1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘পরকালে অবিশ্বাসের অধিকার সংবিধান দিয়েছে’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ এপ্রিল ২০১৯

মডেল এবং অভিনেত্রী সাফা কবির তাঁর বিশ্বাসের কথা বলে হুমকির মুখে পড়ে ক্ষমা চেয়েছেন৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কথা বললেই কাউকে হুমকি দেয়া সমাজে বিদ্যমান অসহিষ্ণুতারই বহিপ্রকাশ, যা কখনোই কাম্য নয়৷

https://p.dw.com/p/3H24a
‘পরকালে বিশ্বাস করি না’ বলায় ফেসবুকে হয়রানির শিকার মডেল সাফা কবিরছবি: Sazzad Hossain

পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের দিন ( ১৪ এপ্রিল) সাফা কবির একটি এফএম রেডিও চ্যানেলে লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নেন৷ অনুষ্টানটির লাইভ স্ট্রিমিং ছিল ফেসবুকে৷ অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের প্রশ্নেরও জবাব দিচ্ছিলেন তিনি৷ অনুষ্ঠানে তাঁকে একজন একটি প্রশ্ন মেসেজ করেন,‘‘আপনি পরকালে বিশ্বাস করেন? করলে তো চলাফেরা এমন হতো না?'' এর  উত্তরে সাফা কবির বলেন, ‘‘আমি একদমই পরকালে বিশ্বাস করি না৷ সত্যিকার অর্থে আমি যেটা দেখি না, সেটা কখনো বিশ্বাস করি না৷''

আর এরপরই শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রোল এবং হুমকি৷ তাঁকে ‘নাস্তিক' ঘোষণা করেন কোনো কোনো ফেসবুক ব্যবহারকারী৷ তাঁদের কথা, ‘‘মুসলমান পরিচয় দিতে হলে পরকালে বিশ্বাস করতে হবে৷ পরকালে বিশ্বাস না করলে নাস্তিক৷'' কেউ কেউ আবার তাঁকে পরকাল দেখিয়ে আনারও হুমকি দেন ফেসবুকে৷

তাঁর ওই কথার ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করে তাঁকে বয়কটেরও আহ্বান জাননো হয়৷ কেউ কেউ তাঁকে ক্ষমা চাওয়ারও আহ্বান জানান৷ ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় ঘটনার দুই দিন পর সাফা কবির তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে এ নিয়ে একটি বিবৃতি দেন৷সেখানে দাবি করেন, তাঁর ফেসবুক পেজটি হ্যাক করা হয়েছিল৷

তাহমিনা রহমান

১৬ এপ্রিল তিনি তাঁর ফেসবুক পেজে দেয়া স্ট্যাটাসে বলেন, ‘‘আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি, সেই ভুলের জন্য আমি পরম করুণাময়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি৷ তিনি পরম দয়ালু এবং ক্ষমাশীল৷ তিনি নিশ্চয়ই আমাকে ক্ষমা করবেন৷ আমি এবং আমার আল্লাহ জানেন, কারো বিশ্বাসে আঘাত দেয়ার জন্য কোনো কথা আমি বলিনি৷ তবুও আমার কোনো কথায় যদি কারো মনে বা বিশ্বাসে আঘাত লেগে যায়, তার জন্য আমি দুঃখিত এবং করজোড়ে  ক্ষমাপ্রার্থী৷ তবুও যারা, আমার ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক করেছেন এবং আমাকে অত্যন্ত বাজে ভাষায় আক্রমণ করছেন তাদের বিচারের ভারও আমি আল্লাহর হাতে দিলাম৷ তিনি নিশ্চয়ই সবকিছু জানেন এবং দেখেন৷''

তাঁর এই ফেসবুক বিবৃতিতে তিন দিনে ৭০ হাজার মন্তব্য করা হয়েছে৷ শেয়ার হয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি৷ ওসব কমেন্টেও তাঁকে নাস্তিকসহ নানা শব্দবাণে জর্জরিত করা অব্যাহত আছে৷

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাফা কবিরের সর্থনেও অনেক স্ট্যাটাস দেখা গেছে৷ আর সেসব স্ট্যাটাসের মূল কথা হলো, ‘‘কারুর বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে হুমকির মুখে কেন পড়তে হবে?''

এ নিয়ে সাফা কবিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি৷ ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে জবাব পাওয়া যায়নি৷ তাই তাঁর কাছ থেকে জানা সম্ভব হয়নি যে, এই হুমকি কি শুধু ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই দেয়া হয়েছে, নাকি ফোনে বা সরাসরিও দেয়া হয়েছে৷

নূর খান

পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেও জানা সম্ভব হয়নি যে, তিনি কোনো লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কিনা৷ তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আইন ও গণমাধ্যম শাখার ডেপুটি কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেছেন, ‘‘আমরা কোনো অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিই৷'' আর সাইবার ক্রাইম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা  জানান, সাফা কবির এখনো তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি বা কোনো অভিযোগও করেননি৷ হুমকির বিষয়ে তাঁদের কাছে অভিযোগ করলে তাঁরা তা দেখবেন বলেও জানান তিনি৷

বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আর্টিকেল নাইনটিন-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক প্রধান তাহমিনা রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের সংবিধান ধর্ম এবং বিশ্বাসের অধিকার দিয়েছে৷ বিশ্বাস ধর্মের বাইরেও হতে পারে৷ কেউ যদি বলে, ‘আমি কোনো ধর্ম বিশ্বাস করি না', এটাও বিশ্বাস বা চিন্তা৷ পরকাল নিয়ে ওনার (সাফা কবির) যদি কোনো বিশ্বাস না থাকে, এটা তাঁর বিশ্বাস৷ এই বিশ্বাসের অধিকার আমাদের সংবিধান দিয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘তাই আমাদের অন্য ধর্মের প্রতি, অন্যের বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল হতে হবে৷''

মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের বিষয়টি প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়৷ কাউকে জোর করে কোনো জিনিস বিশ্বাস করানো সমর্থনযোগ্য নয়৷ কারুর সামনে যুক্তি তুলে ধরা যায়৷ তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা যায়৷ আর সেটা বিচার-বিশ্লেষণ করার অধিকার তাঁর৷ কাউকে জোর করে বিশ্বাস করানো যায় না৷''

ফরিদ উদ্দিন মাসউদ

তিনি বলেন, ‘‘আর এই বিশ্বাসের কারণে কাউকে হুমকি দেয়া অপরাধ৷ ফৌজদারী অপরাধ৷''

সাফা কবির ভুল স্বীকার করার পরও তাঁকে হুমকি দেয়া প্রসঙ্গে নূর খান বলেন, ‘‘এটা আমাদের সমাজের অসহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ৷ ভিন্ন চিন্তা বা বিশ্বাসের প্রতি বল প্রয়োগের চেষ্টা বা ঘৃণা ছড়ানো উগ্র মানসিকতারই প্রকাশ, যা উগ্র রাজনীতির পথ তৈরি করতে পারে৷''

অন্যদিকে শোলাকিয়ার ইমাম ও ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলান ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যদি তিনি মুসলান হয়ে এটা (পরকালে বিশ্বাস করি না)  বিশ্বাসের জায়গা থেকে বলে থাকেন, তাহলে তিনি তো ইসলামের বিশ্বাসের বিরোধিতা করলেন৷ আর যদি বাত কা বাত বলে থাকেন, তাহলে তাঁর এটা ঘোষণা দেয়া উচিত যে, আমি এটা বাত কা বাত বলেছি, বিশ্বাস থেকে বলিনি৷ কিন্তু ইসলামে কারুর বিশ্বাসের জন্য কাউকে হেনস্তা করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি৷ বিশ্বাসের বিষয়টি রেখে দেয়া হয়েছে হাশরের ময়দানের জন্য৷ আল্লাহর জন্য৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘কারুর বিশ্বাস যদি ইসলামের জন্য ক্ষতিকর হয়, আমরা সেটার সমালোচনা করতে পারি৷ বুঝিয়ে বলতে পারি৷ কিন্তু কাউকে তাঁর বিশ্বাসের জন্য হেনস্তা করতে পারি না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান