1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নীল ডোরাকাটা জামার উৎস

১১ অক্টোবর ২০১৮

বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো নীল ডোরাকাটা জামা পরতে ভালোবাসতেন৷ আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির পছন্দ একই৷ ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলেই জনপ্রিয় সেই জামা ও তার নক্সা চালু হয়েছিল৷

https://p.dw.com/p/36KWx
ছবি: DW

নাবিকের পোশাক পরার জন্য ব্রিটানির সৈকতের চেয়ে আর কোনো ভালো জায়গা থাকতে পারে কি? কারণ, ব্রেটন স্ট্রাইপ শার্ট ফ্রান্সের অ্যাটলান্টিক উপকূল থেকেই এসেছিল৷ আজ গোটা বিশ্বে এই ডোরাকাটা নক্সা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ তাজা ভাব, ভালো লাগার অনুভূতি৷ সহজেই পরা যায়, পরে আরাম লাগে৷

প্রথমদিকে শুধু জেলেরাই এমন ডোরাকাটা নক্সার জামা পরতেন৷ তারপর সেটি ফ্রান্সের নৌবাহিনীর ইউনিফর্ম হয়ে ওঠে, যাতে জাহাজ ডুবে গেলেও নাবিকদের পানিতে সহজেই চিহ্নিত করা যায়৷

ফ্যাশন ডিজাইনার কোকো শানেল সমুদ্রসৈকতে ছুটি কাটানোর সময়ে এই নক্সার প্রেমে পড়ে যান৷ তিনি ব্রেটন শার্টকে ফ্যাশন পণ্য করে তুলতে সাহায্য করেন৷ আজও সেই ধারা চলে আসছে৷ শানেলের সর্বশেষ সৃষ্টিকর্মেও নাবিকদের ডোরাকাটা নক্সা বিশেষভাবে নজর কাড়ে৷

গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই খ্যাতিমান ব্যক্তিরা ব্রেটন শার্ট পরতে পছন্দ করেন৷ ফরাসি অভিনেত্রী ব্রিজিট বার্দো থেকে শুরু করে স্পেনের চিত্রকর পাবলো পিকাসো তাঁদের মধ্যে অন্যতম৷ ফ্যাশন জগতের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব জঁ পোল গোলটিয়ে ১৯৮৩ সালে নটিকাল শৈলিকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলেন৷

ফ্রঁসোয়া ত্রুফো পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘জুল অ্যান্ড জিম’-এ জন মোরো ও তাঁর অন্যতম প্রেমিকের চরিত্রের পরনে এমন পোশাক দেখা গেছে৷ মুক্তি ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কাহিনিতে বাতাসের ধাক্কায় এমন পোশাকের খোলামেলা রূপ বেশ খাপ খেয়ে গেছে৷

ব্রিটানি অঞ্চলের ক্যাঁপেয়ার শহর অ্যাটলান্টিক উপকূল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ সেখানে চারিদিকে ব্রেটন শার্ট বিক্রি হচ্ছে৷ ‘মারিনিয়্যার’ নামেই সেগুলি বেশি পরিচিত৷ যেমন, ক্যাথিড্রালের ঠিক বিপরীতে এক বুটিক দোকানে এমন জামা শোভা পাচ্ছে৷ কেউ কেউ বলেন, এমন ডোরাকাটা নক্সা পরলে মানুষকে মোটা দেখায়৷ তবে তা সত্ত্বেও ভালোই বিক্রি হচ্ছে৷ শার্টের কাপড়ও ভালো হওয়ায় মানুষ পরে বেশ আরাম পান৷ এমনকি শীতকালেও পরা যায়৷

আর্মর লুক্স কোম্পানি প্রায় ৮০ বছর ধরে এই জামা উৎপাদন করে চলেছে৷ মৌলিক মডেলটি দেখতে ঊনবিংশ শতাব্দীর ফরাসি নৌবাহিনীর ইউনিফর্মের মতো৷ প্রত্যেকটি জামায় ২১টি নেভি ব্লু ডোরাকাটা রয়েছে, যা আসলে নেপোলিয়নের ২১টি নৌ অভিযানে বিজয়ের প্রতীক৷ প্রত্যেকটি লাইন ঠিক ১০ মিলিমিটার চওড়া৷ গলার ফাঁক নৌকার মতো দেখতে৷ দর্জি হিসেবে মারি ইভন ল্যমেত্র বলেন, ‘‘জামার কাপড় আগে থেকেই কাটা থাকে, এখানে সেগুলি শুধু জোড়া দেওয়া হয়৷ তারপর সেলাই মেশিনে প্রস্তুত করা হয়৷’’

আর্মর লুক্স দিনে পাঁচ হাজার জামা প্রস্তুত করে এবং গোটা বিশ্বে রপ্তানি করে৷ কোম্পানির প্রধান জঁ-গি ল্য ফ্লশ বলেন, ‘‘আমরা ১৮৫৮ সালের আসল মডেলটি নিয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রং ও আকার বদলেছি৷ বোতাম, স্লিট ও ফিতা যোগ করেছি, জামাকে ফ্যাশনদুরস্ত করে তুলেছি৷ প্রতি বছর আমরা ২০ থেকে ৩০টি নতুন মারিনিয়ে সৃষ্টি করি৷’’

কোম্পানির নিজস্ব ডিজাইন বিভাগে নিত্য নতুন জামার মডেল সৃষ্টি করা হয়৷ রপ্তানির দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার মার্কো পেত্রুচি সবক'টি মডেল ভালো করে চেনেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই হলুদের বিন্যাস অন্যরকম৷ আমরা পিকে কাপড়ও তৈরি করি৷ এই পিকে সেলার শার্টের ডোরাকাটা নক্সা আলাদা৷ এছাড়া ফ্রান্সের জাতীয় পতাকার রং, অর্থাৎ নীল, সাদা ও লাল রয়েছে৷ রপ্তানির জন্য এটা জরুরি৷’’

ক্যাঁপেয়ার শহরে আর্মর লুক্স কোম্পানির নিজস্ব বুটিক রয়েছে৷ সেখানে শুধু জামাকাপড় নয়, অন্য অনেক পণ্যেও ডোরাকাটা ডিজাইন দেখতে পাওয়া যায়৷ যেমন, বিছানার চাদর, বালিশের ওয়াড়, ছাইদানি, ম্যাট, গলার স্কার্ফ, টুপি, ব্যাগ, ব্যাকপ্যাক ইত্যাদি৷ এমনকি রবার বুট ও অন্যান্য জুতোর উপরেও একই নক্সা! তবে এখনো শার্টই সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য৷ কোম্পানির মতে, যে যুগেই মানুষ পরুক না কেন, এই জামা ও তার ফিটিং সত্যি কালজয়ী৷ আজ পরা যায়, ৫০ বছর আগেও পরা যেত৷

ব্রিটানি ও অ্যাটলান্টিক উপকূল থেকে অনেক দূরে থাকা সত্ত্বেও প্যারিস হিল্টন থেকে শুরু করে ডিয়ানে ক্র্যুগার ও এমা স্টোনের মতো অভিনেতাও গর্বের সঙ্গে ব্রেটন স্ট্রাইপ জামা পরেছেন৷ গোটা বিশ্বে বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে ডোরাকাটা এই জামা ভবিষ্যতেও তার আকর্যণ ধরে রাখবে, এমনটা ধরে নেওয়া যায়৷

সুসানে ডাউস/এসবি