1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বরফের ট্র্যাকে সমতলে নামার রোমাঞ্চ

৪ এপ্রিল ২০১৯

সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতের এক প্রান্ত বিশ্বের প্রথম শীতকালীন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত৷ সেখানে বরফের প্রতি বছর শীতকালে বরফ দিয়ে অভিনব এক ট্র্যাক তৈরি করা হয়৷ সেই ববস্লেড দিয়ে নীচে নামার অভিজ্ঞতা বেশ রোমাঞ্চকর৷

https://p.dw.com/p/3GF4C
ছবি: Getty Images

প্রায় ১,৮৫০ মিটার উচ্চতায় সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতের দক্ষিণপূর্বে এংগাডিন উপত্যকায় এক অভিনব ববস্লেড রয়েছে৷ এখানেই সেন্ট মোরিৎস অবস্থিত৷ কিছু মানুষের জন্য এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বরফের ভাস্কর্য৷ অন্যরা এটিকে সর্বকালের সেরা ববস্লেড হিসেবে দেখেন৷ প্রত্যেক শীতকালে সেটি নতুন করে গড়ে তোলা হয়৷ এই ববস্লেড আসলে এক কিংবদন্তী৷ শীতকালীন ক্রীড়ার পীঠস্থান ও বিশ্বের একমাত্র প্রাকৃতিক বরফের ববস্লেড হিসেবে জায়গাটি পরিচিত৷ 

চারজন বসার যোগ্য একটি বব রাইডে অংশ নিতে সাহসের প্রয়োজন৷ পেশাদারী এক ব্যক্তি সেটি চালান৷ এ ক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব পালন করছেন সুইজারল্যান্ডের বব চ্যাম্পিয়ন মার্সেল রোনার৷ তিনি দু-দু'বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এবং অলিম্পিকে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন৷ অভিজ্ঞ এই মানুষটি জানেন, কীভাবে নিরাপদে নীচে ধেয়ে যাওয়া যায়৷ মার্সেল বলেন, ‘‘প্রথমত বিশেষ নড়াচড়ার উপায় নেই৷ কারণ চারজনে মিলে ভেতরে থাকলে আর জায়গা থাকে না৷ একমাত্র মাথা নাড়া যায়৷ অতিথি হিসেবে এমন রাইডে অংশ নিলেও বাইরে তাকানো উচিত৷ কোনো এক মুহূর্তে হয়ত মনে হবে আর পারছি না৷ তখন মাথা নীচু করতে হবে৷ তারপর মাথা উঁচু করে আবার তাকিয়ে দেখা উচিত৷ গতির অনুভূতি উপভোগ করা উচিত৷''

সেন্ট মোরিৎস অঞ্চলেই আল্পস পর্বতে শীতকালের পর্যটন আবিষ্কৃত হয়েছিল৷ শীতের মধ্যে যথেষ্ট রোদের টানে ১৮৬৪ সালে প্রথমবার ইংরেজ পর্যটকেরা শীতকালেও সেখানে আসেন৷ আজ প্রায় ৫,০০০ জনসংখ্যার ছোট এই শহর বিত্তশালীদের মিলনক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত৷

পাশের সেলেরিনা শহরে একটি মিউজিয়ামে এই ক্রীড়ার উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়৷ ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রথম পর্যটকরা অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সেখানে গিয়েছিলেন৷ নতুন ধরনের ববস্লেডের মাধ্যমে শুরুতে তাঁরা পথঘাট ও জঙ্গলের পথ দিয়ে নীচে নামতেন৷ তারপর এল নতুন বব ট্র্যাক৷ 

প্রত্যেক বছর শীতকালে একই জায়গায় সেই ট্র্যাক গড়ে তোলা হয়৷ ১৯টি বাঁকসহ প্রায় ১,৭০০ মিটার দীর্ঘ এই পথ শুরু থেকেই অবিকল এক রয়েছে৷

আল্পসে রোমাঞ্চ

১৯০৪ সালে প্রথমবার বব ট্র্যাক তৈরি করা হয়৷ এটিই বিশ্বের সবচেয়ে প্রথম এ ধরনের ট্র্যাক৷ শুধু তাই নয়, এটিই একমাত্র বব ট্র্যাক, যা শুধু তুষার ও বরফ দিয়ে তৈরি, নীচে সিমেন্টের কোনো ভিত্তি নেই৷ প্রত্যেক শীতে প্রথমবার বরফ পড়লেই ১৫ জন নির্মাণকর্মী কাজ শুরু করেন৷ মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে নতুন ট্র্যাক তৈরি হয়ে যায়৷

প্রতি বছর একই পথে ট্র্যাক তৈরি হলেও তা কখনো হুবহু একরকম হয় না৷ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কাজ করার ফলে কিছু ফারাক থেকে যায়৷ চালকদের পক্ষে সেই পার্থক্য খেয়াল রাখা বেশ কঠিন৷ প্রাক্তন বব চ্যাম্পিয়ন ফ্রঁসোয়াজ প্লোসা বলেন, ‘‘সব সময়ে আগের বছরের ছবি মনের মধ্যে গেঁথে থাকে৷ ফলে ডিসেম্বর মাসে ট্র্যাক চালু হবার পর নতুন করে সেখানে এলে নতুন করে যাত্রাপথ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা অর্জন করতে হয়, নতুন করে শিখতে হয়৷ তবে সেটা বেশ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা৷ এটাই তো বিশ্বের একমাত্র প্রাকৃতিক তুষার ট্র্যাক৷''

এই ট্র্যাক তৈরি করতে প্রতি বছর প্রায় ১৫,০০০ কিউবিক মিটার তুষার ও ৭,০০০ কিউবিক মিটার পানির প্রয়োজন হয়৷

প্রতিবেদন: গ্যনা কেটেল্স/ভেলিং/এসবি