1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশ: ফিরে দেখা ২০১৬

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩১ ডিসেম্বর ২০১৬

২০১৬ সাল বাংলাদেশের জন্য জঙ্গিবাদের ‘চরম উত্থানের' বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে৷ সংখ্যালঘু, ভিন্ন মতাবলম্বী এবং বিদেশি নাগরিক হত্যার ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ে ঢাকার গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে দেশের মানুষ৷

https://p.dw.com/p/2V57u
হলি আর্টিজান বেকারি ছবি: bdnews24.com

হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নতুন মাত্রা দেশবাসীকে কিছুটা আশ্বস্ত করেছে৷ তবে বছর শেষে দেশে প্রথম নারী জঙ্গির আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, সন্ত্রাসের মানচিত্রে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে জঙ্গিরা৷ আর এই জঙ্গিবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে চলমান জঙ্গিবিরোধী অভিযানকে ধারাবাহিক অভিযানে রূপ দিতে হবে৷ আর সাধারণ মানুষকে সচেতন করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তুলতে হবে৷ সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া জঙ্গিবাদ নির্মূল সম্ভব নয় বলে মনে করেন তাঁরা৷

হলি আর্টিজান হামলা:

১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলায় বিদেশি ও পুলিশসহ ২২ জন নিহত হন৷ জঙ্গিরা হলি আর্টিজানে ঢুকে জিম্মি করে এই হত্যাকাণ্ড চালায়৷ তারা হত্যায় ব্যবহার করে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র৷ অভিযানে কাজে লাগায় আধুনিক টোলিযোগাযোগ ডিভাইস৷ হত্যাকাণ্ডের পর তারা নিহতদের ছবিও অনলাইনে প্রকাশ করে৷ হত্যাকারীরা নিজেদের তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বলে দাবি করলেও বাংলাদেশ সরকার কখনোই এখানে আইএস-এর অস্তিত্ব স্বীকার করেনি৷

জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নতুন রূপ:

হলি আর্টিজানের হামলার পর বাংলাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নতুন ধারা যোগ হয়৷ এসব অভিযানে গত ৬ মাসে নব্য জেএমবি নেতা তামিম চৌধুরীসহ মোট ৩৫ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে৷ তাদের মধ্যে নারী জঙ্গিও রয়েছে৷ তারপরও নব্য জেএমবির ‘চিন্তা গুরু' মেজর জিয়া এবং নতুন প্রধান মুসা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷ তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘‘এই দুই নব্য জেএমবি নেতা পুলিশের নজরদারির মধ্যেই আছে৷ আশা করছি তারা অচিরেই গ্রেপ্তার হবে৷''

জঙ্গি দলে ধনী শিক্ষিত তরুণরা:

হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় জঙ্গিদের ভয়াবহ নৃশংসতার পাশাপাশি আরেকেটি ঘটনা প্রকাশ পায়৷ জানা যায় জঙ্গিরা তাদের নেটওয়ার্ক ধনী এবং শিক্ষিত পরিবারগুলোর মধ্যেও বিস্তৃত করেছে৷ ইংলিশ মিডিয়াম এবং সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও জঙ্গি দলে ভিড়ছে৷ তাদের কেউ কেউ আবার বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী৷ হলি আর্টিজানে হামলায় জড়িতরা সবাই উচ্চবিত্ত এবং ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করা৷ আগে একটি সাধারণ ধারণা ছিলো মাদ্রাসা ও নিম্নবিত্ত ঘরের সন্তানরাই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ কিন্তু চলতি বছরে সেই ধারণা ভেঙ্গে গেছে৷ এমনকি উচ্চবিত্তদের কেউ কেউ সপরিবারে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে৷

NOOR khan - MP3-Stereo

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘উচ্চবিত্ত বা নিম্নবিত্ত, ইংরেজি মাধ্যম বা মাদ্রাসা যেখান থেকেই তারা জঙ্গিবাদে জড়িত হোক না কেন তারা শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন৷ তারা দেশের সংস্কৃতি, মাটি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন৷ এই বিচ্ছন্নতা তাদের হতাশায় নিমজ্জিত করে৷ আর সেখান থেকেই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে তারা৷''

জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশত্যাগ:

লেখক , ব্লগার, মুক্তমনা, ভিন্ন ধর্ম ও বিদেশি নাগরিকদের হত্যা ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জঙ্গিরা আসলে একধরনের ড্রেস রিহার্সাল দিয়েছে৷ তারা ভয় ছড়িয়েছে, শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছে৷ তারা বলতে চেয়েছে তাদের মতের সঙ্গে যাদের মত মিলবে না তাদেরই হত্যা করা হবে৷ আর এই ‘মিশনে' তারা বিদেশি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ পেয়েছে৷ তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ জঙ্গিদের সহায়তা করেছে৷ বাংলাদেশ থেকে অনেক তরুণ জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ছেড়েছে৷ নব্য জেএমবির সংগঠক এবং হলি আর্টিজানে হামলার প্রধান পরিকলল্পনাকারী তামিম চৌধুরী সিরিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন৷

বিশ্লেষকের মত:

জঙ্গি বিষয়ক গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সবশেষ এই ডিসেম্বরে আমরা ঢাকার আশকোনায় আত্মঘাতী নারী জঙ্গিও দেখলাম৷ তাই জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার থাকলেও আমাদের নিশ্চিন্তে বসে থাকার সুযোগ নেই৷ আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷ তা না হলে জঙ্গিরা নতুন বছরে যদি নতুন কোনো হামলার ছক বাস্তবায়ন করে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না৷''

Abdur rashid - MP3-Stereo

জঙ্গিদের বর্তমান প্রবণতা হল পরিবার কেন্দ্রিক সংগঠন৷ সর্বশেষ আশকোনায় অভিযানে এক নারী জঙ্গি আত্মঘাতী হয়েছে৷ আর দুই নারী জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে৷ হলি আর্টিজানের হামলার পর এখন পর্যন্ত ১০ জন নারী জঙ্গি আটক হয়েছে৷ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার(মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, ‘‘এই নারীরা হয় জঙ্গিদের স্ত্রী অথবা কন্যা৷ আর এতে স্পষ্ট হয় যে জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়ে এখন পরিবারের নারী সদস্যসহ অন্য সদস্যদেরও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ফেলছে৷''

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জঙ্গিরা তাণ্ডবের পর এখন কোণঠাসা সত্য৷ কিন্তু ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা ছাড়া জঙ্গি নির্মূল সম্ভব নয়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য