ফের আলোচনায় লর্ড কার্লাইল
১২ জুলাই ২০১৮বিএনপি'র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আইনজীবী নিযুক্ত হওয়ার পর তাঁকে আইনি সহায়তা দিতে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন লর্ড কার্লাইল৷ কিন্তু এখনো তিনি ভিসা পাননি৷ কয়েকদিন আগে তিনি অভিযোগ করেন, লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাস তাঁর ভিসার আবেদন ঝুলিয়ে রেখেছে৷ এরপরই তিনি ভারতে এসে সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দেন৷ ভারতের ভিসাও পান৷ কিন্তু বুধবার রাতে তাঁকে দিল্লি বিমান বন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়৷ ভারতের স্থানীয় সময় বুধবার রাত ১০টার দিকে তিনি লন্ডন থেকে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান৷ কিন্তু ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভিসা প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে ভারতে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে লন্ডনের ফিরতি ফ্লাইটে উঠিয়ে দেয়৷
দিল্লি লা মেরিডিয়ান হোটেলে বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার সময় লর্ড কার্লাইলের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা ছিল৷ কিন্তু তাঁকে বিমান বন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়ার পর সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়৷ তবে এর আগে দিল্লিতে আসার ঘোষণা দেয়ার পর তাঁর আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়৷
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভিসায় ভারতে প্রবেশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কার্লাইল যা বলেছেন, তার সঙ্গে তাঁর এখানে আসার উদ্দেশ্যের মিল না থাকায় তাঁকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷''
বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা হয়েছে সেই মামলা লড়তে লর্ড কার্লাইলের মতো একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী বাংলাদেশে আসুক, তা সরকার চায় না৷ এ নিয়ে তারা স্বস্তিবোধ করে না৷ তারা চায় না যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার বিষয়টি উদঘাটিত হোক৷ এজন্য সরকার তাঁকে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি৷ আর ভারত সরকার যে যুক্তি দেখিয়েছে যে তাঁর ভিসার ব্যাপারে সমস্যা আছে, সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না৷ এটা ভারত সরকারের বিষয়৷'' তিনি বলেন, ‘‘তবে আমরা মনে করি, ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ৷ বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের ভারতের ওপর আস্থা আছে৷ আমরা মনে করি, এই ঘটনাটা গণতন্ত্রকামী মানুষকে হতাশ করেছে৷ আমরা প্রত্যাশা করবো, বাংলাদেশের মানুষ যে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, ভারতে তাতে সমর্থন দেবে৷''
খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো আইনজীবীদের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আইনি লড়াই করছি৷ কিন্তু বিষয়টা সেটা নয়৷ এই সরকার একটা স্বৈরাচারী সরকার৷ তাঁরা কোনো আইনের কারণে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে আটক করে রাখেনি৷ আটক করে রেখেছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে৷ তাই আইনি লড়াই তো আছেই, অবশ্যই দেশের জনগণ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে কারাগার থেকে বের করে আনবে৷''
সূত্র জানায়, কার্লাইলের ভারত সফরের বিষয়টি শুরু থেকেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় মনিটর করছিল৷ তারা নিয়মিত যোগাযোগও রাখছিল৷ তারা কার্লাইলের ভারত সফর যে ভিন্ন উদ্দেশ্যে, তা স্পষ্ট করতে সক্ষম হন৷
এদিকে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট স. ম রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের আইন এবং বার কাউন্সিল আইন অনুসারে কোনো বিদেশি আইনজীবীর বাংলাদেশে এসে কোনো বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার সুযোগ নেই৷ তিনি যদি বাংলাদেশেও আসতেন, তাহলেও কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশ নেয়ার সুযোগ পেতেন না৷''
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ মনে করে, বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির দায় থেকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি অসৎ উদ্দেশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের লবিস্ট লর্ড কার্লইলকে বাংলাদেশে আনতে চায়৷ তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে একাজ করছে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ভারত একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র৷ তারা কাকে ভিসা দেবে , কাকে দেবে না, কাকে এয়াপোর্ট থেকে ফিরিয়ে দেবে, কাকে দেবে না এটা তাদের বিষয়৷ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না৷ থাকার প্রশ্নই ওঠে না৷''
খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান৷ এখানো তিনি কারাগারেই আছেন৷ লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপি'র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যার তারেক রহমানের আগ্রহে লর্ড কার্লাইলকে আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়৷
ব্রিটেনের হাউস অব লর্ডসের ক্রসবেঞ্চের সদস্য লর্ড কার্লাইল কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের চেয়ারম্যান৷ ব্রিটিশ গোয়েন্দা সেবা প্রতিষ্ঠান এম-সিক্সটিনের সাবেক প্রধান স্যার জন স্কারলেটের সঙ্গে মিলে কৌশল ও রাজনৈতিক ঝুঁকি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান এসসি স্ট্র্যাটেজি লিমিটেড পরিচালনা করেন তিনি৷ ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের স্বাধীন পর্যবেক্ষক ছিলেন এই আইনজীবী৷
২০১৬ সাল থেকে লন্ডনে লর্ড কার্লাইল বাংলাদেশ বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করে আসছেন৷ সেমিনারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটই প্রাধান্য পায়৷ হাউস অব লর্ডসের প্রয়াত সদস্য লর্ড অ্যাভবেরি এর আগে এই সেমিনারের আয়োজন করতেন৷ ২০১৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পর লর্ড কার্লাইল এই আয়োজন করে আসছেন৷মার্চে খালেদা জিয়ার আইনজীবী নিযুক্ত হওয়ার পর লর্ড কার্লাইল ডয়চে ভেলে'র এক প্রশ্নের জবাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্ত এবং ফাঁসি কার্যকর হওয়া মীর কাশেম আলীর পক্ষে বিবৃতি দেয়ার কথা স্বীকার করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যে ট্রাইব্যুনাল মীর কাশেম আলীকে দণ্ড দিয়েছে, আমি সেই ট্রাইব্যুনালের কর্মপদ্ধতির সমালোচনা করেছিলাম৷''
এ বিষয় নিয়ে আপনার কিছু বলার আছে কি? লিখুন নীচের ঘরে৷