1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে ভোট হচ্ছে, নাকি প্রহসন!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২২ এপ্রিল ২০১৯

পশ্চিমবঙ্গ এখন ১৫ বছর আগের বিহার‌!‌ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এমন মন্তব্য করলেন রাজ্যে নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক৷

https://p.dw.com/p/3HDXE
Indien Dharamsala Wahlen Exil-Tibeter Tinte Finger
ছবি: Reuters/A. Abidi

২৩ এপ্রিল সারা ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও তৃতীয় দফার সংসদীয় ভোট৷ তার ৭২ ঘণ্টা আগে মালদহ জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষকে সরিয়ে দিলো নির্বাচন কমিশন৷ আইপিএস অফিসার অর্ণব ঘোষ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অতি বিশ্বস্ত বলে পরিচিত৷ সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি যখন ফাঁস হয়, তখন এই অর্ণব ঘোষই বিধাননগর কমিশনারেটের দায়িত্বে ছিলেন৷ পরে তাঁকেই সারদা তদন্তে রাজ্য পুলিশের গঠন করা বিশেষ তদন্তকারী দলের প্রধান করেন মমতা৷ তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরানো রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের ওপর নির্বাচন কমিশনের গভীর অবিশ্বাসেরই আরো এক নজির দিলো৷

পশ্চিমবঙ্গে  নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক, যিনি এর আগে বিহারে মুখ্য নির্বাচনি অফিসার ছিলেন, সেই অজয় নায়েক রবিবার সাংবাদিকদের সামনে ১০-১৫ বছর আগের বিহারের সঙ্গে আজকের পশ্চিমবঙ্গের তুলনা টেনেছেন৷ মন্তব্য করেছেন, রাজ্য প্রশাসন এবং পুলিশের ওপর আস্থা হারিয়েছে সাধারণ মানুষ৷ তাই তারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় ভোট করানোর দাবিতে এত সরব হয়েছেন৷ ঘটনাচক্রে একই দিনে সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়েছে, যেখানে লাঠি হাতে, গামছা বেঁধে মুখ ঢাকা একদল দুষ্কৃতিকে দেখা গেছে, যারা একটি পোলিং বুথের পথ আটকে দাঁড়িয়ে লোকজনকে খেদিয়ে দিতে ব্যস্ত৷ তাদের নেতৃত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে সবুজ পাঞ্জাবি পরা এক বয়স্ক লোককে, যিনি আচার-আচরণে স্থানীয় কোনো রাজনৈতিক নেতা৷ গোপনে তোলা ওই ভিডিওর কথা গোপন করে এরপর সাংবাদিকের টিভি ক্যামেরা যখন ওই নেতার মুখোমুখি হচ্ছে, তিনি খুব আশ্বস্ত করার ঢঙে জানাচ্ছেন, কোথাও কোনো গন্ডগোল নেই৷ নির্বিঘ্নে এবং শান্তিতে ভোট হচ্ছে৷ বুথের সামনে যাদের দেখা যাচ্ছে, তারা সবাই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থক, যারা সতর্ক রয়েছে যাতে ভোটে কোথাও কোনো অশান্তি না হয়৷

নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকের মন্তব্যে বিহারের অরাজকতার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের এখনকার  পরিস্থিতির তুলনা টানায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি স্বভাবতই ক্ষিপ্ত৷ রবিবার রাণাঘাটে দলের নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে মমতা অভিযোগ করেছেন, বিজেপি নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে রাজ্যে সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে চাইছে৷ মমতার মতে, নির্বাচন কমিশনের দুই অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিককে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তাঁরা এই রাজ্য সম্পর্কে কুকথা বলে আসলে রাজ্যবাসীকে অপমান করছেন৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে ভোট করিয়েও ভোটের ফল অন্য কিছু হবে না বলেও মনে করেন তিনি৷ মমতা মনে করিয়ে দেন, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হয়েছিল, তার পরেও তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে৷

তবে রাজ্য পুলিশের ওপর যে ভরসা রাখা যাচ্ছে না, পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের পরই এ নিয়ে একাধিক রিপোর্ট জমা পড়ে নির্বাচন কমিশনে৷ সেইসব রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী দফায় এই রাজ্যে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বাড়িয়ে তাদের ৯২.‌৩% বুথ পাহারার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে রবিবার জানিয়েছেন নির্বাচনি পর্যবেক্ষক নায়েক৷ ২৩ এপ্রিল তৃতীয় দফায় ভোট পাঁচটি লোকসভা কেন্দ্রে— বালুরঘাট, মালদহ উত্তর এবং দক্ষিণ, জাঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ৷ নায়েক জানিয়েছেন, এই পাঁচ কেন্দ্রের ৯২ শতাংশের বেশি‌ বুথে ৩২৪ কোম্পানি সিআরপিএফ মোতায়েন করা হয়েছে৷ চেষ্টা করা হচ্ছে পরের দফাগুলিতে ১০০% বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় ভোট করার৷

নির্বাচনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এরকম সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ নেহাতই ব্যতিক্রমী ঘটনা: সৌরভ মুখোপাধ্যায়

এর পাশাপাশি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অবাধ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতাও এক বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে৷ যেমন, একটি ঘটনার কথা সর্বশেষ পঞ্চায়েত ভোটের পর জানিয়েছিলেন লেখক ও শিক্ষক সৌরভ মুখোপাধ্যায়৷ তিনি জগৎবল্লভপুরের একটি বুথের দায়িত্বে ছিলেন, যার পাশের বুথে হামলা এবং ব্যালট ছিনতাই শুরু করেছিল শাসকদলের মদতপুষ্ট গুন্ডারা৷ তারাই যখন সৌরভের বুথে এসে একই হাঙ্গামা করার চেষ্টা করে, শাসক তৃণমূল কংগ্রেস, বিরোধী সিপিএম, সব দলের এজেন্টরা একজোটে বাধা দিয়েছিলেন৷ তাতে তাঁরাও মার খেয়েছিলেন, কিন্তু ব্যালট ছিনতাই হতে দেননি৷ বরং সমবেতভাবে বলেছিলেন, ওই বুথে তাঁরা কোনো গন্ডগোল হতে দেবেন না৷ সৌরভ জানাচ্ছেন, ‘‌‘‌বস্তুত আমি তো অনেকক্ষণ অবধি বুঝতেই পারিনি যে, কে সিপিএমের এজেন্ট, কে তৃণমূলের এজেন্ট!‌'‌'‌ তবে নির্বাচনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এরকম সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ যে নেহাতই ব্যতিক্রমী ঘটনা, সে কথা বলাই বাহুল্য৷ তবে ব্যতিক্রম হয়নি রাজ্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার৷ সৌরভ জানাচ্ছেন, বন্দুকধারী পুলিশ কনস্টেবল নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিলেন৷ পরে প্রশ্ন করাতে সেই নিরাপত্তা কর্মীর সরল জবাব ছিল, ‘‘আমি কি মরব নাকি!‌'' আরেকজন সিভিক পুলিশ গুন্ডাদের তাণ্ডব দেখে ভয়ে জ্ঞান হারান!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান