1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে পরীক্ষা কি হবেই?‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৫ জুন ২০২০

কেন্দ্রীয় শিক্ষা পর্ষদের অধীনস্থ স্কুলগুলিতে দশ, বারো ক্লাসের বাকি থাকা পরীক্ষা না-ও হতে পারে, এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ এখনও পরীক্ষা শেষ করার সিদ্ধান্তেই অনড়৷

https://p.dw.com/p/3dn80
ছবি: DW/P. Samanta

কোভিড লক ডাউনের কারণে ২৫ মার্চ থেকে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল দশ এবং বারো ক্লাসের বাকি থাকা তিন দিনের পরীক্ষা৷ টানা আড়াই মাসের লক ডাউনের পরও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি আয়ত্বে না আসায় এই শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী৷ এ কারণে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে, বাকি থাকা বিষয়গুলির পরীক্ষা হবে৷ কিন্তু সোশাল ডিস্টেন্সিংয়ের নিয়ম মেনে পরীক্ষা নেওয়া কি সম্ভব হবে আদৌ?‌ছাত্র–ছাত্রী, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জন্যে কি পরীক্ষা–কেন্দ্রগুলিতে সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করা বাস্তবিক সমস্যা তৈরি করবে না?‌
কলকাতায়, কেন্দ্রীয় শিক্ষা পর্ষদের অধীনস্থ এক নামী স্কুলের শিক্ষিকা গোপা দে বহু বছর ধরে প্রশ্নপত্র তৈরি করা, পরীক্ষা নেওয়া এবং খাতা দেখার কাজের সঙ্গে যুক্ত৷ তিনি জানাচ্ছেন, একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে তাঁর এই বিষয়ে কথা হয়েছে৷ অধিকাংশ মা-বাবা জানিয়েছেন, শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হয় হোক, কিন্তু সংক্রমণ যেখানে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, সেখানে নিজেদের ছেলে, বা মেয়েকে স্কুলে পাঠানোর ঝুঁকিও তাঁরা নিতে চাইছেন না৷ এছাড়া আরও নানা বাস্তবিক সমস্যা আছে৷ গোপা দে বলছেন, ‘‌‘কতটা ইমপ্লিমেন্ট করতে পারবে সেফটি-টা?‌ থিওরেটিকালি তো অনেক কিছু সম্ভব বলছে৷ (‌যেমন)‌ বাড়ির কাছে সেন্টার করবে৷ কিন্তু একটা পরীক্ষা দিতে গেলে, পুরো সেন্টারে কি এটা করা সম্ভব?‌‌ওরা যেরকম এক্সাইটমেন্ট নিয়ে আসে, একটা জায়গায় তো ওরা কাছাকাছি হয়েও যাবে!‌বেঞ্চিতে বসানোর পর তুমি বলতে পারো, (‌যে)‌অনেক বেশি স্পেস নিয়ে বসালাম, অনেক বেশি ঘর নিয়ে বসালাম৷ কিন্তু তার আগে যে গ্যাদারিংটা হয়, আমরা তো স্কুলে দেখেছি৷ বিশেষ করে ইয়াং জেনারেশনের মধ্যে ওই অ্যাওয়ারনেস এমনিই কম থাকে৷ ক্লাসেই একসঙ্গে মেলামেশা, আলোচনা করা, পরীক্ষার যে এক্সাইটমেন্ট, ভয়, সেগুলো ওরা করেই থাকে৷’’

প্রি-বোর্ডের মার্ক্স স্কুল থেকে কাউন্সিল চেয়ে পাঠিয়েছে: গোপা দে

পরীক্ষা দিতে আসার ক্ষেত্রেও ছাত্র-ছাত্রীরা গণ পরিবহণ ব্যবহার করলে সংক্রমণের বিপদ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন গোপা দে৷ আরেকটা ব্যাপারেও তিনি জোর দিয়েছেন৷ পরীক্ষার্থীদের মানসিক চাপ৷ এমনিতেই পরীক্ষা নিয়ে যারা উদ্বেগে থাকবে, স্বাস্থ্যরক্ষায় সতর্ক থাকা তাদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে৷ এই অবস্থায় তারা কতটা ভালভাবে পরীক্ষা দিতে পারবে, সে প্রশ্ন তাঁকে চিন্তায় রেখেছে৷ তবে পরীক্ষা নিয়ে এই ডামাডোলের মধ্যে একটাই ভাল লক্ষণ তাঁর নজরে পড়েছে৷ তিনি জানালেন, ‘‌‘‌প্রি-বোর্ডের মার্ক্স স্কুল থেকে কাউন্সিল চেয়ে পাঠিয়েছে যেটা কোনোদিন অতীতে করেনি৷ আর মহারাষ্ট্র গভর্মেন্ট অবজেকশন জানিয়েছে যে, জুলাইতে (‌পরীক্ষা)‌নিলে ওদের হবে না৷ কারণ, ওদের ওখানে যা (‌করোনা)‌পরিস্থিতি৷ দিল্লিরও তাই অবস্থা৷ (‌মুখ্যমন্ত্রী)‌ কেজরিওয়াল ২০ হাজার বেড, হোটেলকে হাসপাতাল করার কথা ভাবছে৷ কাউন্সিলের পরীক্ষা তো দিল্লিতেও হয়৷ সেখানে কি কেউ ভাবতে পারে পরীক্ষা নেওয়ার কথা?‌’’
এই কারণেই সম্ভবত করোনার মধ্যে পরীক্ষা দিতে এবং নিতে যাওয়ার দায় থেকে অব্যাহতি পাবেন আইসিএসই এবং সিবিএসই, অর্থাৎ ভারতের দুই কেন্দ্রীয় শিক্ষা পর্ষদের অধীনস্থ স্কুলগুলির শিক্ষাকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীরা৷ বস্তুত সোমবারই দিল্লির আদালতে এই মুলতবি পরীক্ষা জুলাইয়ে শেষ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় জোর সওয়াল হয়েছে যে, যেসব জায়গায় পরীক্ষা নেওয়ার পরিস্থিতি আছে সেখানে পরীক্ষা হোক, কিন্তু বাদবাকি জায়গায় প্রি–বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল এবং ইন্টারনাল মার্কিংয়ের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হোক৷

শিক্ষামন্ত্রীর কথার সঙ্গে সংসদের যে নির্দেশ, তার কোনওরকম মিল হল না: সৌরভ মুখোপাধ্যায়

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য শিক্ষা পর্ষদ এখনও সেরকম কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি, বরং যে করে হোক পরীক্ষাপর্ব শেষ করে দায়মুক্ত হওয়ার ইচ্ছেই প্রকাশ করেছে৷ করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে সরকারি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা-ও রক্ষা করার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ হাওড়ার ডোমজুড়ের এক সরকারি স্কুলের শিক্ষক সৌরভ মুখোপাধ্যায় জানালেন, ‘‌‘‌শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, প্রত্যেক পরীক্ষাকেন্দ্রে ১০০ জনের বেশি ছাত্র–ছাত্রী দেওয়া হবে না৷ এবং তার জন্যে বেশি পরিমাণে পরীক্ষাকেন্দ্র নেওয়া হবে৷ যেগুলো পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল না, সেগুলোও নেওয়া হবে, ইনভিজিলেটরদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হবে৷ তা হলে ইনভিজিলেটর এবং পরীক্ষার্থী, উভয়ের সংখ্যাই কম হবে৷ ফলে সোশাল ডিস্টেন্সিং মেইনটেইন করা যাবে, ইত্যাদি ইত্যাদি৷ শিক্ষামন্ত্রী সরাসরি বলেছিলেন৷ কিন্তু কিছুদিন আগে সংসদ থেকে আবার নতুন করে যখন একটা পিডিএফ লিস্ট দেওয়া হল পরীক্ষাকেন্দ্রের, দেখা গেল, আগের যা যা পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল, প্রায় তাই৷ পুরো সেই শিডিউলটা বজায় আছে৷.‌.‌.‌পরিক্রমাটা একই হয়ে গেল৷ যেরকমভাবে ৩০০-৪০০ ছাত্র নিয়ে একেকটা স্কুলে (‌সিট)‌পড়ছিল, সেইভাবেই তাঁরা রেখে দিলেন৷ শিক্ষামন্ত্রীর কথার সঙ্গে সংসদের যে নির্দেশ, তার কোনওরকম মিল হল না৷’’
সৌরভ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, শিক্ষকরা পরীক্ষা পরিচালনা করবেন, তাঁদের ১৫ দিন আগেই যার যার নিজের পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছে চলে যাওয়ার নির্দেশ এসেছে৷ বিশেষত যাঁরা কর্মস্থল থেকে দূরে থাকেন৷ পরীক্ষার আগে ওই ১৫ দিন সম্ভবত তাঁদের কোয়ারেন্টাইন করে রাখার পরিকল্পনা সরকারের৷ এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্গে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে৷ যদিও প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার ছেলে-মেয়েরা উপযুক্ত মাস্ক, অথবা ভালো মানের স্যানিটাইজার কোথায় পাবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷
এবং এখানেই উঠে আসছে আরো এক জরুরি প্রশ্ন৷ আপৎকালীন পরিস্থিতিতে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার৷ কেন্দ্রীয় শিক্ষা পর্ষদ বাকি দেশের জন্যে যে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিতে পারে, পশ্চিমবঙ্গেও সেই সিদ্ধান্ত নিতে বাধা কোথায়?‌কেন নিয়মরক্ষার পরীক্ষায় এতজন ছাত্র–ছাত্রী ও শিক্ষাকর্মীর শরীর, স্বাস্থ্য বিপন্ন করে তোলা হবে?‌

১ জুনের ছবিঘরটি দেখুন...