভাব, গতি-প্রকৃতি

এক নেকড়ে নিজের এলাকার সীমানা স্থির করে দেয়, যাতে বাকি নেকড়েরা তা জানতে পারে৷ নেকড়ের এই চিহ্নকে ঘিরে অনেক আশা জাগছে৷ কেনি আরও বলেন, ‘‘একেবারে নেকড়ের নিজস্ব গন্ধ৷ মলের মধ্যে অনেক লোম দেখতে পাচ্ছি৷ হাড়গোড়ও রয়েছে৷ কারণ নেকড়ে শিকার করে সেই প্রাণীর চামড়া, হাড় – সব খেয়ে নেয়৷''

নেকড়ে, ভেড়া, কুকুর

তবে সেই মল দেখে শুধু নেকড়ের খাদ্য ছাড়াও অনেক কিছু জানা সম্ভব৷ সেই নমুনা এক বন্যপ্রাণী গবেষণা কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে৷ সেখানে জীববিজ্ঞানীরা ডিএনএ বিশ্লেষণ করে নেকড়েদের আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারেন৷ মল বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, সেই নেকড়ে এই এলাকায় নতুন৷ সেনকেনব্যার্গ গবেষণা কেন্দ্রের ড. কার্স্টেন নোভাক বলেন, ‘‘আমাদের এখানে কত নেকড়ে থাকে, জিনগত পরীক্ষা চালিয়ে আমরা তা জানার চেষ্টা করি৷ কত জন রয়েছে, কত পরিবার বা গোষ্ঠী রয়েছে৷ এই পশুদের পর্যবেক্ষণ বা তাদের ছবি তুলে সেই তথ্য পাওয়া যায় না৷ জিনগত পরীক্ষায় আমরা প্রত্যেক নেকড়েকে শনাক্ত করতে পারি, প্রত্যেকটি প্রাণীকে আলাদা করে চিনতে পারি৷''

জার্মানির বেশিরভাগ নেকড়ে একই দম্পতির বংশধর৷ পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির মধ্যে সীমানা ভেঙে যাবার পর পূর্বে পোল্যান্ড ও দক্ষিণে আল্পস পর্বত থেকে নেকড়ের দল জার্মানিতে আসে৷ বর্তমানে আনুমানিক ৭০টি গোষ্ঠী ও দম্পতি, অর্থাৎ প্রায় ৫০০ নেকড়ে জার্মানিতে বসবাস করে৷

নেকড়ে বনাম মানুষ

নেকড়ের জন্য একমাত্র মানুষই বিপজ্জনক৷ তারা গাড়ির চাকার নীচে চাপা পড়ে অথবা শিকারীদের লক্ষ্য হয়৷ অথচ নেকড়ে শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷ এখনো পর্যন্ত ২৫টি শিকারের ঘটনার কথা জানা গেছে৷ বাস্তবে সেই সংখ্যা অনেক বেশি বলে ধরে নেওয়া হয়৷ শিকারিদের জন্য নেকড়ে প্রতিযোগী, পশুপালকদের কাছে তারা বড় হুমকি৷

মেষপালক হিসেবে গ্যার্ড ইয়ানকে এর মধ্যে ৪০টি ভেড়া হারিয়েছেন৷ তিনি নিশ্চিত, যে এ সব নেকড়েরই কীর্তি৷ গ্যার্ড বলেন, ‘‘ঘটনা হলো, প্রাণী মেরে যতক্ষণ আনন্দ হয়, তারা ততক্ষণ সেই কাজ চালিয়ে যায়৷ একই রাতে ৬, ১২ অথবা ১৫টি প্রাণিহত্যা বিরল ঘটনা নয়৷ পরের দিন সেই সব প্রাণীর অবশিষ্ট সাফাই করতে গিয়ে আমাদের হৃদয় ভেঙে যায়৷ সেই নেকড়েদের জন্য মাঠে খাদ্য সাজিয়ে রাখার অর্থই হয় না৷''

কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি কিছু ক্ষতিপূরণ পেলেও তাঁর কাছে নেকড়েদের উপস্থিতি মানে আরও দুশ্চিন্তা ও বাড়তি কাজ৷ বৈদ্যুতিক বেড়া বসিয়ে তিনি ভেড়াদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন৷ সেইসঙ্গে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের রক্ষার জন্য কুকুরও পুষছেন তিনি৷ গ্যার্ড ইয়ানকে বলেন, ‘‘শুধু নেকড়েদের অস্তিত্বের কারণে ভেড়ার পালের সুরক্ষার জন্য এখন আমরা ছ'টি কুকুর পুষছি৷ রাতারাতি ছ'টি কুকুর আনলে বুঝবেন, কত পরিশ্রম করতে হয়৷''

পশুপালকদের ক্ষোভ

পশুপালকরা অসহায় বোধ করছেন৷ যে সব নেকড়ে ভেড়া বা গরু মারছে, তাদের হত্যার দাবিতে সরব হচ্ছেন তাঁরা৷ ২০১৬ সালে জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যে ১৪১টি গবাদি পশু নেকড়ের শিকার হয়েছে৷ তবে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক ক্ষেত্রে এই সব পশু নেকড়ে নয়, কুকুরের শিকার হয়েছে৷ তাদের দেহে শিকারির থুতু পরীক্ষা করলেই আততায়ীর পরিচয় জানা সম্ভব৷ নমুনায় তাজা ডিএনএ পেলেই জীববিজ্ঞানীরা এই কাজ করতে পারেন৷ ড. কার্স্টেন নোভাক বলেন, ‘‘আমাদের কাজ মানুষের অপরাধের ক্ষেত্রে ফরেনসিক বিশ্লেষণের মতো৷ অকুস্থলে যেমনটা করা হয়, ঠিক সেই কাজ আমরাও করি৷ তবে ভেড়া ও নেকড়ে নিয়ে আমাদের কাজ৷ সঠিক চিহ্ন শনাক্ত করে নিশ্চিত ফলাফলের ক্ষেত্রে আমাদেরও একই চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয়৷''

নেকড়ে আমাদের জঙ্গল ও মাঠঘাটের মধ্যে চলাফেরা করছে, এটাই হলো বাস্তব৷ পশুপালকদের ভবিষ্যতে তাদের অস্তিত্ব মেনে নিতে হবে৷

সঠিক পরামর্শ

নেকড়ে সংক্রান্ত উপদেষ্টা হিসেবে কেনি কেনার অক্লান্তভাবে মেষপালক ও কৃষকদের সুরক্ষার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে চলেছেন, যদিও তাঁরা এখনো পর্যন্ত নেকড়ের সংস্পর্শে আসেন নি৷ শখের মেষপালক আন্দ্রেয়া ফুংকে বলেন, ‘‘আমার কখনো নেকড়ে নিয়ে সমস্যা হয়নি৷ তবে কুকুর নিয়ে সত্যি সমস্যা হয়েছে৷''

কারণ মুক্ত কুকুররা প্রায়ই বেড়া টপকে ভেড়াদের উপর হামলা চালায়৷ অন্যদিকে সামান্য মাত্রায় বিদ্যুৎ থাকলেও বেড়া লাগিয়ে নেকড়ে আটকানো সম্ভব৷ তবে ঠিক সময়ে পশুর পালের চারিপাশে বেড়া দিলে তবেই এই কৌশল কাজ করে৷ সেইসঙ্গে নেকড়ে ভেড়ার মাংসের স্বাদ পেলেও চলবে না৷

নেকড়ের দিকে লক্ষ্য করে গুলি না চালিয়ে পশুর পালের সুরক্ষায় মনোযোগ দেওয়াই শ্রেয়৷ কাজটা কঠিন হলেও দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে পশুপালক, ভেড়া ও নেকড়ে – সবার জন্য সেটাই সবচেয়ে ভালো সমাধানসূত্র৷

কারোলিনে হাবেল/এসবি