1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাচার টাকার দায়মুক্তি নিয়ে সংসদে অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা

১৩ জুন ২০২২

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ দিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেটে যে প্রস্তাব রেখেছেন, জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরাও তার সমালোচনা করলেন।

https://p.dw.com/p/4Cc3n
Bangladesch Parlament
ছবি: bdnews24.com

রোববার সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট নিয়ে সাধারণ আলোচনায় হয়৷

অর্থমন্ত্রী কামাল গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে  ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন৷

অর্থমন্ত্রী এ বাজেটের বিশাল ব্যয় মেটানোর জন্য অর্থ সংগ্রহে নতুন একটি পথ খুঁজে বের করেছেন৷ বিদেশ থাকা সম্পদের ‘দায়মুক্তির' দিয়ে তিনি তা দেশে আনার ঘোষণা দিয়েছেন৷ এর ফলে ১৫ থেকে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেশে সরকারের খাতায় বৈধ আয়ের তালিকায় যুক্ত করা যাবে, সেই অর্থ দেশেও আনা যাবে৷ ওই আয়ের উৎসও জানতে চাওয়া হবে না৷

নানা মহল থেকে এ ধরনের সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা হচ্ছে৷ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান রোববার সংসদে বিষয়টি তোলেন৷ পাচার করা টাকা কর দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিদেশে টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি৷

ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘যারা লুটপাট করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করে বিদেশে পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক৷ না হলে অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের কোনো প্রয়োজন ছিল না৷’’

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন বলেন, ‘‘বিদেশে অর্থ পাচারও বেড়েছে৷ অর্থমন্ত্রী এই করোনাকালীন সময়ে মানুষের জীবন রক্ষার যে বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন, সেখানে একদিকে মানুষকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন৷ অপরদিকে হাজার হাজার কোটি টাকা এই দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে, সেটা রোধ করতে পারেননি৷ ”

অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ সন্দেহ করছে, একটা বিশাল গোষ্ঠী অবৈধভাবে টাকা আয় করে বিদেশে পাচার করার জন্য বসে আছেন৷ এটি বাস্তবায়ন হলে তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হবে৷

‘‘যারা অবৈধভাবে টাকা লুটপাট করে সেই বৈধ করার জন্য এটি নিয়ে আসছেন৷ এটি দায়মুক্তি দিলে মানুষ উৎসাহী হবে অবৈধভাবে টাকা উপার্জনে৷’’

পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘একদিকে মানুষ সৎ পথে আয় করতে যুদ্ধ করছে; অন্যদিকে লুটপাট করে যারা টাকা বিদেশে পাঠিয়েছে, তারা সামান্য কিছু কর দিয়ে টাকা ফিরিয়ে আনবেন৷ দেখা যাবে চোররা হয়ে যাবেন শ্রেষ্ঠ করদাতা৷”

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ‘‘অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা যায় কি না৷ সমাজে এটার ইতিবাচক প্রভাব নেই৷ যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন তারা যদি সৎ হতেন তাহলে টাকা দেশেই রাখতেন৷ চোর ধর্মের কথা শোনে না, এটা মাথায় রাখা উচিত৷’’

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘‘ব্যাংক ডাকাতি করে টাকা বিদেশে নিয়ে গেলে কী হবে? ডাকাতির মামলা হবে না? দুর্নীতি করলে মামলা হবে না? যদি কারও বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকে, এ সময় তিনি যদি টাকা ফিরিয়ে আনেন; তাহলে কি মামলা চলবে না? ’’

‘‘…এমন একটি বিধান রাখা উচিত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এই সুযোগটি নেওয়া যাবে না৷ ভারতেও এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কিন্তু সফলতা আসেনি৷ ’’

শামীম হায়দার বলেন, ‘‘চলতি অর্থবছরে সরকার অনুমোদিত বাজেটের চেয়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে সংসদের আগাম অনুমতি নেওয়া হয়নি৷ সব টাকা যদি সরকারই ঋণ নিয়ে নেয়, তাহলে জনগণ কী নেবে? এ কারণেই অনেক উন্নয়ন হলেও মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়েনি৷’’

একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এক ডজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান৷

তিনি বলেন, এটি করা হলে একদিনে দুর্নীতি ৫০ শতাংশ কমে যাবে৷ আর যদি দুর্নীতি না কমে তাহলে তিনি সংসদ থেকে ইস্তফা দেবেন৷

‘‘দুর্নীতিবাজেরা সিন্ডিকেট করে ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করেছে৷ মানুষের পকেট কেটেছে৷ ক্লার্ক, ড্রাইভারের মত ছোট ছোট দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়েছে৷

‘‘কিন্তু যারা বড় পদে, হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে তাদের লোম স্পর্শ করার সাহস নেই৷’’

সরকারি দলের সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি ‘এক্সপোর্টেড'৷ রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে এটি হয়েছে৷  মানুষের চাহিদা সীমিত না করে সহায়তা বাড়াতে হবে এবং মুদ্রানীতি সহজ করতে হবে৷’’

অন্যদের মধ্যে আলোচনায় আরও অংশ নেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মহিউদ্দীন খান আলমগীর৷

এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য