1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুশফিক, রিয়াদের সঙ্গে তামিমের আড্ডা

৪ মে ২০২০

না একই সঙ্গে দু'জনের সাক্ষাৎকার নেননি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল৷ তবে এসব সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে মজার কিছু বিষয়৷

https://p.dw.com/p/3bkTH
ছবি: picture-alliance/dpa/empics/J. Walton

মাশরাফিকে বরাবরই মজার মানুষ মনে হলেও তামিমকে সে তুলনায় বেশ গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্ব হিসেবেই চেনেন ক্রিকেট ভক্তরা৷ কিন্তু এবার লাইভে তামিমের ভিন্ন রূপ দেখলেন তারা৷

করোনা ভাইরাসের কারণে সব ক্রিকেটারই গৃহবন্দি৷ আর সেসময়টাকে কাজে লাগাতেই একটু খোশ গল্পের মেজাজে ছিলেন তামিম৷ তার সাথে মুশফিক আর রিয়াদের আলাপে বোঝা গেলো আমাদের দেশের ক্রিকেটাররা একে অপরের কাজের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল৷ পাশাপাশি তারার কতটা বিনয়ী৷ একই সাথে এসব আলাপে উঠে এসেছে অনেক ‘সিক্রেট' অর্থাৎ গোপন কথা যা হয়ত আগে কারো জানা ছিলো না৷

আপনি কি জানতেন ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে পরিশ্রমী মুশফিকুর রহিম? মুশফিক ভীষণ বিনয়ী তিনি তা স্বীকার করতে নারাজ৷ তার মতে তামিম, সাকিবের মত তার প্রতিভা নেই বলেই এত পরিশ্রম করতে হয়৷

এই প্রথম মনে হয় তামিম বসেছিলেন সঞ্চালকের আসনে৷ বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সম্পর্কটা যে কতটা গভীর এই আলাপ থেকেই তা উঠে আসে৷ ওয়ানডে ও টেস্ট দলের ক্যাপ্টেনের মধ্যে কথোপকথোনের শুরুটা অবশ্যই করোনা নিয়ে শুরু হয়েছিল৷ কেননা সাক্ষাৎকারের পেছনে যে মূল কারণ ওটাই, নইলে এত সময় কি থাকে ব্যস্ততম ক্রিকেটারদের হাতে৷

মুশফিকের মতে, করোনা ভাইরাসের যে প্রাদুর্ভাব এটা কর্মের ফল৷ এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত৷ মানুষ প্রচুর পাপ করেছে বলেই এত রোগ শোক ভোগ করতে হচ্ছে এবং এই রমজান মাসে দোয়া করে মাফ চাইলে খুব শিগগিরই এই সংকট কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি৷ তারা দুজনেই অবশ্য এই লক ডাউনের সময়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন, কারণ পরিবারের সঙ্গে এত সময় কাটানোর সময় তাদের কোথায়! তামিম তো মজা করে বলেই ফেললেন যাদের প্রচুর টাকা পয়সা আছে, তারাও এখন চাইলে বেড়াতে যেতে পারে না৷

তবে কথোপকথনের শুরুতেও মুশফিককে একটু ভয় পেতে দেখা যায়৷ কারণ তামিমের প্রশ্ন মানেই নাকি সেখানে ঝামেলা থাকে৷ বোঝা গেলো ড্রেসিং রুমেও এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় মুশফিককে৷

মুশফিক সারাদিন কি করে কাটাচ্ছেন এই প্রশ্ন শেষ হতেই ভিডিওতে একঝলক দেখা মেলে তামিমের ছেলের৷ এরপরের প্রশ্ন ছিলো কতটা কষ্ট করে মুশফিক জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন৷ ক্রিকেট কেনো বেছে নিলেন মুশফিক? মুশফিকের প্রিয় খেলা কিন্তু ব্যাডমিন্টন৷ লারার ভক্ত মুশফিক বিকেএসপিকে পরীক্ষা দিতে গিয়ে বেছে নিয়েছিলেন ক্রিকেটকে৷

এসব কথার মাঝখানে অনেক মজার তথ্য হাজির করেন তামিম, যেমন মুশফিক এবার প্র্যাকটিস ম্যাচে পেস বোলিং করেছিলেন৷ সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে তামিম বলেন, ‘মুশফিক কি নিজের উচ্চতার কথা ভুলে গিয়েছিলেন?

এক পর্যায়ে একে অপরকে জিজ্ঞেস করেন তাদের চুল কেটে দিয়েছে কে? জানা গেলো দু'জনের স্ত্রীই এই কাজটা নিপুনভাবে করেছেন৷

মুশফিকের মনেও ছিলো প্রশ্ন৷ আর সেটা এশিয়া কাপে শ্রীলংকার বিপক্ষে ইনজুরি নিয়ে তামিমের ব্যাটিং প্রসঙ্গ৷ কীভাবে সেটা সম্ভব করেছিলেন তামিম? তামিম জানালেন, চিকিৎসকেরা তাকে দৌড়াতেও নিষেধ করেছিলেন ফ্র্যাকচার নিয়ে অথচ দলের খারাপ অবস্থায় স্ট্রাইকে থাকতে হবে না ভেবে নেমেও ব্যাট হাতে নিয়েছিলেন৷ জানিয়েছেন, প্রচণ্ড ব্যথায় আসলে তখন কি করেছিলেন তার ঠিক জ্ঞান ছিলো না৷

এরপর দু'জনের কথাতেই উঠে আসে টেস্ট প্রসঙ্গ৷ টেস্ট অধিনায়ক হেসেবে মুশফিকের যেসব সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ অবিস্মরণীয় কিছু জয় পেয়েছে তার জন্য সাধুবাদ জানান তামিম৷

কথা হয় বিপিএল নিয়ে৷ দুজনেই একমত একটা দলের হয়ে অন্তত টানা কয়েক বছর একজনকে দলনেতার দায়িত্ব দেয়া হোক৷

বাংলাদেশের সর্বস্তরের ক্রিকেটারদের নিয়ে তাদের ভাবনার কথাও উঠে আসে এই লাইভে৷ করোনা সংকট থেকে বেরিয়ে তারা প্রথমেই ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবেন বলেও জানান৷ কেননা বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারের উপার্জন হয় শুধু এ থেকেই৷ এটা চলতে না থাকলে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে৷

যে ব্যাট দিয়ে জীবনে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন সেটা নিলামে তুলছেন মুশফিক৷ উদ্দেশ্য করোনা সংকটে ত্রাণ তহবিল গড়ে তোলা৷

এসময় দুই ক্রিকেটার রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়ার কথা নিয়ে মজায় মেতে ওঠেন৷

শেষ মুহূর্তে তামিম মুশফিককে বলেন, করোনা সংকট শেষ হলে প্রথম যে ম্যাচটা মুশফিক খেলবেন, খেলার আগে ড্রেসিং রুমের কমোডে বসলে নির্ঘাত সেঞ্চুরি করবেন৷ একথা বলার পেছনে ছিলো ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ড্রেসিং রুমের মজার গল্প৷

করোনা সংকট নিয়ে মুশফিকের ভিডিও নিয়ে মজা করতেও ছাড়েননি বাংলাদেশের ওডানডে দলের অধিনায়ক৷

৩ তারিখে মুশফিকের সঙ্গে লাইভের পর ৪ তারিখে তামিম লাইভে হাজির হয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে সাথে নিয়ে৷ টি-টোয়েন্টির এই অধিনায়কের কথা শুনে মনে হয়েছিল তিনি তামিমকে পাল্টা আক্রমণ করতে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে বসেছিলেন৷ যদিও শেষ পর্যন্ত সে সুযোগ তিনি পাননি৷

রিয়াদ সম্প্রতি দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হওয়ায় তাকে শুভেচ্ছা জানান তামিম৷ রিয়াদ তার বড় ছেলেকে পড়ালেখায় সাহায্য করছেন বলে জানালেন৷ চলছে শরীর চর্চা এবং নামাজ-রোজা৷ জানা গেলো বাংলাদেশ দলে খেলার সময় ধর্মীয় অনুশাসনগুলো মানতে দলের অনেকেই রিয়াদকে অনুসরণ করেন৷

রিয়াদ নাকি আগে এতটা ধার্মিক ছিলেন না, তাহলে এর পেছনে কারণটা কি? তা নিয়ে হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠেন দুজন৷

লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করেও রিয়াদ যে দলকে কতটা এগিয়ে রাখেন এবং এই অর্ডারে খেলে দলকে জেতানোর মত বিকল্প এইদেশে এখনও নেই বলে মনে করেন তামিম৷ রিয়াদের ধারণা সাব্বির, সাইফুদ্দিন বা মোসাদ্দেক হতে পারেন তার বিকল্প৷

অন্যদিকে, রিয়াদের প্রশ্ন ছিলো তামিমের কাছে তার সবচেয়ে প্রিয় ম্যাচ কোনটা৷ সেক্ষেত্রে তামিম কিন্তু কোন জেতা ম্যাচের কথা বলেননি৷ বলেছেন মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৫ রানের ইনিংসটির কথা৷

এরপর উঠে আসে নিদাহাস ট্রফির কথা৷ যেখানে শ্রীলংকার বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধ ম্যাচে রিয়াদ ছয় মেরে বাংলাদেশকে জিতিয়েছিল৷ তামিম বলেন, শ্রীলংকার বিপক্ষে ২০১৮ সালে টেস্ট সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ৷ সেসময় তিনি হাথুরুকে বলেছিলেন তার দেশে গিয়ে তার দলকে হারাবেন৷

তবে রিয়াদের বোলিং নিয়ে মজা করে তামিম বলেন, রিয়াদ যে ঠিক কোথায় বল করবেন তা স্বয়ং আল্লাহও বলতে পারবে না৷

এরপর নানা মজার প্রসঙ্গ টেনে আনেন তামিম৷ মুশফিকের মত রিয়াদকেও জিজ্ঞেস করেন কে কেটে দিয়েছে চুল৷ এছাড়া কয়েকটি প্রশ্ন করেন যার উত্তরের সঙ্গে একমত হননি রিয়াদ৷ তবে খেলার মাঠে সাকিবের সঙ্গে রিয়াদের বোঝাপড়াটা যে খুব একটা ভালো নয়, তা উঠে আসে তাদের আলাপচারিতায়৷ যদিও বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেননি রিয়াদ৷

আউটডোরে ক্রিকেটারদের সঙ্গে আড্ডাটা ভীষণভাবে মিস করছেন রিয়াদ৷ তার সঙ্গে একমত তামিমও৷ তামিম, মাশরাফি, মুশফিক, সাবিক, লিটন, মিরাজ সবাই করোনা দুর্গতদের জন্য যেভাবে তহবিল গঠন করছেন তাকে সাধুবাদ জানান রিয়াদ৷

গত দুইদিনে দুই অধিনায়কের সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম থেকে লাইভে ছিলেন তামিম৷ আজ রাতে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে লাইভ করার কথা৷ যদিও তামিমের ধারণা শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করে দিতে পারেন ম্যাশ৷

বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের নতুন অধিনায়ক যে এভাবে তার দলকে চাঙ্গা রাখছেন এটাকে সাধুবাদ জানাতে হয়৷ ক্রিকেটাররা দুর্দিনে মানুষের পাশে দাড়াক৷ বাংলাদেশ দল এই সংকটের মধ্যেও তাদের মনোবল ধরে রেখে আগামী খেলা খেলবে এই প্রত্যাশা৷