1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশ বাঁচানোর মানে মানবজাতিকে বাঁচানো

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী২ ডিসেম্বর ২০১৪

লিমা থেকে প্যারিস: যে প্রচেষ্টা চলেছে, তা যে পর্যাপ্ত নয়, তা ইতিমধ্যেই আমাদের জ্ঞাত৷ এক হিসেবে এ সব অতিকায় জলবায়ু সম্মেলন যেন শরৎচন্দ্রের পল্লীসমাজ; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের অচলায়তন৷

https://p.dw.com/p/1Dxju
Symbolbild Erde Umweltschutz Rettung
ছবি: imago/AFLO

আবার বলছি: পরিবেশ কিংবা জলবায়ু সংরক্ষণ নাম ভাঁড়িয়ে মানবজাতি তার অস্তিত্ব বজায় রাখার শেষ (?) সংগ্রামে লিপ্ত৷ সলতেয় আগুন ধরানো হয়ে গেছে; এখন বোমাটা যাতে একটু দেরিতে ফাটে, সেটা দেখার প্রচেষ্টা৷ পৃথিবীর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি বাড়ার পরিবর্তে যদি শুধু দু'ডিগ্রি বাড়ে – তাহলে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ সাগরের পানিতে ডুবে গেলেও, ম্যানহ্যাটান তো ঠিকই থাকবে...

DW Bengali Arun Sankar Chowdhury
অরুণ শঙ্কর চৌধুরীছবি: DW/Matthias Müller

পল্লীসমাজ যোগ অচলায়তন৷ আবার খানিকটা মাছের বাজারও বটে৷ চুরি-ছিঁচকেমি-পকেটমারি, সরকারি খরচে বিদেশভ্রমণ, টিএ-ডিএ, অল্লস্বল্প কেনাকাটা – সবই চলেছে৷ আবার খানিকটা পরিসংখ্যান এ দিক-ও দিক থেকে গুগল এবং কপি-পেস্ট করে যা হোক একটা পেপার খাড়া করে, আবেগে গলা কাঁপিয়ে সেই পেপার-কে প্লেনামে পড়া; অন্যান্য ডেলিগেটদের হাততালি, পিঠ চাপড়ানো; দেশের কাগজওলা-দের ইন্টারভিউ; ফেসবুক আর ইউটিউবে পোস্টিং...

ধেড়ে ধেড়ে, বুড়ো বুড়ো দেশগুলো প্রকৃতি এবং (সাবেক) উপনিবেশগুলোর গলা কেটে দশ পয়সা কামিয়ে নিয়েছে – এবার তারা মৎস্যভক্ষণ ছেড়ে বৈরিগি হবে৷ ওদিকে চীন-ভারত-ব্রাজিল-দক্ষিণ আফ্রিকার মতো যে সব নালায়েক দেশ হঠাৎ লায়েক হয়ে উঠেছে, যারা নাকি পৃথিবী নামক পাড়ার হবু মাস্তান, তারাই বা চাট্টি ভোগ না করে নিয়ে হঠাৎ প্লাস্টিকের ব্যাগের বদলে আবার চটের থলি হাতে করে কী করে?

এক ব্যাচ খেয়ে গেছে৷ আরেক ব্যাচ খেতে বসেছে৷ বাইরে রবাহূত-অনাহূতদের ভিড়, অর্থাৎ কিনা বাদবাকি দেশ৷ জীবজন্তু, পশুপাখিরা যেখানে এঁটো কলাপাত ফেলা হয়, সেই আস্তাকুড় ঘেঁটে বিবর্তনের ইতিহাসে তাদের অবলুপ্তি আরো কিছুদিন ঠেকানোর চেষ্টা করছে৷ তাদের সকলের – এবং বলতে কি, আমাদের – মাতৃস্বরূপ প্রকৃতি দেবীকে জিগ্যেস করলে তিনি বলেন, ‘‘কেঁদে কী হবে? বড়গুলো না হয় লোপ পাচ্ছে৷ কিন্তু তার বদলে ধরো কতো রকমের হেমরহেজিক ফিভার – এই যেমন ইবোলা – কিংবা পাখির জ্বরের মতো মহামারির ভাইরাস তৈরি করে দিচ্ছি না? অনেক ভেবে দেখলুম: জীব বলতে জীবই, তা সে মানুষই হোক আর জীবাণুই হোক৷ তা বাছা জীবাণু পোষা তোমাদের মতো মানুষ পোষা থেকে অনেক সহজ কাজ৷ তারা নিজের মনে বংশবৃদ্ধি করে, খিদে পেলে পরস্পরকে খায় – তোমাদের মতো গোটা দুনিয়াটাকে খেয়ে শেষ করে না...''

প্রকৃতি দেবী শোনালেন তাঁর মনুষ্য নামক বুদ্ধিমান এবং লায়েক সন্তানের বোকামির আরেক কাহিনি: ‘‘সেবার হিমালয়ের কোন একটা ঢাল থেকে ধস নেমে সে এক কাণ্ড! লোকজন কান্নাকাটি করে এয়েছে আমার কাছে৷ কী করতে হবে? না, যদি পাহাড়টাকে আবার মাটি দিয়ে ঢেকে দিই; আমার কাছে ছোট একটা রিপেয়ার বৈ তো কিছু নয়... আমি বললুম: দোবো৷ ‘তা আমরা কবে আসব?' ‘কবে আসব মানে?' ‘মানে কাজটা কবে শেষ হবে৷ মানুষজনদের সেখানে বাস করতে হবে তো...' ‘তা বেশ তো৷ দশ হাজার বছর পরে এসো৷' ‘সে কি!!! এই ছোট্ট একটা মেরামতিতে দশ হাজার বছর? আমরা বাঁচিই তো মোটে সত্তর-আশি বছর...' ‘তাও কপাল থাকলে৷ তা বাছা, আমার বয়সটাও তো ভেবে দেখবে: পাঁচশো কোটি বছর পার করেছি; আরো পাঁচশো কোটি বছর বাকি৷ সে হিসেবে দশ হাজার বছর আর কি বেশি বললাম গো? তোমরাই বলো...'''

প্রকৃতি দেবী যে শেষ কাহিনিটি শোনালেন, সেটা লিমা-য় শোনালে বোধহয় মন্দ হতো না৷ সাবেক বর্মায় নাকি বাঁদর ধরার এক অভিনব পদ্ধতি ছিল: একটা চামড়ার থলিতে খানিকটা চাল পুরে সেটাকে কোনো গাছের ডালে বেঁধে রাখা হতো৷ জঙ্গলের মধ্যে বাঁদর এসে সেই থলিতে হাত ঢুকিয়ে মুঠো ভরে চাল নিতো, কিন্তু চালসুদ্ধ মুঠো আর থলির সরু গলা দিয়ে বার করতে পারত না৷ চাল ছেড়ে দিলেই মুঠো আবার সরু হয়ে যায়, বাঁদরও মুক্তি পায়৷ কিন্তু তা না করে বাঁদর সারা রাত থলির মধ্যে হাত আটকে ছটফট, ধস্তাধস্তি করে, কিন্তু পালাতে পারে না৷ ভোরবেলা শিকারিরা এসে তাকে ধরে কিংবা মারে৷

‘‘তা বাবা, তোমরা একবার মুঠোটা খুলে চালগুলো ফেলে দিলেই তো পারো...''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য