1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে সমকামীদের অবস্থা

আরাফাতুল ইসলাম/এআই২৮ মে ২০১৬

অ্যাক্টিভিস্ট রিয়ামনি চিশতি জানাচ্ছেন, তাঁর ফেলে আসা দেশের কথা, যেখানে সমকামীকে নির্মমভাবে আক্রমণের পর আবার তাঁর বিরুদ্ধেই আনা হয় উসকানির অভিযোগ৷ সেখানে সরকার সমকামিতাকে ‘অপরাধ' মনে করে, সমাজ মনে করে ‘পাপ'৷

https://p.dw.com/p/1IuiM
প্রতীকী ছবি
ছবি: picture alliance/NurPhoto/G. Ciccia

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় গত মাসে দু'জন সমকামী অ্যাক্টিভিস্টকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ তাঁদের একজন, জুলহাস মান্নান, সমকামী সম্প্রদায়ের জন্য তৈরি প্রথম ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন৷ অন্যজন, মাহবুব তনয়, ছিলেন সমকামীদের অধিকার বিষয়ক একজন অ্যাক্টিভিস্ট৷ যখন একটি উগ্রপন্থি ইসলামি গোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তখনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রকারান্তরে নিহতদেরও দায়ী করেছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, সমকামিতা বাংলাদেশে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷

রিয়ামনি চিশতি অ্যাক্টিভিজমের জন্য একাধিকবার হামলার শিকার হওয়ায় দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ২২ বছর বয়সি এই সমকামী অ্যাক্টিভিস্ট বাংলাদেশে সমকামী, উভকামী এবং হিজড়াদের (এলজিবিটি) দূরবস্থার কথা তুলে ধরেন৷

ডয়চে ভেলে: সমকামী হিসেবে বেড়ে ওঠাটা কেমন ছিল?

রিয়ামনি চিশতি: আমি যখন শিশু ছিলাম, তখন গহনা পরার জন্য কান্নাকাটি করতাম, মেকআপ নিতে চাইতাম এবং সবসময় মেয়েদের সঙ্গে খেলতে চাইতাম৷ আমি নিজেকে তাদের একজন মনে করতাম৷ আমি যখন ক্লাস ফাইভে উঠি, তখন আমার বাংলা শিক্ষক আমাকে জানান যে, আমার আচরণে মনে হয় আমি সমকামী, আর পৃথিবীতে আমার মতো আরো অনেক মানুষ আছে৷ স্যারের সঙ্গে আমার অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক ছিল৷ তিনি আমাকে সমকামিতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানিয়েছেন৷ তবে কিছু শিক্ষক এটা নিয়ে মজা করতেন৷ আর আমার সহপাঠীরা আমাকে ‘হাফ-লেডিস' এবং ‘টু-ইন-ওয়ান' বলে ব্যঙ্গ করতো৷

রিয়ামনি চিশতি
বাংলাদেশের সমকামী অ্যাক্টিভিস্ট রিয়ামনি চিশতিছবি: DW/A. Islam

আপনি সমকামী, এটা জানার পর আপনার পরিবারের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

সেটা ছিল ভয়াবহ৷ আমার বাবা একজন ইসলামি চিন্তাবিদ এবং তিনি মনে করেন, সমকামিতা ইসলাম ধর্মমতে সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ৷ তিনি আমাকে বলেছেন, আল্লাহ একটা নগর ধ্বংস করে দিয়েছিল সমকামিতার কারণে৷

আমি যে সমকামী এটা জানার পর, তিনি আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান৷ ডাক্তার আমাকে অনেক ঔষুধ খেতে দেয়৷ সেগুলো খেলে আমার জ্বর, মাথাব্যথা এমনকি রক্তবমি হতো৷ এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও আমার বাবা আমাকে এগারো মাস ধরে সেসব ওষুধ খেতে বাধ্য করেছেন৷ কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি৷ পরবর্তীতে আমাকে ‘হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি' দিতে ভারতে নিয়ে যান৷ সেটা অনেক কষ্টদায়ক ছিল৷ কিছু দিনের জন্য আমার মাথার চুল পড়ে গিয়েছিল৷ তবে থেরাপির পর আমি আমার মধ্যে মানসিক কোনো পরিবর্তন দেখতে পাইনি৷ এক পর্যায়ে আমার বাবা হাল ছেড়ে দেন এবং মা-কে নিয়ে সৌদি আরবে চলে যান৷

বাংলাদেশে এলজিবিটিদের প্রতি সামগ্রিকভাবে মানুষের মনোভাব কেমন?

আমি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের শহর কুমিল্লায় বড় হয়েছি, যেখানে এলজিবিটিদের প্রতি খুবই রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করা হয়৷ আমার কিছু বন্ধুসহ আমি সেখানে ২০০৮ সালে সমকামীদের জন্য একটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করি৷ আমরা সপ্তাহে একদিন একটা গোপন স্থানে মিলিত হতাম৷ ২০০৯ সালে আমরা কুমিল্লায় প্রথম রেইনবো ব়্যালির আয়োজন করি৷ স্থানীয় সাংসদ এবং তাঁর সমর্থকরা সেই ব়্যালিতে হামলা চালায়৷

সেই ঘটনার পর স্থানীয়রা আমাকে সমকামী অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে চিহ্নিত করে৷ সেবছর একদল উগ্র ইসলামপন্থি আমার উপর হামলা চালায় এবং আমার হাতের আঙ্গুল কেটে নেয়ার চেষ্টা করে যাতে আমি আর ধর্মের সমালোচনামূলক এবং সমকামী অধিকার বিষয়ক লেখালেখি করতে না পারি৷ এরপর ২০১০ সালে আমাকে অপহরণ করা হয়৷ সেসময় আমি ধর্ষণের শিকার হই৷ পুলিশ কয়েকদিন পর আমাকে উদ্ধার করলেও ধর্ষণের মামলা নেয়নি৷ বরং দেশত্যাগের পরামর্শ দেয়৷ অন্যদিকে, আমার কলেজ অ্যাক্টিভিজমের জন্য আমার ছাত্রত্ব বাতিল করে৷ তখন আমার নানি আমাকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়৷

সমকামিতা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার বিপরীতে কোনো প্রচারণা কি হয়েছে বাংলাদেশে?

নিহত অ্যাক্টিভিস্ট জুলহাস মান্নান সমকামিতা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, তা নিরসনে কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷ ২০১৪ সালে তিনি সমকামীদের জন্য প্রথম ম্যাগাজিন ‘‘রূপবান'' প্রতিষ্ঠা করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল সমকামিতা যে কোনো অপরাধ নয়, বরং স্বাভাবিক প্রাকৃতিক একটি চর্চা, তা মানুষকে বোঝানো৷

আমার সঙ্গে জুলহাসের যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল৷ আমরা ব্লগ এবং অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু মান্নান এবং তনয়ের মৃত্যুর পর অধিকাংশ সমকামী অ্যাক্টিভিস্ট আত্মগোপনে চলে গেছেন৷

এলজিবিটি কমিউনিটিকে রক্ষায় সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে?

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, সমকামিতার শাস্তি হচ্ছে দশ বছরের জেল এবং/অথবা অর্থদণ্ড৷ ফলে সরকার সমকামী সম্প্রদায়কে রক্ষায় কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না৷ বরং তাঁদের যৌন প্রবৃত্তির জন্য তাঁদের বিরুদ্ধেই মামলা হচ্ছে৷ বাংলাদেশ সরকার পুরোপুরি এলজিবিটি সম্প্রদায়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে৷

আপনি বাংলাদেশ থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?

সমকামিতা নিয়ে কাজ করায় গত কয়েক বছরে আমার বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা হয়েছে৷ উগ্র ইসলামপন্থিরা ছাড়াও আমার কয়েকজন বন্ধুর বাবারাও আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, কেননা, তাঁরা মনে করতেন, আমি তাদের সন্তানদের সমকামিতা শেখাচ্ছি৷ ২০১৪ সালে মালয়েশিয়া থেকে ফেরার পর আমার উপর হামলা হয় এবং তখন আমার ডান কানে প্রচণ্ড আঘাত পাই৷ উগ্রপন্থিরা আমাকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার টাঙ্গিয়ে দেয়৷ তাদের আন্দোলনের কারণে সরকার আমাকে কয়েকবার জেলে পুরতে বাধ্য হয়৷ সবকিছু মিলিয়ে এক পর্যায়ে আমি দেশত্যাগে বাধ্য হই৷

জার্মানিতে আপনার পরিকল্পনা কী? বাংলাদেশের এলজিবিটি সম্প্রদায়কে সহায়তা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে আপনি কি আশাবাদী?

সবকিছুর আগে আমি আমার লেখাপড়া শেষ করতে চাই৷ এছাড়া, আমি সমকামিতা নিয়ে একটি সিরিজ নাটক বানাতে চাই যা ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হবে৷ এর মাধ্যমে আমি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে জানাতে চাই যে, সমকামীদের মধ্যকার সম্পর্ক একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার এবং এজন্য তাদের আক্রমণ একটি মারাত্মক ভুল৷ আমি মনে করি, আমার দেশের অনেক মানুষের এটা জানার দরকার আছে৷ এলজিবিটি সম্প্রদায় সম্পর্কে তাদের মনে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে৷

বন্ধু, রিয়ামনি চিশতির সাক্ষাৎকারটি আপনার কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান