1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘প্রযুক্তির যুগে মানুষ শুধু টেলিভিশন নির্ভর না’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৮ অক্টোবর ২০২১

বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেল দেখানো বন্ধ রেখেছে কেবল অপারেটররা৷ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে নাকি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে তারা এটা করছেন?

https://p.dw.com/p/41Oxr
এস এম আনোয়ার পারভেজ
এস এম আনোয়ার পারভেজছবি: Privat

দীর্ঘদিন এই অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? সাধারণ দর্শকেরা কী টেলিভিশন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন? এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন কেবল অপারেটর এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ৷

ডয়চে ভেলে: সরকার তো আগেই আইন করেছে, এতদিনেও কেন আপনারা প্রস্তুতি নেননি?

এস এম আনোয়ার পারভেজ: প্রথমেই বিষয়টি পরিষ্কার করি, ক্লিন ফিড প্রদান কেবল অপারেটরদের কাজ না৷ কেবল অপারেটরের কাজ হলো, সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল গ্রহণ করবে এবং বিনা বাধায় গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দেবে৷ এর প্রথম দায়টা হল ব্রডকাস্টারের উপরে৷ আর দ্বিতীয় দায়টা হল, ব্রডকাস্টারদের নিয়োজিত স্থানীয় পরিবেশকদের৷ এখানে কেবল অপারেটরদের ক্লিন ফিডের ব্যাপারে দায় একেবারেই নেই৷

কেন আপনাদের দায় নেই?

যেহেতু আমরা ক্লিন ফিড পাইনি, সেই কারণে আমরা বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার থেকে বিরত রয়েছি৷

বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার না হলে দেশের কতটা লাভ হবে?

এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা তারা হয়ত বলতে পারবে৷ কিছুটা লাভ তো হবেই৷ আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি দর্শকদের টার্গেট করে যে বিজ্ঞাপন দেয় সেগুলো হয়ত দেশে ফেরত আসবে৷

এর ফলে দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে কি বিজ্ঞাপন বাড়বে? দর্শক সংখ্যাও কি বাড়বে?

এটা বলা মুশকিল৷ বর্তমান প্রযুক্তির যুগে আপনি কিন্তু শুধু টেলিভিশন নির্ভর না৷ এখন কিন্তু অনেক মাধ্যম রয়েছে৷ দর্শকরা এখন হয়ত সেই মাধ্যমে সুইচ করবে৷ আমরা দর্শক হারাবো৷ এক সময় হয়ত দেখা যাবে, এই সেক্টরটাই বসে গেছে৷

‘বিদেশি কোনো চ্যানেলে দেশীয় কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ নেই’

ইউটিউবসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন বিদেশি চ্যানেলের প্রোগ্রামগুলো ইন্টারনেট ব্যবহার করে সবাই  দেখছেন৷ আপনারা চ্যানেলগুলো বন্ধ রাখায় কী প্রভাব পড়ছে?

অবশ্যই আমাদের দর্শক কমবে৷ আমাদের যে অবকাঠামোগত ব্যয়, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন, মেন্টেনেন্সসহ সবকিছু মিলিয়ে আমরা যদি দর্শক হারায় তাহলে তো গ্রাহক কমে যাবে৷ সেই ক্ষেত্রে আমাদের টিকে থাকায় মুশকিল হয়ে যাবে৷ 

এখন তাহলে আপনারা কী ভাবছেন?

আমরা ভাবছি, এতদিনে তিলে তিলে এই সেক্টরটা আমরা তৈরি করেছি৷ দেশি চ্যানেলগুলো তো আমরাই মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি৷ বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনহীন চলুক সেটা আমরাই চাই৷ যদিও এর আগে সরকার সময় দিয়েছে৷ কিন্তু সেদিকে হয়ত ব্রডকাস্টার বা পরিবেশকেরা খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি৷ এবার যেহেতু আমরা প্রচার থেকে বিরত রয়েছি, ফলে এখন যদি যৌক্তিক একটা সময় দেওয়া হয় সবার সঙ্গে কথা বলে সেভাবে একটা শেষ চেষ্টা করা যেতে পারে৷ যদিও বিষয়টা এখন তথ্যমন্ত্রীর উপরই নির্ভর করছে৷ আইন ভঙ্গ করে আমরা ব্যবসা পরিচালনা করব না৷  

আপনারা কী ব্রডকাস্টারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন?

না, আমরা যোগাযোগ করিনি৷ কিন্তু স্থানীয় পরিবেশক যারা আছে তারা নিশ্চয় যোগাযোগ করেছে৷ ব্রডকাস্টারদের সঙ্গে আমাদের সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই৷

পরিবেশকদের সঙ্গে কী আপনারা যোগাযোগ করেছেন?

পরিবেশকদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে৷ বিভিন্নভাবে আমরা তাদের আগেও অবহিত করেছি, সরকার এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে৷ এখন দেখা যাক, চূড়ান্তভাবে পরিবেশকরাে কী পদক্ষেপ নেয়৷ এ কারণে আমরা অপেক্ষা করছি৷ 

দেশের কোনো কোম্পানির বিজ্ঞাপন বিদেশে চ্যানেলে প্রচার বন্ধ করার সুযোগ আছে?

বিদেশি কোনো চ্যানেলে দেশীয় কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রচার করার সুযোগ নেই৷ একটা সময় এটা হতো৷ আরও বছর দুয়েক আগে থেকে এটা বন্ধ হয়ে গেছে৷ দেশিয় প্রোডাক্টের কোনো বিজ্ঞাপন বিদেশি কোন চ্যানেলে এখন আর যায় না৷

আপনারা কি বিদেশি কোনো চ্যানেলের সঙ্গে এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করেছেন? তাদের কাছ থেকে কী ধরণের সাড়া পাওয়া গেছে?

এটা তো আমাদের কাজ না৷ এটা পরিবেশকদের কাজ৷ এখন পরিবেশকেরা হয়তো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে৷ কারণ বিদেশি চ্যানেলের বিপননের দায়িত্ব তো তাদের৷

বাংলাদেশে দেশি চ্যানেলের দর্শক বেশি না বিদেশি চ্যানেলের দর্শক বেশি?

দর্শকরা আসলে দেশীয় চ্যানেলও দেখতে চায়, বিদেশি চ্যানেলও দেখতে চায়৷ এখন বলা মুশকিল যে, কোনটার দর্শক বেশি৷ কারণ সব চ্যানেলই তারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে৷ একটা চ্যানেল যখন বন্ধ হয়ে যায়, আমরা যেহেতু দর্শকদের সরাসরি হ্যান্ডেল করি ফলে তারা আমাদের কাছে জানতে চায়৷ কেন তারা চ্যানেল দেখতে পারছে না৷

এই পরিস্থিতিতে আপনারা দর্শকদের কেমন অভিযোগ পাচ্ছেন?

অভিযোগ তো আসছেই৷ অভিযোগ করবে, এটাই তো বাস্তবতা৷ আমরা বুঝানোর চেষ্টা করছি, যেহেতু আইন আছে, আইন অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে৷ এই কারণে বিদেশি চ্যানেল প্রচার থেকে আমরা বিরত রয়েছি৷ ক্লিন ফিড পাওয়া গেলে আমরা অবশ্যই দর্শকদের মাঝে চ্যানেলগুলো প্রচারের চেষ্টা করব৷  

আপনারা যে ৯০টির মতো চ্যানেল দিয়ে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০টাকা চার্জ নেন, এটা কি যৌক্তিক?

২০০৭ সালে সরকার এই চার্জটা ধার্য্য করে দিয়েছে৷ কোন কোন জায়গায় আমরা ১০০ টাকাও নেই৷ এখন দ্রব্যমূল্যসহ সবকিছুর মূল্যই বেড়েছে৷ জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে৷ ফলে আমরা মনে করি, এই চার্জটা বাড়ানো উচিৎ৷ তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো৷ তবে এখন আমাদের এটা কোন দাবি না, এখন আমরা চাই বর্তমান যে সংকট, সেটা থেকে দ্রুত উত্তরণ হোক৷ এটা নিয়েই এখন আমরা কাজ করছি৷ 

কয়েকদিন তো হয়ে গেল, সর্বশেষ অগ্রগতি কী? দর্শকরা কতদিন আর বিদেশি চ্যানেল দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন? আপনারা কী সরকারের কাছে সময় চেয়েছেন?

না, এখনও আমরা সেই পর্যায়ে যায়নি৷ মাত্র পাঁচদিন হলো তো, আমাদের নিজেদের মধ্যে আলাপ, আলোচনা চলছে৷ সরকারের সঙ্গেও আলোচনা চলছে৷ সব পক্ষ মিলে যদি একটা সুন্দর সমাধানে আসা যায় তাহলে সেটাই ভালো হবে৷

বিদেশি চ্যানেল প্রচারে আপনাদের উপর কোনো চাপ আছে কি?

না, এই ধরনের কোন চাপ নেই৷

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আপনার পরামর্শ কী?

যেহেতু দর্শক দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি চ্যানেল দেখে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, তাই সরকার যদি একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটু বিবেচনা করে তাহলে হয়তো আমরা সবাই মিলে সেই চেষ্টাটা করতে পারি৷ সেক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব৷

সরকারের কাছ থেকে কি কোনো সাড়া পেয়েছেন?

না, আমরা এখনও সরকারের কাছ থেকে কোন সাড়া পাইনি৷ 

সর্বশেষ ২৪টি চ্যানেল চালুর কথা বলা হলো, আবার পরক্ষণেই ১১টি বন্ধ করা হল৷ এটা এখন কোন পর্যায়ে আছে?

এটা নিয়েই তো চেষ্টা চলছে৷ এখন দেখা যাক, আজ হয়ত ২৪টি, দু'দিন পর হয়ত আরও কিছু চ্যানেল দেওয়া যেতে পারে৷ মূল কথা হল, সরকার আমাদের যেভাবে নির্দেশনা প্রদান করবে, আমরা সেভাবেই করব৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য