পরিত্যক্ত গাড়ির ভাগাড় হচ্ছে আফ্রিকা?
৪ আগস্ট ২০১৮কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে উহুরু পার্কে যেসব শিশুরা খেলাধুলা করে, তারা জানেও না কি তাদের চারপাশের বাতাস কতটা দূষিত৷ কিন্তু এই বাতাস বিষাক্ত উপাদানে পূর্ণ৷ কেনিয়ার শহরগুলিতে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন শ্বাসযন্ত্রের রোগে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ২০১৬ সালে শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মারা গেছে পাঁচ বছরের কম বয়সি ১৫ হাজার শিশু৷ কিন্তু এই দূষণের জন্য দায়ী যে গাড়িগুলো, সেগুলোও পেরিয়ে এসেছে অনেক পথ৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কার্বন নির্গমন বিষয়ে কড়াকড়ি হওয়ার পর শুরু হয় আফ্রিকায় রপ্তানি৷ আফ্রিকার ২৫ দেশে ব্যবহৃত গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে গাড়ির বয়সসীমা বেঁধে দেয়া আছে৷ কিন্তু আইনের দুর্বল প্রয়োগের কারণে বাজার ঠিকই সয়লাব হচ্ছে ২৫ বছরেরও পুরনো গাড়িতে৷
নতুন দিল্লির সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এক প্রতিবেদনে বলছে, জার্মানি এবং চীন ১৪ শতাংশ এবং জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র ১৫ শতাংশ করে গাড়ি রপ্তানি করে আফ্রিকায়৷
আফ্রিকার শহরগুলোতে জনসংখ্যা বাড়ছে, সাথে বাড়ছে গাড়ির চাহিদাও৷ কিন্তু স্বল্প ক্রয়ক্ষমতা, সরকারের নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং জ্বালানির নিম্নমানের কারণে এসব বাতিল গাড়ি খুব সহজেই জায়গা করে নিচ্ছে আফ্রিকায়৷
ডিজালগেট কেলেঙ্কারি এখন বৈশ্বিক
২০১৫ সালে ডিজেল গেট কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড় হয়৷ ইচ্ছে করে ইঞ্জিনের প্রোগ্রাম পরিবর্তন করে আসলের চেয়ে কম কার্বন নির্গমন দেখায় জার্মান গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি ফক্সভাগন৷
ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার সময় ফক্সভাগনের সফটওয়্যার কম মাত্রার নির্গমন দেখাতো৷ অথচ, একই গাড়ি রাস্তায় নেমে ৪০ ভাগ বেশি নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমন করতো৷
এই কেলেঙ্কারির পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন কার্বন নির্গমনের ব্যাপারে কঠোর হয়৷ ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন ক্লিন ট্রান্সপোর্টেশনের ইইউ প্রধান পিঠার মক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাজারে ছাড়ার আগে এখন ল্যাবরেটরির পাশাপাশি রাস্তাতেও পরীক্ষা করা হয়৷''
২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ফক্সভাগন ১ কোটিরও বেশি গাড়ি বিশ্বব্যাপী বিক্রি করেছে৷ ইউরোপে কড়াকড়ির ফলে এ সব পুরনো গাড়ির বিক্রি কমে যাওয়ায়, এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে পূর্ব ইউরোপ ও আফ্রিকায়৷
মানহীন জ্বালানি
জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক প্রোগ্রাম- ইউএনইপির কর্মকর্তা জানে আকুমু ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশেই কার্বন নির্গমন সীমা নির্ধারণ, নিয়মিত পরীক্ষা এবং উন্নত জ্বালানির অভাব রয়েছে৷
তিনি বলেন, ‘‘২০০৬ সালে যে ইউরো-৪ স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে দেয়া হয়েছিল, সেটিই বেশিরভাগ দেশ এখনও বাস্তবায়ন করতে পারেনি৷''
জ্বালানিতে অতিরিক্ত সালফারের উপস্থিতিও পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ৷ আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশে ২,৫০০থেকে ১০,০০০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) লেভেলের সালফার ব্যবহার করা হয়৷
সোফি এমবুগুয়া/এডিকে
প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো জানান নীচের ঘরে৷