1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষা নীতির খসড়া তৈরি

৯ অক্টোবর ২০০৯

বাংলাদেশের শিক্ষাবিদদের দাবি, স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরও বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে তাকালে উৎসাহব্যাঞ্জক কিছু চোখে পড়ে না৷ কিন্তু একটি স্বাধীন দেশের শিক্ষাচিত্র নিশ্চয়ই এর চেয়ে অনেক উজ্জ্বল হওয়ার কথা৷

https://p.dw.com/p/K1qp
নানা বৈষম্যের জন্য মাদ্রাসায় ইংরেজি অবহেলিত, বিজ্ঞান অবহেলিত (ফাইল ফটো)ছবি: moviemento

বর্তমান সরকার নতুন একটি শিক্ষা নীতি র খসড়া তৈরি করেছে৷ তিনটি ধারায় বিভক্ত বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বৈষম্যনির্ভর এবং বৈষম্য উৎপাদনকারী বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ ধরে নেয়া হয়েছে যারা মাদ্রাসায় যাবে তারা আসবে গরিব পরিবার থেকে, যারা বাংলা মাধ্যম স্কুলে যাবে তারা আসবে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আর যারা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে যাবে তারা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ নানা বৈষম্যের জন্য মাদ্রাসায় ইংরেজি অবহেলিত, বিজ্ঞান অবহেলিত, বাংলা মাধ্যম স্কুলে ইংরেজি আছে না থাকার মতো, বিজ্ঞান আছে না থাকার মতো অথচ ইংরেজি মাধ্যমে ইংরেজির যেরকম প্রাবল্য, বিজ্ঞানেরও৷

ইংরেজি মাধ্যমের সিলেবাসটি বৈশ্বিক, তারা পরীক্ষা দেয় ইংল্যান্ডের কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে এবং তদারকিতে৷ কাজেই যে বৈশ্বিক মানের শিক্ষার কথা বলা হয়, দেখা যায় বাংলাদেশে খুব ক্ষুদ্র সংখ্যক শিক্ষার্থী তা পাওয়ার সুযোগ পায়৷ হাতেগোনা কয়েকটি স্কুল ছাড়া বাকিগুলোতে পড়াশোনার মান দুর্বলই বলা যায়৷ অন্য একটি সমস্যা হচ্ছে শিক্ষা যেটুকু হচ্ছে, তার অসম্পূর্ণতা ও অপর্যাপ্ততা৷

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্রটি খুবই দীনতাক্লিষ্ট৷ শহরের কিছু স্কুল বাদ দিলে সারা দেশের প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি স্কুলগুলো রয়েছে দীনহীন অবস্থায়৷ ক্লাসরুমগুলো কোনোরকমে চালিয়ে দেয়ার মতো৷ ব্ল্যাকবোর্ড, হোয়াইট বোর্ড নেই অনেক স্কুলে৷ বেঞ্চও নেই যে ছেলেমেয়েরা বসে পড়বে৷

বাংলাদেশে কোনো শিক্ষানীতি নেই৷ কাজেই আগামীতে প্রথম প্রয়োজন একটি শিক্ষানীতির৷ আর এই প্রয়োজনকে সামনে রেখেই অধ্যাপক কবির চৌধুরীকে প্রধান করে গঠন করা হয় একটি কমিটি৷ নাম দেয়া হয় অধ্যাপক কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশন৷

জাতীয় এই শিক্ষা কমিশন ইতোমধ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯-এর চূড়ান্ত খসড়া দাখিল করেছে৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটিকে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে৷ এবং সেই সাথে একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে এর উপর মতামত জানানোর৷ ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এই প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি সম্পর্কে মতামত জানানো যাবে৷ স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে শিক্ষা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা. আলাপ আলোচনা, পর্যালোচনা-পরিকল্পনা খুব একটা কম হয়নি৷

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জন্য একটি উপযুক্ত শিক্ষানীতির প্রয়োজনীয়তা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে দেশের সর্বপ্রথম শিক্ষা কমিশন কুদরত-ই-খুদা কমিশন গঠিত হয়েছিল৷ ১৯৭৪ সনে প্রণীত কুদরত-ই-খুদা কমিশনের প্রতিবেদনের আলোকে এবং বিরাজমান বাস্তবতার নিরিখে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ এর নির্বাচনী ইশতেহারে একটি উপযুক্ত শিক্ষানীতি প্রণয়ণের অঙ্গীকার করে৷ সেই ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০০ প্রণয়ন করা হয়, যদিও পরবর্তী সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি৷ এবার দায়িত্ব গ্রহণ করার কয়েক মাসের মধ্যেই বর্তমান সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে৷

ইতিপূর্বে ছয়টি শিক্ষা কমিশন-কমিটিও গঠিত হয়েছে এবং প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে৷ তবে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০০ ছাড়া এযাবৎ বাংলাদেশে কোনো জাতীয় শিক্ষানীতি প্রবর্তিত হয়নি৷ তবে এটিও ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর বাস্তবায়ন করা হয়নি৷ প্রথমে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিটি, ২০০২ সালে, এরপর একটি নয়া জাতীয় শিক্ষা কমিশন, ২০০৩ সালে গঠন করা হয়৷ ওই কমিটি এবং কমিশনও প্রতিবেদন জমা দেয়৷

বর্তমান কমিটি পূর্বের সবগুলো প্রতিবেদন ও জাতীয় শিক্ষানীতি- ২০০০ পর্যালোচনা করে৷ নতুন এই খসড়া শিক্ষা নীতিতে কুদরত-ই খুদা কমিশন এবং পরে শামসুল হক কমিটির প্রতিবেদন এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০০ বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে৷

নতুন এই খসঢ়া শিক্ষানীতিকে ২৯টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে, প্রত্যেক অধ্যায়ে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এবং বাস্তবায়ন কৌশল উপস্থাপন করা হয়েছে৷ শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে প্রযোজ্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ এবার দেখা যাক কবে হয় এর বাস্তবায়ন এবং কি করে হয় এর বাস্তবায়ন৷

প্রতিবেদক: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক