1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বন্যা পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ

সমীর কুমার দে, ঢাকা৮ আগস্ট ২০১৬

বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে৷ গত ৩০ বছরের মধ্যে এ বছরই সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত বন্যা ১৯ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে, যাতে মারা গেছে ১৭ জন৷ এ পরিস্থিতি অব্যহত থাকলে বহু মানুষ বাড়ি-ঘর ছাড়া হবেন৷

https://p.dw.com/p/1JdY7
Bangladesch Überschwemmungen
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ-এর সোমবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এবার গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে৷ এতে এ পর্যন্ত যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের অধিকাংশই জামালপুরের৷ এছাড়া ১৯টি জেলার ১৯ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ মোট ৬৯টি রিলিফ ক্যাম্পে আছেন ৭ হাজার ৪০০ মানুষ৷ জানা গেছে, জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় এই বন্যা শুরু হয়, যার ফলে ইতিমধ্যেই পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি দেখা দিয়েছে৷

বুয়েট-এর ইনস্টিটিউট অফ ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মোজাম্মেল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণেই বন্যা হচ্ছে৷ ভারত ও চীনে এবার অন্য বছরের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে৷ সেই পানিই নামছে৷ তবে নদীতে পলি পড়ে যাওয়ার কারণেও বেড়েছে বন্যা৷ প্রতি বছরই ডেইজিংয়ের মাধ্যমে পলিমাটি সরাতে হয়৷ পলি অপসারণ না করলে সামনের বছর আরো ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে৷ বন্যার পানি তো আর আমরা ইচ্ছে করলে আটকে রাখতে পারি না৷''

ড. এম মোজাম্মেল হক

সরকারের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের এক হিসেবে দেখা গেছে, বর্তমানে ৩৪ লাখের বেশি মানুষ বন্যাকবলিত৷ উত্তরাঞ্চলের জেলা জামালপুরে ইতিহাসে সর্বোচ্চ পানি উঠেছে৷ যমুনার পানি বিপদসীমার ১২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ এর প্রভাবে জামালপুরের নীচু এলাকা এবং চরাঞ্চল তলিয়ে গেছে৷ বহু বাড়ি-ঘর, এমনকি প্রধান সড়ক ও ট্রেন লাইন তলিয়ে গেছে পানিতে৷ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে দেড় লাখেরও বেশি পরিবার৷

এর আগে, ১৯৮৮ সালে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছিল৷ তখন যমুনার পানি উঠেছিল বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার উপরে৷ অর্থাৎ এবার সেটি ১২২ সেন্টিমিটার উঠে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে৷

সরকারি পর্যায় থেকে বন্যার্ত মানুষের মধ্যে কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হলেও, বেসরকারি ত্রাণ খুব একটা যাচ্ছে না এলাকাগুলিতে৷ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, জামালপুরের একটি এলাকায় তাঁরা ত্রাণ দিতে গিয়েছিলেন৷ সেখানে গিয়ে দেখেন সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণই পাননি স্থানীয়রা৷ গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকেও বন্যার্ত মানুষের ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে৷ এরপরেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ত্রাণ বাড়ানো দরকার৷

নেপাল ও ভারতে অতিবৃষ্টি এবং বন্যার পানি ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা দিয়ে ঢুকেছে বাংলাদেশে৷ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক মাসুদ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার বন্যা হয়েছে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে৷''

তাঁর কথায়, ‘‘বন্যায় আমাদের এখানে যে পানি আসছে, তার ৯৫ শতাংশ বাংলাদেশের বাইরের পানি৷ নেপাল, ভুটান, ভারত ও চীন থেকে এই পানি আসছে৷ আসলে নেপাল এবং ভারতে বৃষ্টিপাতের কারণেই যমুনায় পানি বাড়ছে৷''

মাসুদ আহমেদ

গত রবিবার সকালে পদ্মার প্রবল স্রোতে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া এবং রাজবাড়ির দৌলদিয়া ফেরী ঘাটের সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেছে৷ সেখানকার পাঁচ পল্টুনের মধ্যে চারটিই ভেসে গেছে৷ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাটুরিয়ায় পারাপারের অপেক্ষায় ছিল ৫ শতাধিক যাত্রীবাহী যানবাহন এবং আরো কয়েক হাজার যাত্রী৷ তাঁরা নিদারুণ দুর্ভোগে পড়েছেন৷

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সোমবার দুপুরে বিআইডাব্লিউটিসি-র চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান দৌলতদিয়া ঘাটে যান৷ তিনি সাংবাদিকদের জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বিআইডাব্লিউটিসি-র সমন্বয়ে জরুরিভাবে সড়ক ও ঘাট নির্মাণে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে৷ প্রবল স্রোতের কারণে অবশ্য ঘাটে কোনো পল্টুনই বসানো যাচ্ছে না৷

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১০টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি গুরুতর৷ এগুলো হলো – কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজাবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ ও শরিয়তপুর৷ এছাড়া ১২টি নদীর ১৭টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷

আপনি বা আপনার কোনো আত্মীয় কি বন্যাকবলিত এলাকায় রয়েছেন? জানান আপনার অবস্থা, নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য