1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আখানে আয়োডিন ট্যাবলেট বিতরণ

২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বেলজিয়ামের টিয়োঁজ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জার্মানির আখেন থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে৷ বাসিন্দাদের মধ্যে পারমাণবিক বিপর্যয়ের ভয় এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, কর্তৃপক্ষ বাধ্য হচ্ছে আয়োডিন ট্যাবলেট বিতরণ করতে৷

https://p.dw.com/p/2jE3l
Belgien Atomkraftwerk Tihange
ছবি: picture alliance/dpa/O. Berg

আখেনে বাস করতেই অস্বস্তি বোধ করেন অনেক জার্মান৷ কারণ শহরটির অবস্থান ঠিক বেলজিয়ান সীমান্তে এবং সেখানেই অবস্থিত বিতর্কিত টিয়োঁজ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র৷ কেন্দ্রটির কিছু অংশ ৪০ বছরেরও বেশি পুরনো৷ সবচেয়ে পুরোন অংশটি দু'বছর আগেই বন্ধ করে দেয়ার কথা ছিল৷

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরে নতুন নতুন ফাটলের সন্ধান পাওয়ার কথা জানা গিয়েছে৷ এরপর থেকে নতুন আতঙ্কে ডুবেছে আখেনবাসী৷ এতোদিন তেমন কোনো ব্যবস্থা না নিলেও এখন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে শহর কর্তৃপক্ষ৷ সম্ভাব্য পারমাণবিক বিস্ফোরণের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা হিসেবে শুক্রবার থেকে শহরবাসীকে বিনামূল্যে আয়োডিন ট্যাবলেট দেয়া হচ্ছে৷

সাধারণত, এই আয়োডিন ট্যাবলেট কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়৷ শুধুমাত্র জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে এই ট্যাবলেট জনগণের মধ্যে বিতরণ করার কথা৷ কিন্তু জরুরি অবস্থায় সবার কাছে সঠিক সময়ে ট্যাবলেট পৌঁছে দেয়া যাবে না বলে মনে করছে শহর কর্তৃপক্ষ৷ ‘‘এ কারণে আমরা আগে থেকেই মজুদ ট্যাবলেটের একটি বড় অংশ বিতরণ করে দিচ্ছি'', জানান শহরটির পরিবেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মার্কুস ক্রেমার৷

তেজস্ক্রিয় বিষাক্ততার ফলে থাইরয়েড ক্যানসারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে এই আয়োডিন ট্যাবলেট৷ তবে সাধারণত শিশু, সদ্য প্রসূতি এবং ৪৫ বছরের নীচের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই এই ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়৷ অন্যদের ক্ষেত্রে এই ট্যাবলেটের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খোদ ক্যানসারের চেয়েও মারাত্মক হতে পারে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়৷

ঝুঁকির গুরুত্ব কতটুকু?

ক্রেমার জানেন যে এই ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থায় শহরবাসী আরো ভীত হয়ে পড়তে পারেন৷ ‘‘জনগণের মধ্যে অনর্থক ভীতি তৈরির যেমন কোনো মানে হয় না, তেমনি আমরা এত বড় ঝুঁকিকে কম গুরুত্ব দিয়েও দেখতে চাই না৷'' কর্তৃপক্ষ আশা করছে অন্তত এক তৃতীয়াংশ নাগরিক বিনামূল্যে ট্যাবলেট নেয়ার সুবিধা গ্রহণ করবেন৷

তবে আখেনের বাসিন্দারা শুধু কর্তৃপক্ষের ওপর ভরসা করেই বসে নেই৷ নিজেরাও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন, দাবি জানাচ্ছেন বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার৷ শহরের বেশিরভাগ বাড়ি এবং গাড়িতে এখন দাবিসম্বলিত স্টিকার শোভা পাচ্ছে৷ সম্প্রতি আন্দোলনকারীরা টিয়োঁজ থেকে আখেন পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ মানবন্ধন করেন৷

Deutschland Verteilung von Jodtabletten in Aachen Flyer Tihange abschalten
ছবি: DW/S. Schröder

স্থানীয় ফার্মাসিস্ট গাব্রিয়েলে নয়মান জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ ট্যাবলেট বিতরণের অনেক আগে থেকেই এর চাহিদা বাড়ছিল৷ ‘‘১৮ মাস আগে যখন কেন্দ্রটি বন্ধ করে আবার খুলে দেয়া হয়েছিল, তখন আয়োডিন ট্যাবলেটের বিরাট চাহিদা তৈরি হয়েছিল৷'' শুধু তখনই আয়োডিনের ৩০০ টি প্যাকেজ বিক্রি হয়েছে বলেও জানান এই ফার্মাসিস্ট৷

কেমন হবে বিপর্যয়?

আয়োডিন ট্যাবলেটেই যে পারমাণবিক বিপর্যয়ের ক্ষতি এড়ানো যাবে না, তা অবশ্য মোটামুটি সবাই জানেন৷ আখেন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিঅ্যাক্টর বিশেষজ্ঞ হান্স ইয়োসেফ আলেলাইন বলছেন, ‘‘এটা কেবল প্রাথমিক পদক্ষেপ৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ভয়ের কোনো ভিত্তি দেখি না৷ কিন্তু যদি আপনি এই ভয় পান, তাহলে আপনাকে কিছু জিনিস সংগ্রহে রাখতে হবে৷ জনপ্রতি ২ লিটার পানি, সাধারণ খাবার, ভিটামিন ট্যাবলেট, রাবারের জুতা এবং দরজা-জানালা বায়ুরোধক করার জিনিসপত্র জোগাড় করে রাখুন৷''

ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্টের করা এক সমীক্ষার তীব্র সমালোচনাও করেন আলেলাইন৷ সমীক্ষায় বলা হয়, টিয়োঁজে পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটলে আখেন তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের হুমকিতে পড়বে৷ আবহাওয়া খারাপ থাকলে এর তীব্রতা ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল বিপর্যয়ের মাত্রায় পৌঁছে যেতে পারে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয় এই প্রতিবেদনে৷

তবে আলেলাইন বলছেন, এ নিয়ে অযথাই ভীতি সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ বিপর্যয় ঘটলেও আখেনে এর খুব বড় প্রভাব নাও পড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি৷

জান্দ্রো শ্রোয়েডার/এডিকে